প্রায় ৫০ লক্ষ ওলবাকিয়ায় আক্রান্ত মশার ডিম ব্যবহার করা হয়েছিল ওই গবেষণায়। ওই ডিমগুলি ২ সপ্তাহ অন্তর ইয়োগিয়াকার্তা শহরের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে জলের পাত্রে মশার বংশবৃদ্ধি করা হয়েছিল। এইভাবে প্রায় ৯ মাস ধরে মশার বংশবৃদ্ধি করা হয়। পরে শহরের ২৪টি জোনে উৎপন্ন মশার অর্ধেক ছেড়ে দেওয়া হয়। এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওই সমস্ত অঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে গিয়েছে প্রায় ৭৭ শতাংশ। |

অনলাইন পেপার : বর্ষা প্রায় দ্বারপ্রান্তে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই বঙ্গে প্রবেশ করবে বর্ষাকাল। ইতিমধ্যে মৌসুমি বায়ুর আগমনে জেলায় জেলায় শুরুও হয়ে গিয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে প্রাক্ বর্ষা। কোথাও আবার কিছু মুহূর্তের জন্য বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝোড়ো হাওয়াও বয়ে চলেছে। গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে রক্ষার এটাই এখন একমাত্র উপায়।
তবে বর্ষা আগমনের সঙ্গে মশা বাহিত একাধিক রোগেরও আগমন ঘটে প্রায় সাথে সাথেই। এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বর্ষার জল জমা জলাধারগুলি যেন রোগ বাহিত মশা উৎপাদনের এক একটি ছোটো ছোটো কারখানায় পরিণত হয় তখন। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব।
তবে ইদানিং সময়ে ডেঙ্গুর উৎপাত যেন অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের একটি রিপোর্ট বলছে, ৫০ বছর পূর্বে বা ১৯৭০ সালের দিকে খুব বেশি মানুষ এই রোগ সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল না। সেসময় মাত্র ৯টি দেশেই ছড়িয়েছিল ডেঙ্গু। তবে বর্তমানে সারা বিশ্ব জুড়ে প্রতি বছরই প্রায় ৪০ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। যা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ বলা যায়।
মশা এমনই একটি প্রাণী, এখনও পর্যন্ত যার কোনও উপকারিতা জানা নেই। আর এই ছোট্ট প্রাণীটিকে বিশ্ব থেকে পুরোপুরি হটিয়ে দেওয়াও সম্ভব নয়। কয়েক দশক আগে ব্রাজিল একবার চেষ্টা চালিয়েছিল তাদের দেশ থেকে মশা নির্মূল করার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। তাই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, মশা নয়, বরং মশা বাহিত রোগ দমন বা নির্মূল করার।
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার ইয়োগিয়াকার্তা শহরে চলা একটি গবেষণায় ডেঙ্গু দমনে সাফল্যের কথা দাবি করেছেন একদল বিজ্ঞানী। তাঁরা এমন একটি ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন, যা ব্যবহার করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ব্যাকটেরিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওলবাকিয়া’।
ডেঙ্গু সাধারণত এডিশ ইজিপ্ট মশা থেকে ছড়ায়। বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের ওই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, ওলবাকিয়া মশার শরীরে প্রবেশ করলেও মশার কোনও ক্ষতি করে না। তবে রুখে দিতে পারে ডেঙ্গু ভাইরাসকে। ডেঙ্গু ভাইরাস মশার যে অংশ থেকে প্রবেশ করে, সেই অংশকেই অকেজো করে দেয়। এছাড়াও মশার শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস উৎপাদনে বাঁধা সৃষ্টি করে। ফলে মশা কামড়ালেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আর কোনও সম্ভাবনা থাকে না।
বিজ্ঞানীরা আরও দাবি করেছেন, একবার কোনও একটি মশার শরীরে ওলবাকিয়া প্রবেশ করলে তার পরবর্তী প্রজন্মের শরীরেও থেকে যায়। তাই ওলবাকিয়া মশার শরীরে ছড়িয়ে দেওয়া অনেক সহজ।
কীভাবে চলেছিল ওই গবেষণা? এব্যাপারে বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের ওই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, প্রায় ৫০ লক্ষ ওলবাকিয়ায় আক্রান্ত মশার ডিম ব্যবহার করা হয়েছিল ওই গবেষণায়। ওই ডিমগুলি ২ সপ্তাহ অন্তর ইয়োগিয়াকার্তা শহরের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে জলের পাত্রে মশার বংশবৃদ্ধি করা হয়েছিল। এইভাবে প্রায় ৯ মাস ধরে মশার বংশবৃদ্ধি করা হয়। পরে শহরের ২৪টি জোনে উৎপন্ন মশার অর্ধেক ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওই সমস্ত অঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে গিয়েছে প্রায় ৭৭ শতাংশ। এছাড়াও হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ভর্তির সংখ্যাও প্রায় ৮৬ শতাংশ কমে গিয়েছে।