করম ডাল কাটার আগে গাছের বন্দনা করার রীতি রয়েছে। করম মূলত কাজ এবং ভাই-বোনের নিঃস্বার্থ ভালবাসার প্রতীক। এছাড়াও সমাজ জীবনে একে অপরের পরিপূরকতার গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যকে তুলে ধরে এই করম পরব। তাই করম পরব-কে শুধুমাত্র উৎসব বলা চলে না, এই উৎসবের মধ্য দিয়ে ধ্বনিত হয় আদিবাসী সমাজের সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক জীবনশৈলীর কথা। |

জনদর্পণ ডেস্ক : করোনা উদ্বেগের মধ্যেই চিরাচরিত প্রথা মেনে বীরভূম জেলার সাঁইথিয়া ব্লকের অন্তর্গত ভ্রমরকোল গ্রাম-পঞ্চায়েতের নওয়াপাড়া গ্রামে গত ১৭ সেপ্টেম্বর গ্রামবাসীর উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল এবছরের ‘করব উৎসব’। করম উৎসব বা পরব আদিবাসী সমাজের অন্যান্য সামাজিক তথা লোক-উৎসবের অন্যতম। এটি একটি কৃষি-ভিত্তিক লোক-উৎসবও বলা যেতে পারে।
সাধারনত ভাদ্র মাসের শুক্ল একাদশীতে করম উৎসবের আয়োজন করে থাকে সাঁওতাল, ওঁরাও, কোড়া, মাহালি, পাহাড়িয়া সহ ৩৮টি আদিবাসী সম্প্রদায়। আদিবাসী সমাজের শক্তি, শান্তি ও যৌবনের প্রতীক এই করম উৎসব। করম পরব বা শস্য উৎসবের সময় করম বা কদম গাছের ডালকে করম দেবতার প্রতীক হিসাবে তাঁরা পুজো করে থাকে।
এই উৎসব শুধুমাত্র শস্য উৎসবের কথা বলে না, এ হল আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন উৎসব, ভালোবাসার উৎসব। করম পরবে ভাই-এর মঙ্গল কামনায় বোনেরা উপবাস করে থাকে। সম্পূর্ণ পরিবার, গ্রাম ও সমাজের প্রতিটি মানুষ একে অপরের সাহায্য ও মানবিকভাবে পাশে থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়।
অপরদিকে নিজের সুখ, দুঃখ সমস্ত কিছুই জঙ্গল-গাছ-নদীর সঙ্গে তাঁরা ভাগ করে নেয়। আর তাই করম বা কদম ডাল-কে পুজো করে থাকে মেয়েরা। করম ডাল কাটার আগে গাছের বন্দনা করার রীতি রয়েছে। করম মূলত কাজ এবং ভাই-বোনের নিঃস্বার্থ ভালবাসার প্রতীক। এছাড়াও সমাজ জীবনে একে অপরের পরিপূরকতার গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যকে তুলে ধরে এই করম পরব। তাই করম পরব-কে শুধুমাত্র উৎসব বলা চলে না, এই উৎসবের মধ্য দিয়ে ধ্বনিত হয় আদিবাসী সমাজের সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক জীবনশৈলীর কথা।
উৎসবের এই দিনটিতে সারারাত ব্যাপী আদিবাসী ঘরনাার চির পরিচিত ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গাানের মধ্য দিয়ে নওয়াপাড়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের মেতে উঠতে দেখা গিয়েছে। করম উৎসবকে ঘিরে নওয়াপাড়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের উৎসাাহ ও উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। নওয়াপাড়া ছাড়াও এদিন পাশ্ববর্তী গ্রামগুলি থেকে আদিবাসী ও অন্য সম্প্রদায়ের মানুষেরাও অংশগ্রহণ করেছেন।