ধনতেরাস অবাঙালিদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা এই দিনটিতে বাড়ির মঙ্গল কামনায় বা সমৃদ্ধিলাভের জন্য আরাধনা করে ধনের দেবী লক্ষ্মী ও সম্পদের দেবতা কুবের-কে। তাই অনেকেই এদিন সোনা, রূপার গহনা বা কাঁসা, পিতলের সামগ্রী কেনে। অনেক ব্যবসায়ী এই দিনটিকে ‘শ্রীবৃদ্ধি’-র দিন হিসাবেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়। তবে অবাঙালিদের পাশাপাশি এখন বাঙালিরাও এই দিনটিকে বেশ উৎসাহ নিয়ে পালন করে। ‘ধনতেরাস’ নিয়ে একাধিক জনশ্রুতিও রয়েছে, যার অধিকাংশই পৌরাণিক। |

বিদিশা মিত্র : চলে এল সোনা কেনার দিন। ১৩ নভেম্বর এবছর ধনতেরাস। এই দিনটির দিকেই এবছর নজর ছিল বাঙালি ও অবাঙালির। কারণ জনশ্রুতি অনুযায়ী এই দিনেই মা লক্ষ্মী তার ভক্তদের ঘরে আসবে আর সেই সঙ্গে তার মনস্কামনাও পূরণ করবে। দিনটি সম্পদ কেনার দিক থেকে অবাঙালিদের কাছে বরাবরই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এখন বাঙালিরাও এই সম্পদের উৎসবে সামিল হয় বেশ উৎসাহ নিয়ে।
এই উৎসবের আর এক নাম ‘ধন্বন্তরী ত্রয়োদশী’। যাকে সংক্ষেপে ‘ধনতেরাস’ বলা হয়েছে। দীপাবলি বা কালী পুজোর ঠিক দুই দিন আগে পালিত হয় এই উৎসব। হিন্দু শাস্ত্রানুযায়ী কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে হয়ে থাকে দীপাবলি বা কালী পুজো। অর্থাৎ এর ঠিক দুই দিন আগে শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথি। এই তিথিকেই ধনতেরাসের নির্দিষ্ট দিন হিসাবে মানা হয়। এবছর ১২ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার পর শুরু হচ্ছে ত্রয়োদশী তিথি আর শেষ হচ্ছে ১৩ নভেম্বর বিকাল ৬টায়।
দিনটি অবাঙালিদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা এই দিনটিতে বাড়ির মঙ্গল কামনায় বা সমৃদ্ধিলাভের জন্য আরাধনা করে ধনের দেবী লক্ষ্মী ও সম্পদের দেবতা কুবের-কে। তাই অনেকেই এদিন সোনা, রূপার গহনা বা কাঁসা, পিতলের সামগ্রী কেনে। অনেক ব্যবসায়ী এই দিনটিকে ‘শ্রীবৃদ্ধি’-র দিন হিসাবেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়। তবে অবাঙালিদের পাশাপাশি এখন বাঙালিরাও এই দিনটিকে বেশ উৎসাহ নিয়ে পালন করে।
‘ধনতেরাস’ নিয়ে একাধিক জনশ্রুতিও রয়েছে, যার অধিকাংশই পৌরাণিক। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত রয়েছে রাজা হিমার ছেলে ও যমরাজের ঘটনা। সেখানে উল্লেখ পাওয়া যায়, কুষ্টি বিচারে জানা গিয়েছিল রাজা হিমার ছেলের বিয়ের চতুর্থ দিনের মাথায় সর্পদংশে মৃত্যু ঘটবে। ঘটনাটি তার নববধূও জানতো। নববধূ যমের হাত থেকে রক্ষা করতে ওই দিন তার স্বামীকে শোয়ার ঘরেই আটকে রাখে। আর দরজার বাইরে তার সমস্ত ধন-সম্পদ, গয়না জড়ো করে রাখে। ওই দিন সারারাত সমস্ত বাড়ি জুড়ে জ্বালিয়ে রাখা হয় মাটির প্রদীপ। স্বামীকে জাগিয়ে রাখতে তাকে গল্প আর গান শোনাতে থাকে। এদিকে যমরাজ স্বামীর প্রাণ নিতে এলে ধাতুর জৌলুস আর আলোর রোশনায় দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। রক্ষা পায় স্বামীর প্রাণ।
অন্য জনশ্রুতি বলছে, একবার দুর্বাশা মুনির অভিশাপে ‘শ্রীহীন’ হয়ে পড়ে স্বর্গ। রাক্ষসদের সঙ্গে লড়াই করে দেবতারা স্বর্গের ‘শ্রী’ ফিরে পায় ধনতেরাসের দিনে। এইভাবেই শ্রীবৃদ্ধি ও অশুভ শক্তি বিনাশের দিন হিসাবে পরিচিতি পায় ধনতেরাস। এছাড়াও পুরাণ অনুযায়ী, এই দিনই নাকি সমুদ্র মন্থনের ফলে সমুদ্রগর্ভ থেকে উঠে এসেছিল দেবী লক্ষ্মী।
যাইহোক, জনশ্রুতি যায় থাকুক, ধনতেরাসের দিন বাঙালি ও অবাঙালি উভয়েই পরিবারের মঙ্গল কামনায় সোনা বা সম্পদ কিনবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এবছর করোনা আবহে যেভাবে দেশ জুড়ে আর্থিক মন্দা চলছে, তাতে ধনতেরাসের বাজার কেমন যেতে পারে তার কোনও পূর্বাভাস এখনও পাওয়া যায়নি। কলকাতায় ১২ নভেম্বর ১০ গ্রাম সোনার গড় মূল্য ছিল ৫২,৫৪০ টাকা।