ক্যালকুলেটরের থেকেও দ্রুত হিসাব কষতে পারেন হায়দরাবাদের নীলকান্ত ভানু প্রকাশ। সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত হওয়া মেন্টাল ক্যালকুলেশন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জিতেছেন তিনি। এই প্রতিযোগিতায় ১৩টি দেশের ৩০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বয়স যখন ৫ বছর তখন থেকেই অঙ্কের খেলায় মেতে ওঠেন তিনি। – ছবি : সংগৃহীত |
অনলাইন পেপার : মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিতে ও কম সময়ে দ্রুত গতিতে অঙ্কের হিসাব মেলাতে এক সময়ে তৈরি হয়েছিল ক্যালকুলেটর বা গণকযন্ত্র। বলতে গেলে তখন থেকেই সমগ্র বিশ্ব অঙ্কের হিসাব কষতে একপ্রকার নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এই ক্যালকুলেটরের ওপর। আর তাই স্কুল বা কলেজ জীবন থেকে ছুটি নেওয়ার পর আর প্রয়োজন পড়ে না নামতা মনে রাখার। পাড়ার মুদির দোকান বা ব্যাঙ্ক অফিস, যে কোনও হিসাব ক্ষেত্রেই এখন অতি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ওই যন্ত্রটি।
কিন্তু হায়দরাবাদের ভানু প্রকাশের কাছে অবশ্য এই গণকযন্ত্রটির তেমন কোনও মূল্যই নেই। কারণ তিনি নিজেই একজন ‘মানব ক্যালকুলেটর’। হিসাব কষতে পারেন ক্যালকুলেটরের থেকেও দ্রুত গতিতে। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে অনুষ্ঠিত মেন্টাল ক্যালকুলেশন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জিতেছেন এই ভারতীয় যুবক। ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন বিশ্বের ১৩টি দেশের ৩০ জন প্রতিযোগী। সেখানে ভারত ছাড়াও ছিল ফ্রান্স, লেবানন, জার্মানি, ইংল্যান্ড, গ্রীসের অঙ্কবিদরা। ভারতের ভানু প্রকাশ সবাইকে হারিয়ে জিতে নিয়েছেন স্বর্ণপদক। এই প্রতিযোগিতাটিকে ‘মাইন্ড স্পোর্ট অলিম্পিয়াড’-ও বলা হয়ে থাকে। যা অলিম্পিকের তুলনায় কোনও অংশে কম নয়।
এই ভারতীয় অঙ্কবিদের পুরো নাম নীলকান্ত ভানু প্রকাশ। ডাক নাম ভানু। তাঁর বাড়ি হায়দরাবাদে। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে তিনি। বিবিসি সংবাদ সংস্থার একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বয়স যখন ৫ বছর, একটি দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পান তিনি। তখন প্রায় ১ বছর তাঁকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছে। তাঁর মা-বাবার ধারণা ছিল, হয়তো এই চোট তাঁকে সারা জীবনই মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিতে পারে। মূলত তখন থেকেই ভানু মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখতে অঙ্কের খেলায় মেতে ওঠেন।
ভানু এখন দিল্লির সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক ডিগ্রী করছেন। এখনও পর্যন্ত তিনি ৪টি বিশ্বরেকর্ড করেছেন। সেই সঙ্গে ৫০টির মতো লিমকা রেকর্ড রয়েছে তাঁর দখলে। তিনি বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরও জানিয়েছেন, উসেইন বোল্ট যখন দ্রুত দৌড়ায়, তখন কাউকেই বলতে শোনা যায় না, দ্রুতগতির গাড়ি বা প্লেন থাকা সত্ত্বেও এত দ্রুত গতিতে দৌড়ানোর কি প্রয়োজন। অঙ্কের বেলাতেও অনেকটা সেরকম। ক্যালকুলেটর রয়েছে বলেই যে মস্তিষ্কের ব্যবহার করতে হবে না, তার কোনও কথা নেই। অনেকে অঙ্ক কষতে ভয় পায়। তিনি এই ভয় থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে।