করোনার টিকাকরণ শুরু হলেও সবার ক্ষেত্রেই যে এই টিকা সমান কার্যকর হবে, এমন নাও হতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। শরীরে যখন কোনও জীবাণু আক্রমণ করে তখন রক্তের শ্বেত কণিকা তার বিরুদ্ধে লড়তে শুরু করে। এরা জীবাণুদের ধ্বংস করে পাঠিয়ে দেয় টি-সেলের কাছে। এই কণাগুলি ওই জীবাণুদের সম্পর্কে সমস্ত কিছু তথ্য নিখুঁতভাবে মনে রেখে দেয়। তাতে ওই ধরণের জীবাণু পরবর্তীকালে আবার শরীরে প্রবেশ করলে বুঝে নিতে পারে, তার বিরুদ্ধে পূর্বে কিভাবে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা হয়েছিল। |

অনলাইন পেপার : গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে ইতিমধ্যেই সমগ্র বিশ্ব জুড়ে ৪ কোটি ১১ লক্ষেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ১১ লক্ষ ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে ভারত এখন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ লক্ষ ৫১ হাজারেরও বেশি। এই সংখ্যা ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। তবে আশার কথা, বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি দাবি করেছেন, ভারতে করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঊর্ধ্বসীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। ধীরে ধীরে নিম্নমুখী হবে এই আক্রান্তের হার।
করোনা সংক্রমণের এই আবহে এখন সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন, ‘করোনার টিকা কবে পাবে মানব জাতি?’ উত্তর এখনও অনেকটাই অনিশ্চিত। তবে কোনও কোনও মহলের দাবি, সম্ভবত আগামী বছরের শুরুতেই মিলবে এই মারণ ভাইরাসের টিকা।
আসলে কোনও নতুন রোগের টিকা অতি দ্রুত বের করা কখনওই সম্ভব নয়। বিশেষ কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে এগোতে হয়। যে কোনও নতুন রোগের টিকা সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারযোগ্য করতে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তারপরেও সেই টিকা ঠিকভাবে কাজ করবে তারও নিশ্চয়তা অনেক ক্ষেত্রে থাকে না। তবে করোনার টিকার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত আশার খবরই শোনাচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের একাধিক সংস্থা এই টিকা নিয়ে কাজ করে চলেছে। কিছু সংস্থার টিকা ইতিমধ্যে তাদের ট্রায়ালও শেষ করার পথে। এখন শুধু টিকাকরণের অপেক্ষায় রয়েছে তারা।
তবে করোনার টিকাকরণ শুরু হলেও সবার ক্ষেত্রেই যে এই টিকা সমান কার্যকর হবে, এমন নাও হতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। সম্প্রতি বিবিসি সংবাদ মাধ্যমে এবিষয়ে বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। ওই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, একাধিক কারণে বয়স্ক ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
আসলে শরীরে যখন কোনও জীবাণু আক্রমণ করে তখন রক্তের শ্বেত কণিকা তার বিরুদ্ধে লড়তে শুরু করে। এই ধরণের শ্বেত রক্ত কণিকাদের বলা হয়ে থাকে ম্যাক্রোফেজ। এরা জীবাণুদের ধ্বংস করে পাঠিয়ে দেয় টি-সেলের কাছে। টি-সেল হল রক্তের আর একটি রোগ প্রতিরোধী কণা। এই কণাগুলি ওই জীবাণুদের সম্পর্কে সমস্ত কিছু তথ্য নিখুঁতভাবে মনে রেখে দেয়। তাতে ওই ধরণের জীবাণু পরবর্তীকালে আবার শরীরে প্রবেশ করলে বুঝে নিতে পারে, তার বিরুদ্ধে পূর্বে কিভাবে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা হয়েছিল। তৈরি হয় এন্টিবডি।
কিন্তু বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনিতেই শরীরে টি-সেলের সংখ্যা হয়ে থাকে সীমিত। তার উপর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টি-সেলের সংখ্যা আরও কমতে থাকে। যদিও পুরনো কোনও জীবাণু শরীরে আক্রমণ করলে বয়স্কদের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করে নিতে পারে। কিন্তু নতুন কোনও জীবাণু আক্রমণ করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অত দ্রুত তৈরি হতে পারে না।