চলে এল ২০২১ : নতুন বছরে সবচেয়ে বেশি যে দিকে নজর থাকবে সবার

Advertisement
২০২০ সালকে অনেকে যেমন অভিশপ্ত বছর হিসাবে উল্লেখ করেছেন, ঠিক তেমনি অনেকেই আবার সতর্কীকরণের বছর হিসাবেও চিহ্নিত করেছেন। তাঁদের মতে, মানুষের জীবন ভুল পথে চালিত হলে তার পরিণাম কি হতে পারে তা চোখে আঙুল দিয়ে খুব ভালোভাবেই দেখিয়েছে এই ২০২০। তবে এই ভুল থেকেই শিক্ষা নিতে হবে সমগ্র মানব জাতিকে। ভুল শুধরে নতুন পৃথিবী গড়ার পরিকল্পনা করতে হবে এই মানুষ জাতিকেই। ২০২০ একটা সীমারেখা ছিল মাত্র। – ছবি : সংগৃহীত

চলে এল ২০২১ : নতুন বছরে সবচেয়ে বেশি যে দিকে নজর থাকবে সবার

সজয় পাল : করোনার সঙ্গে লড়াই করতে করতেই শেষ হল একটা গোটা বছর। সম্পূর্ণ বছরটাই কেটেছে একটা অদ্ভুত আতঙ্ক নিয়ে। চারিদিকেই সারি সারি মৃত্যুর মিছিল আর সেই সঙ্গে সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম করোনার মুখ চাপা হাসি। তবুও এরই মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই। বদল ঘটেছে পরিবেশেরও। তবে যা কিছুই ঘটেছে, তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে (দু-একটি ক্ষেত্র বাদ দিয়ে) সম্পর্ক ছিল করোনা-র। তাই ২০২০-কে করোনা-র বছর বললেও ভুল বলা হবে না।

অনেক প্রত্যাশা নিয়েই এবার হাজির হয়েছে ২০২১। বিগত বছরের সমস্ত আতঙ্ক আর সমস্ত গ্লানিকে ঝেড়ে নিশ্চয় এই নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে সকলেই। তবে এবছরেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যে দিকে নজর থাকবে প্রায় সকলেরই।

বাংলার বিধানসভা নির্বাচন : এবারের নির্বাচনে লড়াই হবে মূলত তিন শক্তির মধ্যে। ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি একে অপরকে নিজেদের শক্তি দেখাতে নেমে পড়েছে ময়দানে। গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে বিজেপির উত্থান ঘটে। এই দুই দলের মধ্যে যে বেশ টক্কর চলবে এবিষয়ে সমস্ত রাজনীতিবিদই প্রায় একমত এখন। অপরদিকে জোট গড়েছে পুরনো দুই শক্তি সিপিআইএম ও জাতীয় কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গে যৌথভাবে সরকার গড়তে তারাও যথেষ্ট আশাবাদী। আগামী এপ্রিলে নির্ধারণ করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ক্ষেত্র। নির্বাচনের সময়সীমা পিছিয়ে না গেলে ওই মাসেই জানা যাবে বাংলার ক্ষমতায় থাকবে কে বা কারা।

অর্থনীতির অগ্রগতি : প্রায় এক বছর করোনায় বন্দী রয়েছে সমগ্র দেশ সহ গোটা পৃথিবী। বছরের শুরুর দিকে লকডাউনের জন্য থিতিয়ে গিয়েছিল দেশের অর্থনীতি। তার জেরে বিশ্ব অর্থনীতির মঞ্চে ভারত চতুর্থ স্থান থেকে এক ধাপ পিছিয়ে পঞ্চম স্থানে নেমে এসেছে। অবশ্য বিগত ২-৩ মাস ধরে পুনরায় অর্থনীতির সূচক ঊর্ধ্বে উঠতে শুরু করেছে। নতুন বছরে ভারতের এই অর্থনীতির গতি কোন দিকে গড়াবে সেদিকে নজর রাখবে সমগ্র দেশবাসী।

