এই আগুন নিভবে কবে! এ যেন সাক্ষাৎ কোনও ‘নরকের দরজা’

Advertisement
এই আগুন নিভবে কবে! এ যেন সাক্ষাৎ কোনও ‘নরকের দরজা’
‘নরকের দরজা’, তুর্কমেনিস্থান

জনদর্পণ ডেস্ক : ‘নরক’-এ বুঝি এমনটিই ঘটে থাকে। বিভিন্ন ধর্মীয় শাস্ত্র অনুযায়ী, মৃত্যুর পর পাপীদের কষ্ট দিতে সেখানে কঠিন থেকে কঠিনতর একাধিক সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যা পাপীদের ভোগ করতেই হয়। আর এখানে এই অগ্নিকুণ্ড নাকি সেই নরকেরই দ্বার বা দরজা। অন্তত এমনটিই অনুমান করে থাকেন এখানকার স্থানীয়রা। তাঁদের রচিত মিথ ও গল্পকথায় এই অগ্নিকুণ্ডের বহু প্রমান তাঁরা রেখেছেন।

বিশ্ব ব্যাপী সাড়া জাগানো এই অগ্নিকুণ্ডের অবস্থান তুর্কমেনিস্থানের আহেল প্রদেশের দরওয়াজা শহরে। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে, এটি কোনও আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত জ্বালামুখ, অথবা ভূমি ধসে পাতাল থেকে বেরিয়ে আসা অগ্নিশিখা। তবে এটি সম্পূর্ণ কোনও প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্টি হওয়া অগ্নিকুণ্ড নয়। মানুষেরই সামান্য ভুলের ফল এই জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড।

আসলে এটি একটি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র। এই কুণ্ডটির ব্যাস প্রায় ২২৬ ফুট ও গভীরতা ৯৮ ফুট। মিথেন গ্যাসের ‘অফুরন্ত ভাণ্ডার’ এটি। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে সেই গ্যাসই অনবরত জ্বলে চলেছে এখানে। স্থানীয়রা এর ভয়াবহ বাহ্যিক রূপ দেখেই হয়তো নাম দিয়েছেন ‘নরকের দরওয়াজা’।

তবে ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৯৭১ সাল নাগাদ। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের একদল ভু-গবেষক প্রাকৃতিক গ্যাস বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে এখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা ধারণা করেছিলেন, এটি হয়তো কোনও প্রাকৃতিক তৈলক্ষেত্র হবে। তাঁদের অনুমান অনুযায়ী, এখানে তেল উত্তোলনের জন্য একটি ক্যাম্পও স্থাপন করা হয়েছিল। তবে তাঁদের অনুমান ভুল প্রামানিত হয় অল্পদিনের মধ্যেই। ওই স্থান থেকে নির্গত হতে শুরু করে প্রাকৃতিক গ্যাস।

এরপর গ্যাস অনুসন্ধানকারী দলও সেখানে উপস্থিত হয়। তাঁরা অনুসন্ধান করার সময় দুর্ঘটনাবশত মাটি ধসে গেলে সৃষ্টি হয় এই সুবিশাল গর্তের। যদিও এই দুর্ঘটনায় কেউই তেমন গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হননি। পরে আরও অনুসন্ধানের পর তাঁরা জানতে পারেন সেটি আসলে বিষাক্ত মিথেন গ্যাস। এই গ্যাস ছড়িয়ে পড়লে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে ভেবে ভূতত্ত্ববিদরা গর্তের মুখটি জ্বালিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের ধারণা ছিল, হয়তো এই স্থানে অল্প পরিমাণ মিথেন গ্যাস থাকতে পারে। তাতে সমস্ত গ্যাস পুড়ে নষ্ট হয়ে যাবে।

কিন্তু সেখানে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ যে কতটা ছিল, তা হয়তো এখন ধারণা করতে পারছেন ভূতত্ত্ববিদরা। কারণ সেই আগুন ৫০ বছর অতিক্রম করার পরেও এখনও সমানে জ্বলে চলেছে। কবে বা কখন তা নেভার সময় হবে, তা একমাত্র ‘নরকের দরজা’-ই শুধু বলতে পারবে।

Advertisement
Previous articleএযাবতকালের সবচেয়ে বড়ো ধূমকেতুর আবির্ভাব ঘটতে চলেছে সৌরজগতে
Next articleযাত্রাপালার আয়োজন করেই তৈরি হয়েছিল আমোদপুরের প্রথম প্রাথমিক স্কুল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here