হায়াবুসা-২ মহাকাশযানটি ‘রায়ুগু’ গ্রহাণু থেকে মাটি সংগ্রহ করে ফেরার পথে পৃথিবীর কাছাকাছি পৌঁছে একটি ক্যাপসুলে তার মাটি পাঠিয়ে দেয় পৃথিবীতে। ক্যাপসুলটি প্রায় ১১ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড গতি নিয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে। গত ৫ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় ভোরবেলা তাকে নামতে দেখা যায় দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ওমেরা অঞ্চলে। অঞ্চলটি বর্তমানে এয়ারফোর্স নিয়ন্ত্রণাধীন। পরে উদ্ধারকারী দল স্থানটি শনাক্ত করে হেলিকপ্টারে পৌঁছে যায় সেখানে। ক্যাপসুলটির ওজন ছিল প্রায় ১৬ কেজি। |

অনলাইন পেপার : যাত্রা শুরু করেছিল ২০১৪ সালের ৩ ডিসেম্বর। তারপর দীর্ঘ ৩ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সে পৌঁছে যায় মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যবর্তী অঞ্চল, অর্থাৎ গ্রহাণুদের দেশে। এই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে যেতে তাকে সময় নিতে হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ বছর। ২০১৮ সালের জুন মাস নাগাদ সে নেমে পড়ে ‘রায়ুগু’ গ্রহাণুতে। তারও ১ বছর পর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১১ জুলাই সে ওই গ্রহাণু থেকে সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় গুরুত্বপূর্ণ নমুনা। অবশেষে সংগৃহীত মাটি নিয়ে সে গত নভেম্বরেই পৌঁছে যায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে।
এখানে যার সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে, সেটি জাপানের এক সফলতম মহাকাশযান, হায়াবুসা-২। গত ৫ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় ভোরবেলা সফলভাবে পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করেছে তারই একটি ক্যাপসুল। এই ক্যাপসুলের মধ্যেই অক্ষত রয়েছে রায়ুগু থেকে সংগৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সেই নমুনা।
বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, হায়াবুসা-২ মহাকাশযানটি ‘রায়ুগু’ গ্রহাণু থেকে মাটি সংগ্রহ করে ফেরার পথে পৃথিবীর কাছাকাছি পৌঁছে একটি ক্যাপসুলে তার মাটি পাঠিয়ে দেয় পৃথিবীতে। ক্যাপসুলটি প্রায় ১১ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড গতি নিয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে। গত ৫ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় ভোরবেলা তাকে নামতে দেখা যায় দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ওমেরা অঞ্চলে। অঞ্চলটি বর্তমানে এয়ারফোর্স নিয়ন্ত্রণাধীন। পরে উদ্ধারকারী দল স্থানটি শনাক্ত করে হেলিকপ্টারে পৌঁছে যায় সেখানে। ক্যাপসুলটির ওজন ছিল প্রায় ১৬ কেজি। ওই অঞ্চলের একটি গাছে আটকে থাকতে দেখা যায় সেটিকে। পরে সেটিকে অক্ষত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় জাপানের জাক্সার সাগামিজাহায় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে।
সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, জাপানের এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল রায়ুগু গ্রহাণু থেকে প্রায় ১০০ মিলিগ্রাম মাটি সংগ্রহ করা। যা ইতিমধ্যেই পুরোপুরি সফল হয়েছে। তবে এখানেই থেমে থাকবে না হায়াবুসা-২। তার লক্ষ্যে রয়েছে আরও একটি গ্রহাণু। যার ব্যাসার্ধ প্রায় ৩০ মিটার। নতুন ওই গ্রহাণুটি পৃথিবীর কাছে এসে পৌঁছবে ২০৩১ সালের দিকে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এবারের ‘রায়ুগু’ মিশন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদের পর এই প্রথম কোনও বহির্বিশ্ব থেকে মাটি এসে পৌঁছলো পৃথিবীতে। এই সংগৃহীত মাটি গবেষণায় জানা যেতে পারে মহাকাশের অনেক গোপন ইতিহাস। কারণ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা, সৌরজগৎ সৃষ্টির সময়েই গ্রহানুগুলির জন্ম হয়েছিল। রায়ুগু-ও অতি প্রাচীন শিলা পাথরে তৈরি কোনও গ্রহাণু। তাই সৌরজগৎ সৃষ্টি সম্পর্কে অনেক কিছুই এর থেকে জানা যেতে পারে। এছাড়াও পৃথিবীতে জলের উদ্ভব সম্পর্কেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসতে পারে রায়ুগু-র মাটি গবেষণায়। কারণ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের ধারণা, প্রথম দিকে পৃথিবীতে জল সঞ্চার হয়েছিল রায়ুগু-র মতো কোনও গ্রহাণু থেকেই।