মঙ্গলের বুকে পাখা লাগানো ড্রোন বা হেলিকপ্টার জাতীয় কোনও উড়োযান ওড়ানো ছিল বেশ কঠিন। কারণ মঙ্গলে বায়ুর ঘনত্ব পৃথিবীর তুলনায় মাত্র ১ শতাংশ। এই অবস্থায় বায়ু কেটে কোনও যানকে উপরে তোলা ছিল বেশ কঠিন। ‘ইনজেনুয়িটি’-র ওজন মাত্র ১.৮ কিলোগ্রাম। নাসা জানিয়েছে, মঙ্গল পৃষ্ঠ থেকে এটি প্রায় ১০ ফুট উপরে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এই অবস্থায় বাতাসে ভেসে ছিল প্রায় ৩৯.১ সেকেন্ড। এই কঠিন অভিযানে সফল হয়ে নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বার বার স্মরণ করেছেন রাইট ভ্রাতৃদ্বয়কে। |

অনলাইন পেপার : সৌর জগতের লাল গ্রহ মঙ্গল সম্পর্কে একের পর নতুন তথ্য জানাচ্ছে নাসা। সৌজন্য পারসিভিয়ারেন্স ও কিউরিওসিটি। এই দুটি মঙ্গলযান সাম্প্রতিককালে অল্প কিছুদিনের মধ্যে যা যা তথ্য পাঠিয়েছে সেসবই বিশ্লেষণ করে রীতিমতো অবাক নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এই সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে মঙ্গল সম্পর্কে জানতে পেরেছেন আরও বিস্তারিত।
সম্প্রতি মঙ্গলের বুকে সফলভাবে ড্রোন বা নিয়ন্ত্রিত হেলিকপ্টার উড়িয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে নাসা। কারণ বহির্বিশ্বে এটিই ছিল মানুষের প্রথম এই ধরণের কোনও উড়ান অভিযান। যাতে তারা সফলও হয়েছে। গত বছরের ৩০ জুলাই পৃথিবী থেকে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল রোভার পারসিভিয়ারেন্স। প্রায় ২৭ কোটি ৮০ লক্ষ কিলোমিটারের দীর্ঘ পথ পাড়িয়ে দিয়ে মঙ্গলে অবতরণ করেছিল গত ১৮ ফেব্রুয়ারি। এই রোভারটির সঙ্গেই পাঠানো হয়েছিল ‘ইনজেনুয়িটি’ নামের একটি ড্রোনকে। গত ১৯ এপ্রিল গ্রিনিচের সময় অনুযায়ী ভোর ৩টে ৩৪ মিনিটে এটিই মঙ্গলের আকাশে উড়তে পেরেছে সফলভাবে।
মঙ্গলের বুকে পাখা লাগানো ড্রোন বা হেলিকপ্টার জাতীয় কোনও উড়োযান ওড়ানো ছিল বেশ কঠিন। কারণ মঙ্গলে বায়ুর ঘনত্ব পৃথিবীর তুলনায় মাত্র ১ শতাংশ। এই অবস্থায় বায়ু কেটে কোনও যানকে উপরে তোলা ছিল বেশ কঠিন। ‘ইনজেনুয়িটি’-র ওজন মাত্র ১.৮ কিলোগ্রাম। নাসা জানিয়েছে, মঙ্গল পৃষ্ঠ থেকে এটি প্রায় ১০ ফুট উপরে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এই অবস্থায় বাতাসে ভেসে ছিল প্রায় ৩৯.১ সেকেন্ড।
এই কঠিন অভিযানে সফল হয়ে নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বার বার স্মরণ করেছেন রাইট ভ্রাতৃদ্বয়কে। কারণ রাইট ভ্রাতৃদ্বয় অর্থাৎ অরভিল রাইট ও উইলিয়াম রাইট-ও প্রায় ১১৮ বছর আগে পৃথিবীর বুকে প্রথম উড়োজাহাজ বাতাসে উড়িয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন। তাঁদের দেখানো পথে পথ হেঁটেই আজকের পৃথিবী হয়েছে তুখড় গতিময়। মঙ্গলের যে স্থানে ‘ইনজেনুয়িটি’ অবতরণ করেছে, নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেই স্থানটির নাম দিতে চেয়েছেন ‘রাইট ভাইদের অবতরণক্ষেত্র’।
মঙ্গলের জলশূন্যতা এখনও পর্যন্ত খুব বড়ো একটি রহস্য। এককালে যে এই গ্রহটিতে জলের উপস্থিতি ছিল, এব্যাপারে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রায় নিশ্চিত। তবে কীভাবে বা কি কারণে মঙ্গল জলশূন্য হল এই রহস্যের সমাধান এখনও করে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি মঙ্গল থেকে পাওয়া কিছু তথ্য খতিয়ে তাঁরা জানতে পেরেছেন, মঙ্গল হঠাৎ করে জলশূন্য হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে এবং ধাপে ধাপে মঙ্গলের বুক থেকে হারিয়ে গিয়েছে জল।
নাসার বিজ্ঞানীদের এই তথ্য অবশ্য পাঠিয়েছে ‘কিউরিওসিটি’। ২০১১ সালের ২৬ নভেম্বর এটিকে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল এবং এটি মঙ্গলে পৌঁছিয়েছিল পরের বছর ৬ আগস্ট। এর অন্যতম কাজ ছিল মঙ্গলের অতীত সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা।
‘কিউরিওসিটি’ মঙ্গলের ‘গেল ক্রেটার’ নামের একটি খাদে অবতরণ করেছিল। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, এই খাদটি প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগেও জলপূর্ণ ছিল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে উপরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ‘কিউরিওসিটি’ সংগ্রহ করছিল ওখানকার বিভিন্ন তথ্য, পাথর, নমুনা। কিউরিওসিটি এখনও পর্যন্ত তার অবতরণ স্থল থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার উপরে মাউন্ট শার্প পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে।
মাউন্ট শার্প পর্যন্ত পৌঁছনোর পথে সে যে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে, সেগুলি বিশ্লেষণ করে নাসা জানতে পেরেছে, একসময়ে মঙ্গল ছিল বেশ উষ্ণ ও আর্দ্র। এখানে জলের উপস্থিতিও ছিল। এমনকি প্রাণ সৃষ্টির উপযুক্ত পরিবেশ থাকাটাও সেখানে অবিশ্বাস্য ছিল না। পরে বেশ কয়েকটি ধাপে এখানকার বায়ুমণ্ডলে পরিবর্তন আসতে শুরু করে এবং সেই সঙ্গে হারিয়ে যেতে থাকে উষ্ণতা ও জল। ক্রমে গ্রহটি পরিণত হয় জলশূন্যে এবং সেই সঙ্গে গ্রাস করে নেয় কঠিন শীতলতায়। নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগেও এখানে যথেষ্ট জলের উপস্থিতি ছিল।