‘যেন কেঁদে উঠল কবিতার সমস্ত পাতা’ : চলে গেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ

Advertisement
বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি এমনিতেই ছিলেন শারীরিক দিক দিয়ে দুর্বল। জ্বরের জন্য তাঁকে করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছিল। ১৪ এপ্রিল রিপোর্ট আসে তিনি করোনা পজিটিভ। নিজের বাড়িতেই তাঁর করোনা চিকিৎসা চলছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ২১ এপ্রিল অর্থাৎ আজ সকালেই তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ খুলে নেওয়া হয় তাঁর ভেন্টিলেটর। – ছবি : সংগৃহীত
‘যেন কেঁদে উঠল কবিতার সমস্ত পাতা’, চলে গেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ

জনদর্পণ ডেস্ক : করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে তিনি কোনওভাবে সামলাতে পারলেন না। ১৪ এপ্রিলের রিপোর্টে তিনি জানতে পারলেন, করোনা পজিটিভ। চলল চিকিৎসাও। তবে সব চেষ্টা ব্যর্থ করে নিঃশব্দে চলে গেলেন জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলার শক্তিমান আধুনিক এই কবি শঙ্খ ঘোষ। প্রয়াণ কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। আর সেই সঙ্গে ‘যেন কেঁদে উঠল কবিতার সমস্ত পাতা’।

বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি এমনিতেই ছিলেন শারীরিক দিক দিয়ে দুর্বল। জ্বরের জন্য তাঁকে করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছিল। ১৪ এপ্রিল রিপোর্ট আসে তিনি করোনা পজিটিভ। নিজের বাড়িতেই তাঁর করোনা চিকিৎসা চলছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ২১ এপ্রিল অর্থাৎ আজ সকালেই তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ খুলে নেওয়া হয় তাঁর ভেন্টিলেটর।

৫ এপ্রিল ১৯৩২ সালে কবি শঙ্খ ঘোষ জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার চাঁদপুরে। তাঁর আসল নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। পিতা মনীন্দ্রকুমার ঘোষ ও মা অমলা ঘোষ। শঙ্খ ঘোষের স্কুল জীবন কেটেছে পাবনা জেলায়। এই জেলার চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে তিনি মেট্রিকুলেশন পাস করেন। পরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশায় তিনি ছিলেন শিক্ষক, লেখক ও সাহিত্য গবেষক। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করেছেন।

তাঁর জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে কবিতা। জীবনানন্দ পরবর্তী সময়ে বাংলার যে ক’জন শক্তিমান আধুনিক কবির জন্ম হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দিনগুলি রাতগুলি’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে। এরপর একে একে ‘এখন সময় নয়’, ‘নিহিত পাতাল ছায়া’, ‘মূর্খ বড়ো সামাজিক নহে’, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘পাঁজরে কাকের শব্দ’, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘শবের উপরে শামিয়ানা’ সহ অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলি প্রকাশ হতে থাকে।

তিনি ‘ছন্দের বারান্দা’, ‘উর্বশীর হাসি’, ‘নির্মাণ আর সৃষ্টি’, ‘কবির অভিপ্রায়’, ‘ইশারা অবিরত’, ‘প্রেম পদাবলী’, ‘দেখার দৃষ্টি’ সহ অসংখ্য গদ্যগ্রন্থও লিখেছেন। ছোটোদের জন্যেও তিনি লিখেছেন অসংখ্য বই। তার মধ্যে উল্লেখ করতে হয় ‘আমন ধানের ছড়া’, ‘কথা নিয়ে খেলা’, ‘ছোট্ট একটি স্কুল’, ‘বড়ো হওয়া খুব ভুল’, ‘ইচ্ছে প্রদীপ’ প্রভৃতিকে।

সাহিত্য সাধনার জন্য তিনি একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭৭ সালে ‘বাবরের প্রার্থনা’-র জন্য পেয়েছেন ‘সাহিত্য একাদেমি’ পুরস্কার। ১৯৮৯ সালে ‘রবীন্দ্র’ পুরস্কার পেয়েছেন ‘ধুম লেগেছে হৃদয়কমল’-এর জন্য। এছাড়াও ভারত সরকার কর্তৃক ২০১১ সালে তিনি পদ্মভূষণ পুরস্কার ও ২০১৬ সালে পান ‘জ্ঞানপীঠ’ পুরস্কার।

Advertisement
Previous articleমঙ্গল অভিযান : ড্রোন উড়ানের পর এবার জলশূন্য রহস্য
Next article২০০ বছরের সাবেকি ধারায় বাসন্তী পুজো হয় বাংলাদেশের গুড়নী গ্রামে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here