ভারত সরকারের নতুন পরিকল্পনা : বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় প্রতি বছরই নতুন নতুন পরিকল্পনার আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে। নোটবন্দী, জিএসটি লাগু, তিন তালাক রদ, এনআরসি, কাশ্মীর নীতি, বিদেশ নীতি, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, নতুন কৃষি আইন এসবই ছিল সেই সমস্ত পরিকল্পনার এক একটি অংশ। ভারত সরকার নতুন বছরে এই রকমই অন্য কোনও নতুন পরিকল্পনার আত্মপ্রকাশ ঘটায় কিনা সেদিকেও নজর থাকবে দেশবাসীর।

করোনা নিয়ন্ত্রণ : বিগত এক বছর ধরে ছায়া যুদ্ধ চলছে করোনা মহামারীর সঙ্গে। এই ছায়া যুদ্ধে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছে সমগ্র পৃথিবীর প্রায় ১৮ লাখ ১৯ হাজার মানুষ। সংক্রমণ ছড়ানোর কয়েক মাসের মধ্যেই অবশ্য পৃথিবীবাসী বুঝে গিয়েছিল ভ্যাকসিন ছাড়া কোনওভাবেই এই মহামারি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিনও আবিষ্কার হয়ে গিয়েছে ২০২০ সালের মধ্যেই। ভ্যাকসিনগুলির কার্যকারিতা পরীক্ষার পর ২০২১-এর প্রথম থেকেই সেগুলি গণহারে প্রয়োগ করার ছাড়পত্র দেওয়ার কথা রয়েছে। এখন দেখার, এই নতুন বছরে কতটা নিয়ন্ত্রণে আসবে করোনা সংক্রমণ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বদল : এই জানুয়ারিতেই বদলে যাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প-কে সরিয়ে আগামী ৪ বছরের জন্য হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা হবেন জো বাইডেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এরই সঙ্গে বদল ঘটতে পারে অনেকগুলি নীতিরও। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির নতুন প্রেসিডেন্টের নতুন নীতি কি হতে পারে, সেদিকেও তাকিয়ে থাকবে সমগ্র বিশ্ব।

চিনের ক্ষমতা প্রদর্শন : সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি সামরিক শক্তিতেও যে চিনের দ্রুত অগ্রগতি ঘটছে, এবিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা প্রায় সকলেই একমত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চিন-ই একমাত্র দেশ যারা এখনও আগ্রাসন নীতিকে প্রাধান্য দিয়ে চলেছে। জোর পূর্বক দখল করে চলেছে অন্যের ভু-খণ্ড। সেই সঙ্গে মূলত অর্থ ও সামরিক শক্তি দিয়ে তারা প্রায় সমগ্র পৃথিবী জুড়েই ক্ষমতা প্রদর্শন করছে। ইতিমধ্যে শক্তিধর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে তারা। এবছর চিনের এই অগ্রগতি কতটা ঘটবে সেদিকেও নজর থাকবে বিশ্বের।

মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্ব : মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলিকে দীর্ঘদিন ধরেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছে সৌদি আরব। এদিকে নতুন শক্তিধর দেশ হিসাবে ক্রমশই উত্থান ঘটছে তুরস্কের। তার নজর যে এই নেতৃত্বের দিকেই, ইতিমধ্যে তাও স্পষ্ট করেছে এই দেশটি। নতুন বছরে নজর থাকবে তুরস্কের এই অগ্রগতির দিকেও।

২০২০ সালকে অনেকে যেমন অভিশপ্ত বছর হিসাবে উল্লেখ করেছেন, ঠিক তেমনি অনেকেই আবার সতর্কীকরণের বছর হিসাবেও চিহ্নিত করেছেন। তাঁদের মতে, মানুষের জীবন ভুল পথে চালিত হলে তার পরিণাম কি হতে পারে তা চোখে আঙুল দিয়ে খুব ভালোভাবেই দেখিয়েছে এই ২০২০। তবে এই ভুল থেকেই শিক্ষা নিতে হবে সমগ্র মানব জাতিকে। ভুল শুধরে নতুন পৃথিবী গড়ার পরিকল্পনা করতে হবে এই মানুষ জাতিকেই। ২০২০ একটা সীমারেখা ছিল মাত্র।

Advertisement
Previous articleএক নজরে ২০২০ : যাঁরা চলে গিয়েছেন চিরতরে
Next articleনতুন বছর থেকেই বিশ্ব বাজারে ভারতের চাহিদা বাড়বে ক্রমশই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here