কুয়াশা থেকে চাষের জন্য জল সংগ্রহ করছে পেরুর আদিবাসীরা

Advertisement
কৃষির জন্য জল সংগ্রহের এক অভিনব উপায় চালু করেছে দেশটির কয়েকটি আদিবাসী সম্প্রদায়। তারা দেখেছে গাছের পাতায় পাতায়, বিশেষ করে লম্বা কলাপাতায় ভোরের কুয়াশা থেকে শিশির জমা হয় খুব সহজেই। স্বচ্ছ সেই শিশির জমা জল পানেরও উপযোগী। প্রাকৃতিক এই কারসাজি দেখেই তারা কুয়াশার জল সংগ্রহ করতে শুরু করে। এর জন্য তারা খোলা প্রান্তরে কুয়াশার নাগাল পেতে বেশ কয়েকটি বড়ো-সড়ো জাল বা কাপড় টাঙিয়ে রাখে।
কুয়াশা থেকে চাষের জন্য জল সংগ্রহ করছে পেরুর আদিবাসীরা
Symbolic Image – Image by GLady from Pixabay

অনলাইন পেপার : পেরু দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম প্রান্তের একটি ছোট্ট দেশ। বিশ্ব জুড়ে দেশটির পরিচয় ভালো ফুটবল খেলিয়ের দেশ হিসাবে। তবে দেশটির আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়। প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী দেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশটির অভ্যন্তরে রয়েছে প্রায় জনবিরল শুষ্ক মরুভূমি, কয়েকটি উঁচু মালভূমি, আর বেশ কতকগুলি বরফাচ্ছন্ন পর্বতমালা।

শুষ্ক আবহাওয়া ও জলের যথেষ্ট অভাবের জন্য কৃষিকাজেও তেমন অগ্রসর হতে পারেনি পেরু। তাই অভাব এখানে প্রায় ঘরে ঘরে। তবে চেষ্টার ত্রুটিও নেই এখানে। কৃষির জন্য জল সংগ্রহের এক অভিনব উপায় চালু করেছে দেশটির কয়েকটি আদিবাসী সম্প্রদায়। তারা দেখেছে গাছের পাতায় পাতায়, বিশেষ করে লম্বা কলাপাতায় ভোরের কুয়াশা থেকে শিশির জমা হয় খুব সহজেই। স্বচ্ছ সেই শিশির জমা জল পানেরও উপযোগী। প্রাকৃতিক এই কারসাজি দেখেই তারা কুয়াশার জল সংগ্রহ করতে শুরু করে। এর জন্য তারা খোলা প্রান্তরে কুয়াশার নাগাল পেতে বেশ কয়েকটি বড়ো-সড়ো জাল বা কাপড় টাঙিয়ে রাখে।

এমনিতেই কুয়াশা-কে বলা হয় ‘লো ক্লাউড’, অর্থাৎ ‘নিচুতলার মেঘ’। আকাশের মেঘ ও কুয়াশার মধ্যে পার্থক্য তেমন কিছুই নেই। আসলে ভূমিভাগ ঘেঁষে মেঘ ভেসে বেড়ালে তাকেই কুয়াশা বলা হয়ে থাকে। কুয়াশা অসংখ্য সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জলকণার সমষ্টি মাত্র। বিশাল এলাকা জুড়ে ভূমি সংলগ্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা যখন শিশিরাঙ্কের নিচে নেমে আসে, তখনই সৃষ্টি হয় কুয়াশার। পরে কুয়াশায় অবস্থান করা জলকণাগুলি পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সৃষ্টি করে শিশিরের। এই শিশিরই শীতের মরশুমে বঙ্গদেশের ভোরের পরিবেশে ঘাসের উপর জমে থাকতে দেখা যায়। তবে এই শিশির জমিয়ে কৃষিকাজের উপযোগী করার ভাবনা বঙ্গদেশের চাষিরা এখনও ভাবতে শেখেনি। কারণ পেরুর মতো জলের অভাব এখানে তেমন নেই।

পেরুর কাস্কো অঞ্চলের আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরেই এইভাবে তাদের নিজেদের তেষ্টা মেটানোর ও কৃষিকাজের ব্যবহারের জন্য কুয়াশা থেকে জল সংগ্রহ করে থাকে। তারা কোনও খোলা প্রান্তরে লম্বা লম্বা জাল বা কাপড় টাঙিয়ে উড়ন্ত কুয়াশা থেকে জল সংগ্রহ করে। সেই জল প্রথমে লম্বা পাইপে ও পরে ভূমিতে পেতে রাখা জলপাত্রে জমা করে রাখে। তবে শুধু পেরু নয়, মেক্সিকো, বলিভিয়া, কলোম্বিয়াতেও একই উপায়ে জল সংগ্রহ করে সেখানকার বাসিন্দারা।

এখানে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, কুয়াশা থেকে জল সংগ্রহের এই উপায় কিন্তু বেশ প্রাচীন। এক সময়ে ইতালির প্যান্টেলেরিয়া দ্বীপের বাসিন্দারা জলসঙ্কট মেটাতে কুয়াশা থেকে জল সংগ্রহ করত। এর জন্য তারা খুব উঁচু প্রাচীরও নির্মাণ করেছিল। কুয়াশার জল সেই প্রাচীরের পাথর-কে ভিজিয়ে দেওয়াল বেয়ে নেমে আসত নিচে। সেখান থেকেই সেই জল সংগ্রহ করত বাসিন্দারা। তবে এই জল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ব্যবহার করত বীজ থেকে চারা তৈরি করার কাজে।

Advertisement
Previous articleভিটামিন ডি করোনা সংক্রমণ রুখতে কতটা সক্ষম? কি বলছেন গবেষকেরা?
Next articleখেতের ফসল খাওয়ার অপরাধে ৩৩টি বাবুইয়ের ছানাকে পুড়িয়ে হত্যা বাংলাদেশে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here