‘ভয়েস ক্লোনিং’ সফটওয়্যারের ব্যবহারে অপরাধীদের সুযোগ বাড়ছে না তো?

Advertisement
প্রযুক্তির আরও উন্নতিসাধনে তৈরি হয়েছে ‘ভয়েস ক্লোনিং’ সফটওয়্যার। অর্থাৎ এই সফটওয়্যারে বিশ্বের যে কোনও মানুষের কণ্ঠস্বর হুবহু নকল করে দেওয়া যাবে। ওই ব্যক্তি কিছু বলুক বা না বলুক, যন্ত্রে কোনও বক্তব্য লিখে সংকেত পাঠালেই যন্ত্র সেই বক্তব্যটুকু হুবহু তার কণ্ঠস্বরে রূপ দিয়ে দেবে। যা শুনে তিনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। যদিও সফটওয়্যার শুরুর প্রথম দিকে কিছুটা ত্রুটি থাকলেও পরে প্রায় পুরোটাই নিখুঁত করা হয়েছে।
‘ভয়েস ক্লোনিং’ সফটওয়্যারের ব্যবহারে অপরাধীদের সুযোগ বাড়ছে না তো?
Image by Bernd Everding from Pixabay

অনলাইন পেপার : সময় বাঁচাতে যন্ত্রের উদ্ভব, এ আর নতুন কি। ক্রমশই সেই সব যন্ত্রের আধুনিকরণও ঘটছে। যন্ত্রের কাজ এখন এতটাই নিখুঁত ও সুশ্রী হচ্ছে, মাঝে মধ্যেই তার কর্মকাণ্ড দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। এভাবে দীর্ঘদিন ধরেই ‘ভয়েস রাইটিং’, ‘ট্রান্সলেটর’ সফটওয়্যারগুলি তাদের বুদ্ধিমত্তা দেখিয়ে চলেছে।

লিখতে না জানলেও বা লেখার ঝামেলা থেকে রক্ষা পেতে ‘ভয়েস রাইটিং’ সফটওয়্যার-এর কোনও বিকল্প নেই। সঠিক উচ্চারণে একবার ঠিকঠাক বলতে পারলেই মোবাইল বা কম্পিউটারের পর্দায় হুবহু তার কপি লিখিত আকারে ভেসে ওঠে। এসব যে কোনও ভাষাতেই হতে পারে। আবার নিজের মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনও ভাষা না জানলেও নিজের কথাগুলি বিশ্বের যে কোনও ভাষায় পরিবর্তন করে নেওয়া যাবে ‘ট্রান্সলেটর’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে (অবশ্যই সেই ভাষার প্রতিলিপি থাকতে হবে ‘ট্রান্সলেটর’-এ)।

তবে এবার প্রযুক্তির আরও উন্নতিসাধনে তৈরি হয়েছে ‘ভয়েস ক্লোনিং’ সফটওয়্যার। অর্থাৎ এই সফটওয়্যারে বিশ্বের যে কোনও মানুষের কণ্ঠস্বর হুবহু নকল করে দেওয়া যাবে। ওই ব্যক্তি কিছু বলুক বা না বলুক, যন্ত্রে কোনও বক্তব্য লিখে সংকেত পাঠালেই যন্ত্র সেই বক্তব্যটুকু হুবহু তার কণ্ঠস্বরে রূপ দিয়ে দেবে। যা শুনে তিনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। যদিও সফটওয়্যার শুরুর প্রথম দিকে কিছুটা ত্রুটি থাকলেও পরে প্রায় পুরোটাই নিখুঁত করা হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন এর সুফল আশা করা হচ্ছে, অপরদিকে আবার এটি অপরাধ জগতে ছড়িয়ে পরারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কেমন করে করা হয় ‘ভয়েস ক্লোনিং’? সম্প্রতি প্রকাশিত বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘ভয়েস ক্লোনিং’-এর জন্য প্রথমেই যার কণ্ঠস্বর নকল করা হবে তার কণ্ঠস্বর কয়েক মিনিট রেকর্ড করা হবে ওই যন্ত্রে। যন্ত্র ওই রেকর্ডটুকু থেকেই বুঝে যাবে ওই ব্যক্তির কথা বলার ধরণ, বাচন ভঙ্গি, কণ্ঠের শব্দ, তার শব্দের উঁচু-নিচু খাঁদ এরকম সমস্ত কিছুই। তারপর যে কোনও বক্তব্য যন্ত্রে লিখে পাঠালেই হুবহু ওই ব্যক্তির কণ্ঠস্বরেই তা নকল করে ফেলবে। এমনকি একই ভয়েস-এ ওই ব্যক্তির রাগ, দুঃখ, আনন্দ, প্রেম সব কিছু প্রকাশ করা যাবে। যন্ত্রের কারসাজিতে পুরুষ কণ্ঠ নারীতে এবং নারী কণ্ঠ পুরুষে নিখুঁতভাবে বদলেও দেওয়া যাবে।

এই বিশ্বের প্রতিটি মানুষেরই আলাদা আলাদা কথা বলার ভঙ্গি থাকে। ফোনালাপের সময় পরিচিত মানুষকে না দেখেও তার কণ্ঠস্বর শুনে তাকে সহজেই চিনে নেওয়া যায়। ‘ভয়েস ক্লোনিং’ সফটওয়্যারে তৈরি হওয়া কণ্ঠস্বর এক্ষেত্রে অভিন্ন-ই হবে বলে ধারণা করছেন ‘ভয়েস ক্লোনিং’ বিশেষজ্ঞরা।

তবে এক্ষেত্রে যেমন রয়েছে কিছু সুবিধা, তেমনি কিছু অসুবিধাও থেকে যাচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন প্রফেশনাল ‘ভয়েস ক্লোনিং’ শিল্পীরা। তাঁরা একই সঙ্গে প্রায় ১৫টি ভাষায় নিজের কণ্ঠ দিতে পারবেন। সময় বাঁচিয়ে নিজের কণ্ঠ না দিয়ে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে হুবহু নিজের কণ্ঠস্বর বিক্রি করতে পারবেন।

তবে এই প্রযুক্তি অপরাধ জগতে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়লে, এর খারাপ দিকটি নিয়েও আশঙ্কা থেকে যাবে। এমনিতেই বিনা যন্ত্রে অনেকেই দীর্ঘ অভ্যাসে ‘ভয়েস ক্লোনিং’ করতে পারেন। অপরাধীরা ‘ভয়েস ক্লোনিং’-এর ফাঁদে ফেলে সাধারণ মানুষকে অপদস্থও করে থাকেন। ‘ভয়েস ক্লোনিং’ সফটওয়্যার ব্যবহারে এই অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।

যদিও এব্যাপারেও প্রযুক্তি চুপচাপ বসে নেই। নকল কণ্ঠস্বর রোখার প্রযুক্তিও তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই। যা ব্যবহার করে যে কোনও কণ্ঠস্বর আসল না নকল তা মুহূর্তের মধ্যেই বুঝে নেবে ওই প্রযুক্তি।

Advertisement
Previous articleজলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে দেহের আকার পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে, দাবি বিজ্ঞানীদের
Next articleভারতীয় উপমহাদেশ থেকে শকুন বিলুপ্তির কারণ ছিল ‘ডাইক্লোফেনাক’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here