৯ নভেম্বর বিশ্বভারতীর অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে অনলাইনে একটি কোর্ট কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। সেখানেই বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই বছরের জন্য পৌষমেলা বন্ধের পক্ষে একমত হন সকলে। অনলাইনের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায় ও বিশ্বভারতীর অন্যান্য আধিকারিকরা। এদিকে পৌষমেলা বন্ধে হতাশা প্রকাশ করেছেন শান্তিনিকেতন ও তার পাশ্ববর্তী হস্তশিল্পী ও ব্যবসায়ীদের একাংশ। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি |

জনদর্পণ ডেস্ক : ধারণা শেষ পর্যন্ত সত্যি হল। এই বছর হচ্ছে না শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা। গত ৯ নভেম্বর অনলাইনে হওয়া একটি কোর্ট কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এরই সঙ্গে শান্তিনিকেতন তথা বিশ্বভারতীর চিরাচরিত ঐতিহ্যে কিছুটা ছেদ পড়ল বলে মনে করছেন শান্তিনিকেতন বাসিন্দারা।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারী এখনও বিশ্ব জুড়ে অব্যাহত। পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক করোনা আক্রান্তের গড় হার প্রায় ৩৪০০-৩৯০০। বীরভূমেও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এই পরিস্থিতিতে পৌষমেলা হওয়া মানেই লক্ষাধিক মানুষের একত্র সমাবেশ ঘটা স্বাভাবিক। তাতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাই অধিকাংশ পৌষমেলা প্রেমী ধারণা করেছিলেন এবছর হয়তো পৌষমেলা নাও হতে পারে। অবশেষে এই ধারণা-ই বাস্তবে রূপ নিল এদিন। তবে পৌষমেলা বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে হবে ‘পৌষ উৎসব’।
এদিন বিশ্বভারতীর অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে অনলাইনে একটি কোর্ট কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। সেখানেই বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই বছরের জন্য পৌষমেলা বন্ধের পক্ষে একমত হন সকলে। অনলাইনের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায় ও বিশ্বভারতীর অন্যান্য আধিকারিকরা।
এদিকে পৌষমেলা বন্ধে হতাশা প্রকাশ করেছেন শান্তিনিকেতন ও তার পাশ্ববর্তী হস্তশিল্পী ও ব্যবসায়ীদের একাংশ। শান্তিনিকেতনের এই পৌষমেলায় সামিল হতে বহু দূর-দূরান্ত থেকে সহস্রাধিক পর্যটক ছুটে আসেন। এর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলি থেকেও লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। বিভিন্ন হস্তশিল্পী থেকে শুরু করে হোটেল বা লজ ব্যবসায়ী সহ একাধিক ছোটো-বড়ো ব্যবসায়ী বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন এই পৌষমেলাকে। এবছর মেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা সকলেই প্রায় হতাশ। যদিও তাঁরা করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত মেনেও নিয়েছেন।
তবে পৌষমেলা এবারই প্রথম বন্ধ হল, তা নয়। এর আগেও বন্ধ হয়েছে দু’বার। ১৯৪৩-এর মন্বন্তর ও ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে পৌষমেলা বন্ধ রাখতে হয়েছিল।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৫০ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ (ইংরেজি ১৮৮৩ সালের ২১ ডিসেম্বর), বৃহষ্পতিবার বেলা তিনটে নাগাদ রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। এই দীক্ষা গ্রহণের দু’বছর পর অর্থাৎ ১৮৮৫ সালে ব্রাহ্মদের মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রথম পৌষমেলার সূচনা করেন কোলকাতার গেরিটির বাগান বাড়িতে। এরপর তিনি ১৮৮৮ সালে ৮ মার্চ শান্তিনিকেন আশ্রমের জন্য ট্রাস্ট ডিড গঠন করেন। তাতে বলা হয় ধর্মাভাব উদ্দীপনের প্রত্যেক বছর ট্রাস্টিগণ মেলা গঠনের উদ্যোগ নেবে। এই ডিড অনুসারে শান্তিনিকেতন ট্রাস্টি ১৮৯৪ সাল থেকে এই পৌষমেলা করে আসছে।