আসছে পরিযায়ী পাখিরা : দূর দেশ থেকে যেভাবে পথ চিনে আসে তারা

Advertisement
পরিযায়ী পাখিরা হাজার হাজার মাইল একটানা উড়ে পৌঁছে যেতে পারে নিজেদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে। এই গন্তব্যস্থান তারা অবশ্য পূর্ব থেকেই নির্ধারণ করে রাখে। রৌদ্রোজ্জল দিন বা ঘুটঘুটে রাত অথবা মেঘাচ্ছন্ন দিন বা রাতও তাদের থামিয়ে রাখতে পারে। এই সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছনোর চাবিকাঠি আসলে কোথায়? এ নিয়েই বছরের পর বছর গবেষণা করে চলেছেন বিভিন্ন পাখিপ্রেমী গবেষক। তাদেরই এক একজনের গবেষণায় বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে বিভিন্ন রকম তথ্য।

আসছে পরিযায়ী পাখিরা : দূর দেশ থেকে যেভাবে পথ চিনে আসে তারা
Image by Capri23auto from Pixabay

সজয় পাল : জমজমাট এই শীতের মরশুমে করোনার ধাক্কায় বহিরাগতদের এদেশে প্রবেশ এখন নিষিদ্ধ। বিদেশী পর্যটকেরা ভারত ভ্রমণের জন্য সারা বছরের মধ্যে এই শীতকালকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মতো বীরভূমও বাদ যায় না তাঁদের প্রিয় ভ্রমণস্থান থেকে। কিন্তু এবছর তেমনটি আর হচ্ছে না। বিশ্ব ব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারিতে আপাতত বন্ধই থাকছে বিদেশি পর্যটকদের জন্য এদেশের দরজা।

তবে পর্যটক না এলেও ‘পরিযায়ী’-দের আসতে অবশ্য কোনও বাধা নেই এদেশে। তাদের প্রয়োজন হয় না কোনও পাসপোর্ট আর ভিসার। কাউকে তোয়াক্কাও করে না তারা। প্রতি বছরই শীতের দিনগুলি তারা নির্বিঘ্নে কাটিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অভয়ারণ্য আর বৃহৎ জলাশয়গুলিতে। এখানে ‘পরিযায়ী’ বলতে ‘পরিযায়ী পাখি’-দের কথা বলা হচ্ছে। তারা ইতিমধ্যেই ঝাঁক বেঁধে প্রবেশ করতে শুরু করেছে এদেশের নির্দিষ্ট এলাকায়।

বীরভূমের নীল নির্জন, বল্লভপুর, তিলপাড়ার ধার ঘেঁষে জমিয়ে বসতি গড়তেও শুরু করেছে তারা। এই জেলার পরিযায়ী পাখিদের অধিকাংশই আসে হিমালয়ের পাদদেশ, সাইবেরিয়া, তিব্বত, কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার আর থাইল্যান্ড থেকে। থাকবে সমস্ত শীতকাল জুড়ে। গরম বাড়তে শুরু করলে আবার ঝাঁক বেঁধে যাত্রা শুরু করবে মাতৃভূমির উদ্দেশ্যে। তাই তাদের চরাচরে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, প্রতি বছর সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর দেয় প্রশাসন।

পরিযায়ী পাখিরা হাজার হাজার মাইল একটানা উড়ে পৌঁছে যেতে পারে নিজেদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে। এই গন্তব্যস্থান তারা অবশ্য পূর্ব থেকেই নির্ধারণ করে রাখে। রৌদ্রোজ্জল দিন বা ঘুটঘুটে রাত অথবা মেঘাচ্ছন্ন দিন বা রাতও তাদের থামিয়ে রাখতে পারে। এই সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছনোর চাবিকাঠি আসলে কোথায়? এ নিয়েই বছরের পর বছর গবেষণা করে চলেছেন বিভিন্ন পাখিপ্রেমী গবেষক। তাদেরই এক একজনের গবেষণায় বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে বিভিন্ন রকম তথ্য।

১. সূর্যের উপস্থিতি – এই তথ্য অনুযায়ী পরিযায়ী পাখিরা দিনের আলোয় চলার সময়ে সূর্যের উপস্থিতিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়। সূর্যের স্থান পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে তাদের দিক নির্ণয়ের ক্ষমতা।

২. নক্ষত্র বিবেচনা – বছরের বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট দিকে বিশেষ কিছু নক্ষত্রের উদয় ঘটে। রাতের অন্ধকারে পথ চলার সময় সূর্যের অনুপস্থিতিতে ওই সব নক্ষত্র আর চাঁদকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করে পরিযায়ীরা।

৩. নিশান – বারংবার একই পথে যাতায়াত করার ফলে পরিযায়ীরা ভূপৃষ্ঠের নির্দিষ্ট কতকগুলি প্রাকৃতিক নিশানকে মনে রেখে দেয়। পরবর্তীকালে ওই সব নিশান ধরেই তারা এগিয়ে যায় নিজেদের গন্তব্যে।

৪. ভু-চুম্বক – কিন্তু আকাশ মেঘলা থাকলে দিনের সূর্য বা রাতের নক্ষত্রমণ্ডলের দেখা পাওয়া বেশ মুশকিল হয়ে পড়ে। আর প্রাকৃতিক নিশানগুলি যে বছরের পর বছর একই রকম থাকবে তারও কোনও নিশ্চয়তা থাকে না। তখন কি হবে? এই পরিস্থিতিতে পরিযায়ী পাখিরা ভু-চুম্বকের উপর নির্ভর করে পথে চলে। গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, তাদের মস্তিষ্কের বিশেষ কতকগুলি স্নায়ুকোষ চুম্বক দ্বারা প্রভাবিত হয়। মস্তিষ্কের ওই স্নায়ুকোষ সম্বলিত চৌম্বক অংশটির মাধ্যমেই তারা সম্পর্ক স্থাপন করে ভু-চুম্বকের সঙ্গে। ভু-চুম্বকের একটি নির্দিষ্ট আবেশ ক্ষমতা রয়েছে। যা অনেকটা স্থান পরিবর্তনের উপরই নির্ভর করে। সাধারণ অবস্থায় এই ক্ষমতা মানুষের বোধগম্যের বাইরেই থাকে। পরিযায়ী পাখিরা চলার সময় ওই ভু-চুম্বকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে বুঝে নিতে পারে তাদের বর্তমান অবস্থান এখন ঠিক কোথায়। এই প্রক্রিয়াটি অনেকটা আধুনিক জিপিএস প্রযুক্তির মতো।

বছরের পর বছর এইভাবেই অত্যন্ত নিখুঁতভাবে পথ চিনে পরিযায়ীরা পৌঁছে যায় নিজেদের পছন্দের বিচরণ ভূমিতে। তবে পরিযায়ীদের মধ্যে সবাইকেই যে এই কাজে দক্ষ হতে হবে তার কোনও মানে নেই। এক ঝাঁক পরিযায়ীর মধ্যে নির্দিষ্ট কতকগুলি অভিজ্ঞ ‘মোড়ল পাখি’ এই গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকে। তারা সামনের সারিতে থেকে অন্যদের পথ দেখায়। বাকিরা তাদের দেখানো পথকেই অনুসরণ করে মাত্র।

Advertisement
Previous articleউঠে গিয়েছে হাট, তবু আজও হাটতলায় একাই দোকান সাজান শঙ্করী দেবী
Next articleজরুরী ব্যবহারে করোনার টিকাকরণ শুরু হল যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here