বাংলায় যেভাবে জমিদার বাড়িতে শুরু হল মা দুর্গার আরাধনা

Advertisement
দুর্গোৎসব এখন বাঙালির প্রধান উৎসব হলেও এককালে এই উৎসব আয়োজন করার সামর্থ্য ছিল না সর্বসাধারণের। তখন শুধুউচ্চবিত্ত বা জমিদার বংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পর বাংলায় যখন ইস্ট ইন্ডিয়ার এক তরফা প্রভাব বাড়ে, কিছু হিন্দু জমিদার কোম্পানির সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায়। ইংরেজদের খুশি করতেই বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা শুরু হয়। তখন থেকেই জমিদারদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হয়ে উঠল দুর্গোৎসব। – ছবি : সংগৃহীত
the way the worship of durga started in the zamindar s house in bengal

রেমা মণ্ডল : মহালয়া পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। তবুও প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে এখনও ঢের দেরি। গোটা আশ্বিন পেরিয়ে কার্তিকের প্রথম সপ্তাহেই শুরু হবে মায়ের পুজো, শারদীয় দুর্গোৎসব। বাংলায় এ-উৎসব সবার। এই উৎসবে সামিল হতে ভেদাভেদ মানে না কেউই। এ যে বাঙালির সবচেয়ে বড়ো উৎসব। তবু এককালে এই উৎসব আয়োজন করার সামর্থ্য ছিল না সর্বসাধারণের। শুধু উচ্চবিত্ত বা জমিদার বংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল দীর্ঘদিন। পরে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে বাংলার অলিতে গলিতে।

১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পরে বাংলায় এক তরফা প্রভাব বাড়ে ইংরেজদের। সেসময়ে কিছু প্রভাবশালী হিন্দু জমিদার পরামর্শ ও আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে জড়িয়ে পড়ে ইংরেজদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে। সেই সঙ্গে নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে ও সু-সম্পর্ক বজায় রাখতে ইংরেজদের খুশি করাও ছিল জমিদারদের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করত জমিদারেরা।

ইংরেজদের কাছে তাদের কৃপা দৃষ্টি অক্ষুণ্ণ রাখতে এবং সমাজে নিজেদের বিত্ত-বৈভব প্রদর্শনের জন্য জমিদারদের কাছে দুর্গা পুজো হয়ে উঠেছিল প্রধান ধর্মীয় উৎসব। শোনা যায়, একবার নাকি কোনও এক জমিদার রানী ভিক্টোরিয়ার মুখের আদলে মা দুর্গার মূর্তির রূপ দিয়ে ইংরেজদের চমৎকৃত করতে চেয়েছিলেন। পরে বিত্তশালী ব্যবসায়ী ও জমিদারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দুর্গা পুজোর সংখ্যা এবং পুজো প্রণালীর বিভিন্ন আড়ম্বর।

সেসময় লর্ড কর্নওয়ালিস-এর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এবং কোলকাতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র হওয়ার কারণে গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চলে এক শ্রেণীর নব্য জমিদার ও ব্যবসায়ীদের আবির্ভাব ঘটেছিল। তারা প্রাচীন বনেদিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুর্গা পুজো বা দুর্গোৎসব শুরু করে। এই সব উৎসবে ইংরেজদের জন্য থাকত নাচ-গানের উন্মত্ততা, বাইজী নাচের আসর, কোথাও বা থাকত সুরা-পানীয়ের ব্যবস্থা। ওই সব নব্য জমিদার বা ব্যবসায়ীদের কাছে দুর্গোৎসব ছিল মূলত ইংরেজদের সন্তুষ্ট করার প্রধান উদ্দেশ্য।

কিন্তু এই সব উৎসবে তখনও পর্যন্ত সমাজের সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। দেবী দুর্গা তখনও হয়ে ওঠেনি সর্ব সাধারণের ‘মা’। পরে কিছু জমিদার পুরনো প্রথা ভেঙে ধীরে ধীরে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন দুর্গোৎসবকে। বলা বাহুল্য, এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন প্রজাবৎসল। তাঁরা নিয়ম করে দুর্গা পুজোর চারটে দিন সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে খাওয়াতেন, কেউ বা বস্ত্রদানের ব্যবস্থাও করতেন। এই চারটে দিন উৎসব প্রাঙ্গণে প্রজাদের ছিল অবাধ যাতায়াত। অধিকার ছিল প্রায় সমস্ত কিছুতেই। এমনকি প্রজাদের মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবস্থা থাকত যাত্রাপালা, কবিগানের। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়, এরকমই একজন প্রজাবৎসল জমিদার ছিলেন রাজচন্দ্র ও তাঁর স্ত্রী রানী রাসমণি।

Advertisement
Previous articleSRI পদ্ধতির ধান চাষে ভালো ফলনের সম্ভাবনা : আশায় বুক বাধছেন চাষিরা
Next articleটিডিসি : পৃথিবীর ভিতরেই যেন অন্য আর এক পৃথিবী

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here