নানুর থানার জলন্দী গ্রামে যেতে হলে বঙ্গছত্র বাস স্টপেজে নামতে হবে। বহু পুরনো গ্রাম এটি। যার প্রমাণ পাওয়া যাবে গ্রামের অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য পুরনো মন্দির থেকে। যেগুলির গায়ে এখনও পোড়ামাটির টেরাকোটার ছাপ স্পষ্ট। জলন্দীর পাল পরিবারের এই পুজোর প্রধান বিশেষত্ব, দেবীর বোধন হয় মহাষষ্ঠীর ১২ দিন আগে কৃষ্ণা নবমীতে। এই দিন থেকে প্রতিদিন মন্দির চত্বরে চন্ডীপাঠ ও ঢাক বাজানো হয়। |

সুজয় ঘোষাল ও বিজয় ঘোষাল : বীরভূম জেলাতেই যে সবচেয়ে বেশি পটের দুর্গা রয়েছে, তার কয়েকটি উদাহরণ আমরা গত বছরই তুলে ধরেছিলাম। সেখানে আমরা এই জেলার সিউড়ি ও লাভপুর ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রাম পরিক্রমা করেছিলাম। আর এবছরও দুর্গোৎসবের ঠিক পূর্বে আমরা আবার বেরিয়ে পড়েছি বীরভূম জেলার গ্রাম পরিক্রমায়, পটের দুর্গার সন্ধানে। এই পর্বে আমরা চারটি গ্রামের পটের দুর্গা তুলে ধরেছি।
বাহিরীর ভট্টাচার্য পরিবার : বোলপুরের পাশ্ববর্তী বাহিরী গ্রামে ভট্টাচার্য পরিবারের পটের দুর্গা প্রায় পাঁচশো বছরের বেশি প্রাচীন। বর্তমানে এই পুজোর শরিক চারজন। যাঁরা পালা করে প্রতি বছর এই পুজো সম্পন্ন করেন। পরিবারের সদস্য গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য জানালেন, আগে মাটির প্রতিমাতেই পুজো করা হত। কিন্তু কোনও এক বছর প্রতিমার অঙ্গহানী ঘটলে পরের বছর থেকে পটেই পূজিত হয়ে আসছে দেবী দুর্গা। এখানে পুজোর শেষে পট বিসর্জন করা হয় না। প্রতিবছর একই পটে পুজো হয়ে থাকে। পট আঁকেন হাটসেরান্দি গ্রামের পটুয়ারা।
গাজিডাঙালের ঘোষ-সরকার পরিবার : আড়শো বছরের পুরনো এই পুজো। আগে এটি ছিল সরকার বাড়ির পুজো। মতিলাল সরকারের স্বপ্নাদেশে পটের পুজো শুরু হয় এই গ্রামে। বর্তমানে ৫ শরিকের পুজো এটি। বলি দেওয়ার প্রথা রয়েছে এখানে। সপ্তমীতে চাল কুমড়ো, অষ্টমীতে একটি ছাগ, নবমীতে দুটি ছাগ বলি দেওয়া হয়। এখানকার পট পরের বছর মহালয়ার দিন বিসর্জন করা হয়। নতুন পট আসে ষষ্ঠীর দিন।
জলন্দীর পাল পরিবার : নানুর থানার এই গ্রামে যেতে হলে বঙ্গছত্র বাস স্টপেজে নামতে হবে। বহু পুরনো গ্রাম এটি। যার প্রমাণ পাওয়া যাবে গ্রামের অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য পুরনো মন্দির থেকে। যেগুলির গায়ে এখনও পোড়ামাটির টেরাকোটার ছাপ স্পষ্ট। জলন্দীর পাল পরিবারের এই পুজোর প্রধান বিশেষত্ব, দেবীর বোধন হয় মহাষষ্ঠীর ১২ দিন আগে কৃষ্ণা নবমীতে। এই দিন থেকে প্রতিদিন মন্দির চত্বরে চন্ডীপাঠ ও ঢাক বাজানো হয়। বলিদান আছে। পুজোর পর এখানেও পট রেখে দেওয়া হয়। বিসর্জন দেওয়া হয় না।
গোপ্তার পাল পরিবার : বোলপুর-লাভপুর বাস রুটে বিপ্রটিকুরিতে নেমে যেতে হয় এই গোপ্তা গ্রামে। এই গ্রামের একটি মাত্র দুর্গা পুজো হয় পটে। পাল পরিবারের এই পুজোর বয়স আনুমানিক ২০০ বছর। পরিবারের প্রবীণ সদস্য গৌড় পাল থেকে জানা গেল, ষষ্ঠী থেকে পুজো শুরু হয় এখানে। পট আঁকেন পাশ্ববর্তী গ্রাম লালবাজারের পট শিল্পীরা। পুজোর শেষে এখানেও পট রেখে দেওয়া মন্দিরের সারা বছরের জন্য।