একই মাসে দুটো অমাবস্যা পড়ে যাওয়ায় গোটা আশ্বিন মাসকেই এবছর মলমাস ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে ২০০১ সালে এমনটি হয়েছিল। তাই ৩১ ভাদ্র মহালয়া পেরিয়ে যাওয়ার পর ৫ কার্তিক অনুষ্ঠিত হবে মহাষষ্ঠী। তবে মা দুর্গার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় উপনিষদে। বাল্মীকি রামায়ণে দুর্গার উল্লেখ না থাকলেও ‘বামন পুরাণ’, ‘মার্কণ্ডেয় পুরাণ’, ‘কালিকা পুরাণ’, ‘দেবী ভাগবত’ প্রভৃতিতে রামচন্দ্রের দুর্গা পুজো করার কথা উল্লেখ রয়েছে। – ছবি : সংগৃহীত |
রেমা মণ্ডল : পেরিয়ে গেল মহালয়া। পিতৃপক্ষের সমাপ্তিতে সূচনা হয়েছে মাতৃপক্ষের। এবার প্রতীক্ষা শুধু দুর্গা পুজোর। যদিও এই প্রতীক্ষাটা একটু দীর্ঘই বলা চলে এবছর। কারণ মহালয়ার প্রায় এক মাসেরও কিছু বেশি সময় পর শুরু হচ্ছে দুর্গোৎসব। একই মাসে দুটো অমাবস্যা পড়ে যাওয়ায় গোটা আশ্বিন মাসকেই হিন্দু রীতিতে মলমাস ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে ২০০১ সালে এমনটি হয়েছিল। মলমাসে কোনও শুভ উৎসব আয়োজন করার রীতি নেই। এবছর আশ্বিন পেরিয়ে কার্তিকের ৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে ‘মহাষষ্ঠী’।
সে যাইহোক। মায়ের পুজোর এখনও ঢের দেরি। এই সুযোগে জেনে নেওয়া যাক দুর্গোৎসব সূচনার আদি কথা –
দুর্গা পুজো ভারতে বিশেষ করে পূর্ব ভারতের ধর্ম সংস্কৃতির একটি বিশেষ নিদর্শন। দুর্গা নামটি প্রথম পাওয়া যায় ‘উপনিষদ’-এ। ‘যাঞ্জিকা’ উপনিষদে ‘দুর্গা গায়েত্রী’-তে বলা হয়েছে “কাত্যায়নায় বিস্মহে কন্যাকুমারিং ধর্মাহি দুর্গি প্রচোদয়াৎ”। অর্থাৎ “আমরা কাত্যায়নকে স্মরণ করি। কন্যাকুমারীর ধ্যান করি। দুর্গি আমাদের সমৃদ্ধি বিধান করে।” এখানে দুর্গি শব্দটি দুর্গা শব্দের সমার্থক বলে গৃহীত। বলা বাহুল্য, এই দুর্গা মহিষাসুরমর্দিনী দশভুজা দেবী।
বাল্মীকি রামায়ণে রাবণ বধের সময় রামচন্দ্রের মা দুর্গার অকাল বোধনের কথা উল্লেখ করা না থাকলেও ‘বামন পুরাণ’, ‘মার্কণ্ডেয় পুরাণ’, ‘কালিকা পুরাণ’, ‘দেবী ভাগবত’ প্রভৃতি গ্রন্থে রামচন্দ্রের শরৎকালীন দুর্গা পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়।
মহাভারতের দেবী দুর্গা কৃষ্ণবর্ণা, চতুর্ভুজা ও চতুরাননা কুমারী। এখানে দুর্গাকে ‘মহিষাসুর নাশিনী’ বলা হয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবতে আগে রুক্মিণী শ্রীকৃষ্ণ-কে স্বামী রূপে পাওয়ার জন্য দেবী দুর্গার আরাধনা করেছিল।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের একটা তালিকা থেকে পাওয়া যায় বিভিন্ন দেব-দেবীগণ কীভাবে দেবী দুর্গার আরাধনা করেছে। তবে এই প্রসঙ্গে পৌরাণিক কাহিনীর বিস্তারিত বর্ণনা এই পুরাণে দেওয়া নেই। তবে কথিত হয়েছে, “প্রথমে পূজিতা সা চ কৃষ্ণেন পরমাত্মনা। / বৃন্দাবনে চ সৃষ্ট্যাদৌ গোলকে রাগমণ্ডলে। / মধুকৈটভভীতেন ব্রহ্মণা সা দ্বিতীয়তঃ। / ত্রিপুরপ্রেষিতেনৈব তৃতীয়ে ত্রিপুরারিণা।। / ভ্রষ্টশ্রিয়া মহেন্দ্রেন শাপাদুর্গাসসঃ পুরা। / চতুর্থে পূজিতা দেবী ভক্ত্যা ভগবতী সতী ।। / তদা মুনীন্দ্রৈঃ সিদ্ধেন্দ্রৈর্দ বৈশ্চ মুনিমানবৈঃ। / পূজিতা সর্ববিশ্বেষু বভূব সর্ব্বাতঃ সদা।।”।
অর্থাৎ “সৃষ্টির প্রথম যুগে পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ বৈকুণ্ঠের আদি বৃন্দাবনের মধু ও কৈটভ নামে দুই অসুরের ভয়ে ব্রহ্মা দ্বিতীয়বার দুর্গা পুজো করেছিল। ত্রিপুর নামে এক অসুরের সঙ্গে যুদ্ধে শিব বিপদে পড়ে তৃতীয়বারের জন্য দুর্গা পুজোর আয়োজন করেছিল। দুর্বাসা মুনির অভিশাপে লক্ষ্মীকে হারিয়ে দেবরাজ ইন্দ্র লক্ষ্মীহারা হয়ে চতুর্থবার দুর্গা পুজো করেছিল।”।
শাক্তধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ ‘দেবী ভাগবত পুরাণ’ অনুসারে মানসপুত্র মনু পৃথিবীর শাসক হয়ে ক্ষীরদসাগরের তীরে দুর্গার মাটির মূর্তি তৈরি করে পুজো করে।
তথ্য সূত্র : ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণের অনুবাদ