অস্বাভাবিকতা শুরু হল মাস কয়েক পর। ওই দম্পতি প্রথম লক্ষ্য করেন, তাঁদের বাচ্চার হাতের বুড়ো আঙুল শক্ত হয়ে গিয়েছে। পায়ের আঙুলগুলিও বেশ বড়ো হয়ে গিয়েছে। কিছুদিন পরও যখন এই অস্বাভাবিকতার পরিবর্তন হল না, তখন তাঁরা ডাক্তারের স্মরণে আসেন। কিন্তু প্রথম দিকে কোনও চিকিৎসকই লেক্সির সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারছিলেন না। তবে এটুকু বুঝতে পারছিলেন, লেক্সি ক্রমশই অস্বাভাবিক হয়ে পড়ছে। সে হাঁটাচলা করতে পারবে না। সেই সঙ্গে বধিরও হয়ে যেতে পারে। |

অনলাইন পেপার : এই ঘটনা যেন অনেকটা ‘আরব্য রজনী’-র কল্পকাহিনীর মতো মনে হবে। যেখানে দুষ্টু যাদুকর মন্ত্রবলে একে একে সবাইকে করে দিচ্ছেন পাথর। সুস্থ-সবল দেহটা, সেখানে পায়ের পাতা থেকে ধীরে ধীরে মাথা পর্যন্ত পরিণত হচ্ছে শক্ত পাথরে। তখন তাঁর আর করার কিছুই থাকছে না। না পারছে হাঁটাচলা করতে, না পারছে খাবার খেতে। পরে অবশ্য গল্পের নায়কের অসামান্য বুদ্ধির কারসাজিতে পিছু হটছে যাদুকর। আর সেই সঙ্গে সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারছে ওই সমস্ত পাথর রূপী মানুষেরা।
কিন্তু এই ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে যা কিছু ঘটছে, তার পুরোটায় বাস্তব। কোনও যাদুকর এখানে মন্ত্রবলে তাঁকে পাথরে পরিণত করছে না। তবুও ধীরে ধীরে শিশুটি পরিণত হচ্ছে পাথরের মতো শক্ত শরীরে। ক্রমশ অসাড় হয়ে যাচ্ছে তাঁর অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলি। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শিশুটি বিরল একটি রোগে আক্রান্ত। রোগটিকে বলা হচ্ছে ‘ফাইব্রোডিসপ্লেসিয়া ওসিফিকানস প্রগ্রেসিভা’। এই রোগে আক্রান্তের শরীর ধীরে ধীরে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়।
ডেইলি মিরর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে লেক্সি রবিনস নামের ওই শিশুটির জন্ম হয়েছিল ২০২১ অর্থাৎ চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি। জন্মের সময় সে আর পাঁচটা সাধারণত শিশুর মতোই ছিল সুস্থ ও সবল। বিশ্ব জুড়ে যখন করোনার মতো মহামারির হাহাকারে ভুগছে গোটা পৃথিবী। চারিদিকে এগিয়ে চলেছে একটার পর একটা মৃত্যুর মিছিল। ঠিক এই সময়ে বাবা অ্যালেক্স রবিনস ও মা ডেভ রবিনস-এর ঘরে হাসি ফুটিয়ে জন্ম নেয় সে। তখনও পর্যন্ত সব কিছু প্রায় ঠিকঠাকই ছিল।
কিন্তু অস্বাভাবিকতা শুরু হল মাস কয়েক পর। ওই দম্পতি প্রথম লক্ষ্য করেন, তাঁদের বাচ্চার হাতের বুড়ো আঙুল শক্ত হয়ে গিয়েছে। পায়ের আঙুলগুলিও বেশ বড়ো হয়ে গিয়েছে। কিছুদিন পরও যখন এই অস্বাভাবিকতার পরিবর্তন হল না, তখন তাঁরা ডাক্তারের স্মরণে আসেন। কিন্তু প্রথম দিকে কোনও চিকিৎসকই লেক্সির সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারছিলেন না। তবে এটুকু বুঝতে পারছিলেন, লেক্সি ক্রমশই অস্বাভাবিক হয়ে পড়ছে। সে হাঁটাচলা করতে পারবে না। সেই সঙ্গে বধিরও হয়ে যেতে পারে।
রবিনস দম্পতি তখন অন্য কোনও উপায় না দেখে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চাইলেন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের থেকে জানতে পারেন, লেক্সি এক ধরণের বিরল ‘ফাইব্রোডিসপ্লেসিয়া ওসিফিকানস প্রগ্রেসিভা’ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগে আক্রান্তদের শরীরে অতিরিক্ত হাড় গজাতে দেখা যায়। অর্থাৎ শরীরে কঙ্কালের বাইরেও হাড় গজাতে পারে। পেশিগুলিও শক্ত হাড়ে পরিণত হয়ে পরে। ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ শরীর পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়।
লেক্সির এই ঘটনা যেন আরব্য রজনীর কল্পকাহিনীকেও হার মানিয়ে দেবে। কারণ ওই কল্পকাহিনীতে দুষ্টু যাদুকরের হাত থেকে অসহায় মানুষগুলিকে রক্ষা করতে নায়কের আবির্ভাব হয়েছিল। কিন্তু এখানে এই বিরল রোগ থেকে রক্ষা করতে আপাতত তেমন কোনও উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই রোগে আক্রান্ত হলে ২০ বছরের মধ্যেই শরীর সম্পূর্ণ শক্ত হয়ে যায়। এই অবস্থায় খুব বেশি হলে আর ২০ বছর সে বেঁচে থাকতে পারবে।