চলছে ইলিশের মরশুম, তবে আসল ইলিশ কিনছেন তো?

Advertisement
আসলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইলিশের সঙ্গে অনেকটা সাদৃশ্য থাকায় সার্ডিন, চৌক্কা বা চাপিলা মাছগুলিকেও এই মরশুমে ইলিশ হিসাবে বিক্রি করে থাকেন। এদের মধ্যে সার্ডিন তো দেদার বিক্রি হয় খোলা বাজারে। মজার ব্যাপার, এই মাছগুলিও ইলিশের মতো নোনা জলের বা সমুদ্রের মাছ। যা কৃত্রিমভাবে কখনও চাষ করা যায় না। তবে সাদৃশ্য যতই থাক, ভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে বাহ্যিক অমিল অবশ্যই থাকতে হবে।
চলছে ইলিশের মরশুম, তবে আসল ইলিশ কিনছেন তো?
Hilsa fish – Image by Sayanti Roy from Pixabay

জনদর্পণ ডেস্ক : বর্ষার মরশুম চলছে। তাই ইলিশের খোঁজ পড়বে না, তা কি হয়! কর্মক্ষেত্র থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝে ছাতা মাথায় বাড়ি ফেরার সময় কর্তা যখন পথের ধারে মাছওয়ালাদের ‘ইলিশ’ ‘ইলিশ’ হাঁকডাক শুনতে পান, তখন আর চুপ করে থাকেন কি করে! কাছে গিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে পছন্দসই একটা ইলিশ হাতে নিয়ে দর-দাম মিটিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। মনে যেন রাজ্য জয়ের খুশি তাঁর। তারপর গিন্নির হাতের জাদুতে তৈরি হয় ইলিশ ভাপা, সর্ষে ইলিশ বা ইলিশ পাতুরি।

বর্ষার মরশুমে বাঙালির ঘরে ঘরে এই ছবি অতি স্বাভাবিক। জিভে জল আনা এই আদরের ইলিশ ছাড়া যেন পুরো বর্ষাকালটাই বৃথা। রুই-কাতলা তো সারা বছরই কম দামে পাওয়া যায়। কিন্তু ইলিশের দাম যেন বর্ষার মরশুম ছাড়া কিছুতেই কমতে চায় না। যদিও ভরা ইলিশের মরশুমেও তার দাম নেহাত কম নয়। কলকাতার বাজারে এই সময়ে পুরনাঙ্গ ইলিশের দাম স্থান ভেদে ও আকার অনুযায়ী ৬০০-১২০০ টাকা প্রতি কেজি।

তবে দাম যাইহোক, ইলিশ তো কিনতেই হবে। তবে বাজারে এই আদরের ইলিশ কিনতে গিয়ে ঠকছেন না তো? মানে, ইলিশ কিনতে গিয়ে, ইলিশের মতো দেখতে অন্য মাছ কিনে ফেলছেন না তো? আসলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইলিশের সঙ্গে অনেকটা সাদৃশ্য থাকায় সার্ডিন, চৌক্কা বা চাপিলা মাছগুলিকেও এই মরশুমে ইলিশ হিসাবে বিক্রি করে থাকেন। এদের মধ্যে সার্ডিন তো দেদার বিক্রি হয় খোলা বাজারে। মজার ব্যাপার, এই মাছগুলিও ইলিশের মতো নোনা জলের বা সমুদ্রের মাছ। যা কৃত্রিমভাবে কখনও চাষ করা যায় না।

চলছে ইলিশের মরশুম, তবে আসল ইলিশ কিনছেন তো?
Sardine fish – Image by Marc Pascual from pixabay

তবে সাদৃশ্য যতই থাক, ভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে বাহ্যিক অমিল অবশ্যই থাকতে হবে। এবার জেনে নেওয়া যাক, আদরের ইলিশের সঙ্গে ওই মাছগুলির তফাৎ আসলে কোথায় –

১। ইলিশের গন্ধ অন্য যে কোনও মাছের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। একটি পুরনাঙ্গ ইলিশকে যে কোনও পরিস্থিতিতে নাকের কাছে নিয়ে গেলে তার গন্ধ পাওয়া যাবে। কিন্তু সার্ডিন, চৌক্কা বা চাপিলা মাছে সেই রকম কোনও গন্ধ থাকবে না।

২। আকারে ইলিশের পিঠ ও পেট দুটি অংশই সমান বাঁকানো থাকবে। সার্ডিনের পেটের অংশ যতটা বাঁকানো থাকে, পিঠ ততটা থাকে না। মূলত এটিই ইলিশ ও সার্ডিনকে সাদৃশ্যগতভাবে আলাদা করে দেয়।

৩। ইলিশের দৈর্ঘ্য চৌক্কার তুলনায় বেশি। তবে ছোটো ইলিশ বা ‘খোকা ইলিশ’ লম্বায় চৌক্কার প্রায় সমান। তবে যে কোনও ইলিশ প্রস্থে চৌক্কার তুলনায় চওড়া।

৪। সার্ডিন, চৌক্কা বা চাপিলার চোখ ইলিশের তুলনায় অনেকটাই বড়ো হয়ে থাকে।

আপাতত ইলিশ কেনার সময় এই তফাৎগুলি ভালো করে লক্ষ্য করলেই চলবে। এই প্রসঙ্গে আরও একটি কথা বলে নেওয়া যাক। স্বাদের দিক থেকে পদ্মার ইলিশের ধারে পাশে আসে না অন্য যে কোনও অঞ্চলের ইলিশ। আসলে পদ্মার পলি মিশ্রিত ঘোলা জলে ‘ডায়াটম’ নামের এক ধরণের শৈবাল প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। পদ্মায় আগত ইলিশ সেগুলি খেয়ে পুষ্টিলাভ করে। তাই এর স্বাদ হয় অন্য যে কোনও অঞ্চলের ইলিশের থেকে আলাদা।

Advertisement
Previous articleওড়িশার লোকশিল্প রুপোর তারের কারুকার্যের কর্মশালা শান্তিনিকেতনে
Next article২০০ বছর আগেই মেঘের শ্রেণী বিন্যাস করেছিলেন এক ব্রিটিশ রসায়নবিদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here