পিঁপড়ে : ক্ষুদ্র কিন্তু অবাক করে দেবে যে কাউকেই (ভিডিও সহ)

Advertisement
আদতে পিঁপড়ে ছোট্ট একটি প্রাণী। যাদের কখনই গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ তাদের আচার-আচরণ বা স্বভাব অবাক করে দেবে যে কাউকেই। প্রায় ১৩০ মিলিয়ন বছর ধরে এরা এই গ্রহে বাস করে চলেছে। উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর কিছু শীতল অংশ আর বরফ ঢাকা পর্বত চূড়াগুলি বাদ দিলে পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চলের সর্বত্রই এদের বিচরণ করতে দেখা যায়। যদি মানুষের সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে একজন মানুষ পিছু পিঁপড়ের সংখ্যা হতে পারে এক বিলিয়নেরও কিছু বেশি।

পিঁপড়ে : ক্ষুদ্র কিন্তু অবাক করে দেবে যে কাউকেই
Image by Roman Grac from Pixabay

সজয় পাল : পিঁপড়ের সঙ্গে পরিচয় হয়নি, এমন কাউকেই বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না এই পৃথিবীতেই। উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর কিছু শীতল অংশ আর বরফ ঢাকা পর্বত চূড়াগুলি বাদ দিলে পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চলের সর্বত্রই এদের বিচরণ করতে দেখা যায়। আর দেখা যাবে না-ই বা কেনও, এই বিশ্বে পিঁপড়ের সংখ্যাই যে সবচেয়ে বেশি। কীট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি মানুষের সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে একজন মানুষ পিছু পিঁপড়ের সংখ্যা হতে পারে এক বিলিয়নেরও কিছু বেশি।

আদতে পিঁপড়ে ছোট্ট একটি প্রাণী। যাদের কখনই গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ তাদের আচার-আচরণ বা স্বভাব অবাক করে দেবে যে কাউকেই। পৃথিবীতে এদের আবির্ভাব কিন্তু মানুষেরও আগে। প্রায় ১৩০ মিলিয়ন বছর ধরে এরা এই গ্রহে বাস করে চলেছে। যখন ডাইনোসরেরা দাপিয়ে বেড়াতো মাটির বুকে। বর্তমানে প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি প্রজাতি রয়েছে এদের।

শুনতে অবাক লাগলেও পিঁপড়েদের কিন্তু কোনও কান নেই। অথচ তাদের বধির বললেও ভুল বলা হবে। কারণ প্রতিটি পিঁপড়ের হাঁটুতে বিশেষ ধরণের সাব-জেনুয়াল অর্গান থাকে। যা দিয়ে তারা মাটিতে কম্পন সৃষ্টি করে এবং সেই কম্পন অনুভব করে নিজেদের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান করে। শুনতে আরও অবাক লাগবে, শ্বাসকার্য চালানোর জন্য পিঁপড়েদের কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট ফুসফুসও থাকে না। তাঁদের শরীরের দুই পাশে কিছু সূক্ষ্ম গর্তের সারি দিয়ে তারা শ্বাসকার্য চালায়।

খাদ্যের জন্যে তারা দিন-রাতই পরিশ্রম করে চলেছে। অথচ এদের কোনও ক্লান্তি নেই। দিন ও রাতের কোনও সময়েই তাদের ঘুমাতে দেখা যায় না। আবার খাদ্য সঞ্চয়ের জন্যেও এক অদ্ভুত শারীরিক গঠন রয়েছে এদের। অন্য সব প্রাণীর একটি পেট থাকলেও প্রতিটি পিঁপড়ের কিন্তু দুটি পেট থাকে। একটি পেট তারা নিজেদের খাবারের জন্য ব্যবহার করে। অন্যটি খাবার জমিয়ে রেখে অন্য পিঁপড়েদের খাবার জোগাতে সাহায্য করে।

ভিডিও

পিঁপড়েদের ক্ষমতা কিন্তু মানুষের সাধারণ কল্পনার থেকেও বেশি। এরা নিজেদের ভরের তুলনায় প্রায় ২০ থেকে ৫০ গুণ পর্যন্ত ভর বহন করতে পারে। এমনকি এশিয়া মহাদেশের বিশেষ কয়েক জাতের পিঁপড়ে নিজেদের ভরের প্রায় ১০০ গুণ পর্যন্ত ভর অনায়াসেই টেনে নিয়ে যেতে পারে। তাদের এই অফুরন্ত ক্ষমতার রহস্য সম্পর্কে কীট বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্য বড়ো প্রাণীদের তুলনায় পিঁপড়েদের পেশিগুলি অনেক বেশি ক্রস-বিভাগীয় অঞ্চলে ভাগ হয়ে থাকে। তাই এতটা পরিমাণ ভর তারা বহন করতে পারে।

একটি পিঁপড়ে পরিবারে সাধারণত রাণী, পুরুষ, শ্রমিক ও যোদ্ধা এই চার শ্রেণীর পিঁপড়ে থাকতে পারে। কিন্তু ব্রাজিলের অ্যামাজন অঞ্চলের এক বিশেষ প্রজাতির পিঁপড়ে পরিবারে কোনও পুরুষ পিঁপড়ে থাকে না। এক্ষেত্রে রাণী পিঁপড়ে পুরুষের সঙ্গে মিলন ছাড়ায় ক্লোনিং-এর মাধ্যমে অন্য পিঁপড়েদের জন্ম দেয়। তবে জন্ম দেওয়া সেই নতুন পিঁপড়েদের অধিকাংশই উভয় লিঙ্গ প্রকৃতির পিঁপড়ে হয়ে থাকে।

পিঁপড়েদের ডানা গজানো আর একটি অবাক করা বিষয়। আসলে শ্রমিক বা যোদ্ধা পিঁপড়েদের কখনও ডানা গজায় না। একমাত্র রাণী ও পুরুষ পিঁপড়েদেরই ডানা গজিয়ে থাকে। মিলনের সময় যা তাদের আকাশে উড়তে সাহায্য করে। অবশ্য কয়েক লক্ষ বছর আগে শ্রমিক ও যোদ্ধা পিঁপড়েদেরও ডানা ছিল। তারা আকাশেও উড়তে পারত। পরে ধীরে ধীরে তাদের ডানা বিলুপ্ত হয়ে যায়।

এই বিশ্বে মানুষই কিন্তু একমাত্র প্রাণী নয়, যারা খাদ্যের চাহিদা মেটাতে চাষ করে থাকে। লিফ-কাটার নামে এক জাতের পিঁপড়েও কিন্তু চাষের কাজ জানে। কীট বিজ্ঞানীরা এদের আবার চাষি পিঁপড়ে নামেও সম্বোধন করেছেন। তারা গাছের পাতা কেটে সার বেঁধে তাদের কলোনিতে নিয়ে আসে। তবে খাওয়ার জন্য নয়। চাষ করার জন্য। কলোনিতে কিছুদিন রেখে দেওয়ার পর ওই পাতার ওপর ফাংগাস জন্মাতে থাকে। যা তাদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে অনেকটাই সাহায্য করে।

Advertisement
Previous article‘সার্বজনীন দুর্গা পুজো’-র ইতিহাস কিন্তু খুব বেশি পুরনো নয়
Next articleকরোনার জন্য শুধু বাদুড়কে দোষ দেওয়া ঠিক নয়, দাবি বিজ্ঞানীদের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here