ইউরোপিয়ান সাউদান অবজারভেটরি (ইএসও)-র টেলিস্কোপে এই দৃশ্য চাক্ষুষ করলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। প্রক্রিয়াটির তাঁরা নাম দিয়েছেন ‘টাইডাল ডিসরাপসন ইভেন্ট’। ওই কৃষ্ণগহ্বরটি অবস্থান করছে পৃথিবী থেকে প্রায় ২১৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। বার্মিহাম ইউনিভার্সিটির লেকচারার ও রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির রিসার্ড ফেলো ম্যাট নিকোল জানালেন, ‘নিকটবর্তী নক্ষত্রকে ব্ল্যাকহোলের গিলে ফেলার ধারণা কল্পবিজ্ঞানের মতো শোনায়। কিন্তু টাইডাল ডিসরাপসন ইভেন্টে ঠিক এমনটাই ঘটেছে।’ |

রঞ্জন সরকার : মহাকাশে ঘটে যাওয়া এক অদ্ভুত ভয়ঙ্কর সুন্দর ঘটনার সাক্ষী হলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। সম্পূর্ণ ঘটনাটিই ধরা পড়ল বিজ্ঞানীদের টেলিস্কোপে। তাঁরা দেখলেন, তাঁদেরই চোখের সামনে একপ্রকার নিঃশব্দেই প্রায় সূর্যের সমান ভরের একটি তাজা জীবন্ত নক্ষত্র ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে ‘ব্ল্যাকহোল’ বা ‘কৃষ্ণগহ্বর’-এর ভিতর।
কল্পকাহিনীগুলিতে যেমন বিশালাকার দানবদের এক এক করে বিপক্ষ দলের সেনাদের মুখে পুরে নিতে দেখা যায়, বিপক্ষ দলের সেনাদের তখন অসহায়ের মতো চেয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। বিপক্ষ দলের মহারথী যোদ্ধারাও ওই দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে স্তম্ভিত হয়ে যায়, কৃষ্ণগহ্বরের নক্ষত্র গিলে ফেলার এই ঘটনাটিও যেন সেই রকম। এখানে দর্শক শুধুই গুটি কয়েক জ্যোতির্বিজ্ঞানী। পৃথিবীতে বসে টেলিস্কোপে চোখ রেখে সূর্যের মতো একটি নক্ষত্রকে কৃষ্ণগহ্বরের স্রেফ গিলে ফেলার বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকলেন তাঁরা।
ইউরোপিয়ান সাউদান অবজারভেটরি (ইএসও)-র টেলিস্কোপে এই দৃশ্য চাক্ষুষ করলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। প্রক্রিয়াটির তাঁরা নাম দিয়েছেন ‘টাইডাল ডিসরাপসন ইভেন্ট’। ওই কৃষ্ণগহ্বরটি অবস্থান করছে পৃথিবী থেকে প্রায় ২১৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে।
বার্মিহাম ইউনিভার্সিটির লেকচারার ও রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির রিসার্ড ফেলো ম্যাট নিকোল জানালেন, ‘নিকটবর্তী নক্ষত্রকে ব্ল্যাকহোলের গিলে ফেলার ধারণা কল্পবিজ্ঞানের মতো শোনায়। কিন্তু টাইডাল ডিসরাপসন ইভেন্টে ঠিক এমনটাই ঘটেছে।’
মিঃ নিকোল ঘটনাটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানালেন, একটি নক্ষত্র যখন সুবিশাল কোনও ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের কাছাকাছি চলে আসে, তখন নক্ষত্রটি একটি মারাত্মক মাধ্যাকর্ষণের কবলে পড়ে। তখন তার কোনও উপায় থাকে না সেই প্রবল শক্তিকে উপেক্ষা করে বেরিয়ে আসার। ফলে টুকরো টুকরো হয়ে কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। তখন এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ‘স্প্যামেট্রিফিকেশন’।
তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কৃষ্ণগহ্বরে নক্ষত্র গিলে ফেলা ঘটনার সাক্ষী হওয়া এই প্রথমবার নয়, এর আগেও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এইরকম ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন। কিন্তু কৃষ্ণগহ্বরে প্রবেশের মুখে নক্ষত্রের টুকরো হয়ে যাওয়ার মতো এইরকম সুস্পষ্ট ঘটনা এই প্রথমবার চাক্ষুষ করলেন তাঁরা। এর ফলে বিজ্ঞানীরা মহাকাশের অজ্ঞাত ধ্বংসাবশেষ যেভাবে গঠিত হয়, তা চিহ্নিত করতে পেরেছেন। নিঃসন্দেহে তাঁদের কাছে এটি অনেক বড়ো একটি আবিস্কার।