সতীর ৫১ পীঠ ছড়িয়ে রয়েছে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে। যার অধিকাংশই ভারত ভূখণ্ডে। বাকি কয়েকটি পীঠ রয়েছে পাকিস্থান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল ও তিব্বত ভূমিতে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের সতীর এই ৫১ পীঠের ৫টি পীঠই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায়। এক সঙ্গে এতগুলি শক্তিপীঠ আর কোনও জেলায় দেখা যায় না। তাই শক্তিপীঠের বিচারে বীরভূম-কে পুণ্যভূমি বললেও ভুল বলা হবে না। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি |

সজয় পাল : দক্ষ তার যজ্ঞের অনুষ্ঠানে ভগবান শিবকে চরম অপমান করেছিল। স্বামীর এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী দেহ রাখে। তখন মহাদেব অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে দক্ষের যজ্ঞানুষ্ঠানে আসে এবং যজ্ঞানুষ্ঠান নষ্ট করে সতীর দেহ নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। এরপর শোক বিহ্বল মহাদেব সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে প্রলয় নৃত্য শুরু করে। শিবের এই প্রলয় নৃত্য বন্ধ করার অন্য কোনও উপায় না দেখে ভগবান বিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র প্রয়োগে সতীর দেহ ৫১টি খণ্ডে ভাগ করে দেয়। সতীর ভাগ হওয়া এই ৫১টি দেহখণ্ড যেসব স্থানে পতিত হয়েছিল, পরবর্তীকালে সেসমস্ত স্থানে গড়ে উঠেছে এক একটি পীঠস্থান বা শক্তিপীঠ। পৌরাণিক এই ঘটনাটি কম-বেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় সকলেরই জানা।
সতীর এই ৫১ পীঠ ছড়িয়ে রয়েছে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে। যার অধিকাংশই ভারত ভূখণ্ডে। বাকি কয়েকটি পীঠ রয়েছে পাকিস্থান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল ও তিব্বত ভূমিতে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের সতীর এই ৫১ পীঠের ৫টি পীঠই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায়। এক সঙ্গে এতগুলি শক্তিপীঠ আর কোনও জেলায় দেখা যায় না। তাই শক্তিপীঠের বিচারে বীরভূম-কে পুণ্যভূমি বললেও ভুল বলা হবে না। বীরভূমের এই ৫টি পীঠস্থান সম্পর্কে এখানে সামান্য ধারণা দেওয়া হল।
বক্রেশ্বর : বীরভূমের সদর শহর সিউড়ির ২৪ কিলোমিটার দূরে এই পীঠস্থানটির অবস্থান। এর পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ‘পাপহরা’ নদী। এখানে সতীর মন বা ভ্রূমধ্যস্থ পড়েছিল। দেবী এখানে মহিষাসুরমর্দিনী, অর্থাৎ দশভুজা রূপে পুজো পায়। দেবীর মূর্তিটি পিতলের। দেবীর এই একই রূপ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের ঢাকেশ্বরী মন্দিরের দেবীমূর্তিতে।
কাঞ্চিদেশ : বোলপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে এই পীঠস্থানটির অবস্থান। এখানে দেবীর অস্থি বা কঙ্কাল পড়েছিল (মতান্তরে কোমরের হাড়)। হয়তো তাই এই শক্তিপীঠের নাম হয়েছে কংকালিতলা। এই স্থানটির পূর্ব নাম ছিল কাঞ্চিদেশ। দেবী এখানে দেবগর্ভা নামে পুজো পায়। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে এখানে বেশ বড়ো একটি মেলা বসে।
নলহাটি : নলহাটি স্টেশন থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরেই দর্শন পাওয়া যাবে দেবী নলাটেশ্বরীর। এখানে সতীর গলার নলী পড়েছিল। সারা বছর নিত্য পুজো চললেও বছরে দু’বার এখানে বিশেষ পুজো দেওয়া হয়।
লাভপুর : বোলপুর থেকে লাভপুরের দূরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার। এই লাভপুরের খুব কাছেই রয়েছে দেবী ফুল্লরার মন্দির। এখানে সতীর নিচের ঠোঁট পড়েছিল। অসংখ্য তেতুল গাছের ছায়ায় চতুর্ভুজাকৃতির দেবী ফুল্লরার মন্দিরটিতে নির্দিষ্ট কোনও বিগ্রহ নেই। কচ্ছপাকৃতির একটি শিলাখণ্ডতে দেবীর রূপ দেওয়া হয়েছে। কথিত রয়েছে, এক সময় এই মন্দিরের চূড়ায় সোনার কলস শোভা পেত।
নন্দপুর : সাঁইথিয়া রেল স্টেশনের ঠিক পাশেই রয়েছে দেবী নন্দীকেশরীর মন্দির। এই অঞ্চলের পূর্ব নাম ছিল নন্দপুর (তবে বিতর্ক রয়েছে)। এখানে সতীর কণ্ঠহাড় পড়েছিল। এক সুবিশাল বটবৃক্ষের নিচে দেবী নন্দীকেশরীর মন্দির। দেবীর মূর্তিটি এখানে কালো পাথরের। তবে সিঁদুর চর্চিত হয়ে এটি এখন লাল বর্ণ ধারণ করেছে।