তবে ২৩ বছর পূর্বে এই রোগের প্রভাব ছিল অনেকটাই কম। তখন মাসে ৫ দিন থেকে ১ সপ্তাহ পর্যন্ত টানা ঘুমাতে হত তাঁকে। চিকিৎসাতেও তেমন কোনও সাড়া পাচ্ছেন না তিনি। ধীরে ধীরে রোগের প্রভাব বাড়তেই থাকে। বর্তমানে তাঁকে মাসে ২০ থেকে ২৫ দিন ঘুমাতে হয়। ফলে ইচ্ছা থাকলেও কোনওভাবেই তিনি আর পাঁচ জনের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন না। |

অনলাইন পেপার : রামায়ণের কুম্ভকর্ণের সঙ্গে তো সবাই-ই প্রায় কমবেশি পরিচিত। বৃহদাকার দানব আকৃতির এই চরিত্রটি সম্পর্কে হয় রাবণের মেজভাই। চরিত্রটির সর্বাপেক্ষা পরিচিতির কারণ এর দীর্ঘ নিদ্রা। ভগবান ব্রহ্মাকে তপস্যায় তুষ্ট করে কুম্ভকর্ণ যে ‘বর’ পান তা অনেকটা ছিল শাপরূপী আশীর্বাদের মতো। ব্রহ্মার কাছে ‘বর’ চাওয়ার সময়ে জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে যাওয়ায় ‘ইন্দ্রাসন’-এর বদলে উচ্চারণ করে বসে ‘নিদ্রাসন’। ব্রহ্মা তৎক্ষণাৎ সেই ‘বর’-ই প্রদান করে তাকে। যদিও পরে রাবণের অনুরোধে ব্রহ্মার কৃপায় ‘বর’-এর প্রভাবে কিছুটা পরিবর্তন এনে চিরনিদ্রার বদলে টানা দীর্ঘ ৬ মাস তাকে নিদ্রা ভোগ করতে হয়।
তবে বাস্তবে এমন মানুষ পাওয়া খুবই মুশকিল, যিনি দীর্ঘ ৬ মাস টানা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেবেন। আবার ‘মুশকিল’ বললেও যে সব কিছুই মুশকিল হতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতাও নেই। না হলে তেমনি একজন ‘ঘুমকাতুরে’ মানুষের সন্ধান পাওয়া যেত না যিনি ৬ মাস নয়, ঘুমিয়ে কাটান প্রায় ১০ মাস বা ৩০০ দিন। যদিও তিনি লঙ্কা বা বর্তমানের শ্রীলঙ্কার কেউ নন, তিনি ভারতের রাজস্থানের নাগৌড় জেলার ভাদোয়া গ্রামের বাসিন্দা। ‘ঘুমকাতুরে’ ৪২ বছর বয়সী ওই ভদ্রলোকের নাম পুখারাম।
যদিও এখানে পুখারাম তাঁর এই দীর্ঘ নিদ্রার জন্য কোনও ‘বর’ পাননি। এক বিরল স্নায়ু রোগে আক্রান্ত তিনি। ২৩ বছর পূর্বে প্রথম জানতে পারেন তিনি এই বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান জানাচ্ছে, তাঁর এই রোগের নাম ‘অ্যাক্সিস হাইপারসোমনিয়া’। এই অসুখের মূল কারণ মস্তিষ্কের টিএনএফ-আলফা প্রোটিনের তারতম্য। ফলে পুখারামকে দীর্ঘ নিদ্রায় যেতে বাধ্য হতে হয়।
তবে ২৩ বছর পূর্বে এই রোগের প্রভাব ছিল অনেকটাই কম। তখন মাসে ৫ দিন থেকে ১ সপ্তাহ পর্যন্ত টানা ঘুমাতে হত তাঁকে। চিকিৎসাতেও তেমন কোনও সাড়া পাচ্ছেন না তিনি। ধীরে ধীরে রোগের প্রভাব বাড়তেই থাকে। বর্তমানে তাঁকে মাসে ২০ থেকে ২৫ দিন ঘুমাতে হয়। ফলে ইচ্ছা থাকলেও কোনওভাবেই তিনি আর পাঁচ জনের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন না।
অর্থ উপার্জনের জন্য একটা মুদিখানা দোকানও রয়েছে তাঁর। কিন্তু দীর্ঘ ঘুমের কারণে মাসে ৪ থেকে ৫ দিন মাত্র দোকান খুলতে পারেন তিনি। তাঁর এই অস্বাভাবিকতার জন্য স্নান করা, খাওয়া সহ অন্যান্য প্রাত্যহিক কাজগুলি করতে পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিতে হয়।