‘ব্লু মুন’-এর প্রসঙ্গে মানুষের মধ্যে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকে ‘ব্লু মুন’ মানেই ভেবে নিয়ে থাকেন নীল বর্ণের চাঁদকে। আসলে ‘ব্লু মুন’-এর সঙ্গে নীল বর্ণের কোনও সম্পর্ক নেই। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, একই মাসে দুবার পূর্ণিমা হলে, দ্বিতীয় পূর্ণিমাকে ‘ব্লু মুন’ বলা হয়। ২ বছর ৮ মাস অন্তর ‘ব্লু মুন’ দেখা গেলেও এবছরের ৩১ অক্টোবরের ‘ব্লু মুন’ অন্য ‘ব্লু মুন’-গুলির থেকেও বিরল। ১৯৪৪ সালের পর এধরণের ‘ব্লু মুন’ এদিন আবার দেখা যাবে। |

রঞ্জন সরকার : এই যুগটা ইন্টারনেটের। তাই ইন্টারনেটকে মানুষ একদণ্ডের জন্যেও কাছ ছাড়া করতে চায় না। আর চাইবে না-ইবা কেন, ইন্টারনেটের গতির জন্যেই তো মস্ত বড়ো এই পৃথিবীটাও ছোট্ট হয়ে ধরা দিয়েছে। যে কোনও খবর বা অজানা তথ্যের দ্রুত সন্ধান পেতে মানুষ এখন সবার প্রথমেই শরণাপন্ন হয় ইন্টারনেটের কাছে।
ইন্টারনেট জগতে সঠিক তথ্য অবশ্যই পাওয়া যায়। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে এই ইন্টারনেটই মানুষকে ভুল বার্তা দিয়ে থাকে। যদিও তার জন্য দায়ী অবশ্যই মানুষ। কারণ মানুষই ইন্টারনেট জগতে ওইসব ভুল বার্তা তুলে ধরে। এবিষয়ে সামান্য যাচায়-বাছায় না করলেই বিপদ। ভুল পথে চালিত হতে পারে মানুষের চিন্তা শক্তি।
কিছুদিন থেকেই ইন্টারনেটে ঘোরাঘুরি করছে ‘ব্লু মুন’-এর ব্যাপারটি। নির্দিষ্ট দিনে আকাশের চাঁদ নাকি নীল বর্ণ ধারণ করবে! আর এটাই নাকি ‘ব্লু মুন’। আসলে তা নয়। নীল বর্ণের চাঁদ কখনই হতে পারে না। তবে কখনও-সখনও লালচে প্রকৃতির হতে পারে। যা সূর্যের দৃষ্টিকোণের উপর নির্ভর করে।
তাহলে ‘ব্লু মুন’ কেন? সাধারণত ১টি ক্যালেন্ডারে ১২টি অমাবস্যা ও ১২টি পূর্ণিমা দেখা যায়। অর্থাৎ এই হিসাবে প্রতি মাসে একটি করে পূর্ণিমা হওয়ার কথা। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে একই মাসে দুটি পূর্ণিমা চলে আসে। যদি কোনও একটি ইংরেজি মাসে এরকম দুটি পূর্ণিমা দেখা দেয়, তবে দ্বিতীয় পূর্ণিমাকে ‘ব্লু মুন’ বা বাংলায় ‘নীল চাঁদ’ বলা হয়ে থাকে। যেমন এবছরের ১ অক্টোবর প্রথম পূর্ণিমা পেরিয়ে গিয়েছে, আর দ্বিতীয় পূর্ণিমা দেখা দেখে আগামী ৩১ অক্টোবর। অর্থাৎ ৩১ অক্টোবরের চাঁদকে ‘ব্লু মুন’ বলা হবে। কিন্তু এই ‘ব্লু মুন’-এর সঙ্গে নীল বর্ণের কোনও সম্পর্কই নেই।
তবে ‘ব্লু মুন’ কেন বলা হল? এর ইতিহাস কিন্তু খুব বেশি পুরনো নয়। আসলে ইংরেজিতে যে কোনও বিরল বিষয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে ‘Once in a blue moon’ প্রবাদ বাক্যটি ব্যবহার করা হয়। একই মাসে দুবার পূর্ণ গোলাকৃতির পূর্ণিমার চাঁদ দেখাও কম বিরল ঘটনা নয়। ‘স্কাই এন্ড টেলিস্কোপ’ নামের একটি ইংরেজি পত্রিকা ১৯৪৬ সালে প্রথম একই মাসের দ্বিতীয় পূর্ণিমাকে ‘ব্লু মুন’ নামে অভিহিত করেছিল।
‘ব্লু মুন’ সাধারণত ২ বছর ৮ মাস অন্তর ঘটে থাকে। এর আগের ‘ব্লু মুন’-টি দেখা গিয়েছিল ২০১৮ সালে। তবে এবারের ‘ব্লু মুন’-টি অন্যগুলির থেকেও বিরল। কারণ ২ বছর ৮ মাস অন্তর ‘ব্লু মুন’ দেখা গেলেও সব ‘ব্লু মুন’-ই যে পৃথিবীর সমস্ত অংশ থেকে একই দিনে দেখা যাবে, এমন কোনও কথা নেই। তবে ২০২০ সাল অর্থাৎ এবছরের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আগামী ৩১ অক্টোবরের ‘ব্লু মুন’ পৃথিবীর সমস্ত দেশ থেকেই চাক্ষুষ করা যাবে। এর আগে এরকম বিরল ‘ব্লু মুন’-এর দর্শন পাওয়া গিয়েছিল ১৯৪৪ সালে।