করোনা সংক্রমণের কারণে গোটা পৃথিবী জুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। এর মধ্যে অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। তাই বিকল্প আয়ের সন্ধান করতে বাধ্য হচ্ছেন স্কুলগুলির মালিকেরা। কেনিয়ার বেশ কয়েকটি স্কুল ইতিমধ্যেই বিকল্প আয়ের উৎস হিসাবে স্কুলরুমকেই মুরগীর খামারে পরিণত করে ফেলেছে। – ছবি : সংগৃহীত |
অনলাইন পেপার : করোনা সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। কারণ পৃথিবী জুড়ে এই মুহূর্তে প্রায় মার্চ মাস থেকে বন্ধ সমস্ত শিক্ষা ক্ষেত্র। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই নিজেদের পাঠ চালিয়ে যাচ্ছেন। সমর্থ অনুযায়ী অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থাতেও কোনও কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষা দানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে ব্যবস্থা মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি ক্ষেত্রে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা নিজেদের গৃহ শিক্ষকের কাছেই পঠন-পাঠন করছেন।
তবে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা দেখা দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে। করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি স্কুলগুলি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাকর্মীদের বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষাকর্মীদের বিনা বেতনেই ছুটি দিয়ে দিয়েছে। এই সব প্রতিষ্ঠানগুলির অর্থের জোগান আসে একমাত্র শিক্ষার্থীদের দেওয়া বেতন থেকেই। স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বেতন দিতে পারছেন না বা কিছু ক্ষেত্রে বেতন দিতে অস্বীকারও করছেন। তাই অর্থ জোগানের অভাবে শিক্ষাকর্মীরা বিনা বেতনেই দিন কাটাচ্ছেন।
যদিও এই কঠিন সমস্যার মোকাবিলা সরকারি শিক্ষা কর্মীদের করতে হচ্ছে না। তারা ঘরে বসেই মাসের শেষে নিয়ম করে মাস-মাহিনা পেয়ে যাচ্ছেন।
তবে কেনিয়ার কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল বন্ধ থাকার সময়েই বিকল্প আয়ের পথ খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দু-একটি স্কুল আবার ইতিমধ্যেই সেই পথের সন্ধানও পেয়ে গিয়েছে। বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, কেনিয়ার এরকমই একটি বেসরকারি স্কুল মুয়ে ব্রেথেন-এর ক্লাস ঘরেই চাষ হচ্ছে মুরগীর। প্রায় ৫ মাস আগে এই ঘরেই শিক্ষার্থীদের হইচই শোনা যেত।
এই একই পরিস্থিতি সেদেশের সেন্ট্রাল কেনিয়ান বেসরকারি স্কুলেরও। আর্থিক চাহিদা পূরণে স্কুলের মালিক জোসেফ মাইনা স্কুলেই মুরগীর খামার খুলতে বাধ্য হয়েছেন। জোসেফ মাইনা দুঃখের স্বরে বিবিসি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁর স্কুলের অনেক শিক্ষক নাকি তাঁকে ফোন করে বলছেন তাঁর কোনও কাজে তাঁরা আসতে পারেন কিনা। জোসেফ জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাঁদের নিজেদেরই পর্যাপ্ত খাবার নেই।
কেনিয়ার ওপর আর একটি স্কুল রোকা প্রিপারেটরি আর্থিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে স্কুলের খেলার মাঠেই খামার তৈরি করেছে। যেখানে এক সময় শিক্ষার্থীরা অবসর সময়ে হইহই করে খেলাধুলা করত, এখন সেখানে সবুজ সবজিতে ভরে গিয়েছে।
এমনিতেই কেনিয়ার ৫ ভাগের ১ ভাগ শিশু শিক্ষা লাভ করে সেদেশের বেসরকারি স্কুলগুলিতে। এই স্কুলগুলির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এক বিশাল সংখ্যক শিক্ষাকর্মী। স্কুলগুলি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের বেতনও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কেনিয়ার প্রাইভেট স্কুল অ্যাসোশিয়েশনের প্রধান নির্বাহী পিটার নডরো বিবিসি-কে জানিয়েছেন, সেদেশের প্রায় ৩ লাখ বেসরকারি স্কুলের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ স্কুলই তাদের শিক্ষাকর্মীদের বিনা বেতনে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। আবার এরই মধ্যে ১৩৩টি স্কুল সম্পূর্ণ বন্ধও হয়ে গিয়েছে।