বাংলার আলপনা নিয়ে বিশেষ কর্মশালা শান্তিনিকেতনের সৃজনীতে

Advertisement

কোনও শুভ কর্মের শুভারম্ভে মঙ্গল কামনায় বা সুদৃশ্যতা বজায় রাখতে বহুযুগ ধরে বঙ্গদেশে আলপনার গ্রহণযোগ্যতা অনেক। আলপনার চিত্রশিল্প সবচেয়ে বেশি নজরে পড়ে গৃহস্থের দেবালয়ে। যে কোনও পুজো-পার্বণে আলপনা আঁকার চল রয়েছে এই বাংলায়। এবার আলপনার ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে একটি বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে শান্তিনিকেতনের সৃজনী শিল্পগ্রামে। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি

special workshop on alpana of bengal at santiniketan 2

বিজয় ঘোষাল : আলপনা গ্রাম-বাংলার সহজ সরল চালচিত্রের একটি ক্ষণস্থায়ী লোকচিত্র। যে কোনও শুভ কর্মের শুভারম্ভে মঙ্গল কামনায় বা সুদৃশ্যতা বজায় রাখতে আলপনার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। পুরুষদের তুলনায় মহিলা মহলেই এর কদর সবচেয়ে বেশি এবং দক্ষতা অনুযায়ী গর্বের বিষয়ও বটে। উৎসব অনুযায়ী এই আলপনার আবার প্রকারভেদও রয়েছে। গ্রাম-বাংলার প্রায় সব উৎসবেই মঙ্গল সূচক চিত্র রূপে আলপনা আজও চিরন্তন।

     আলপনা যেমন গৃহস্থ জীবনের আঙ্গিক, সেই সঙ্গে লোকশিল্পেরও একটি অংশ হিসাবে প্রচলিত রয়েছে বহুযুগ ধরে। যা আজও গ্রাম-বাংলার অধিকাংশ ঘরে এর উপস্থিতি নজরে পড়ে। সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় গৃহস্থের দেবালয়ে, যেখানে নিত্যদিন ঈশ্বরের আরাধনা চলে।

     দেবতার আশীর্বাদ কামনা হিসাবে আলপনা দেওয়ার রীতি চলে আসছে আবহমানকাল ধরে। উপজাতি সম্প্রদায়, বিশেষ করে সাঁওতাল সমাজে এই আলপনা একটি অপরিহার্য অংশ। সাঁওতাল পাড়ার প্রতিটি গৃহের দেওয়ালে খড়িমাটির আঁচড়ে আলপনার প্রতিটি রেখায় তুলে ধরা হয় তাঁদের সমাজজীবনের প্রতিচ্ছবি।

special workshop on alpana of bengal at santiniketan
শিল্পী রবি বিশ্বাস

     বাংলার এই ঐতিহ্যগত লোকশিল্পকে তুলে ধরতে এক অভিনব কর্মশালার আয়োজন করল পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের শাখা বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনের সৃজনী শিল্পগ্রাম। এই কর্মশালাটি শুরু হয়েছে গত ১১ আগস্ট থেকে, যা চলবে আগামী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত। আলপনা শিল্পী বিধান বিশ্বাস এবং রবি বিশ্বাস এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে সহযোগী হিসাবে রয়েছেন আরও ৩ জন সহযোগী শিল্পী।

     প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শান্তিনিকেতনের পিয়ারসন পল্লীর আলপনা শিল্পী রবি বিশ্বাস খুব ছোটো থেকেই আলপনা আঁকার সঙ্গে যুক্ত। পরে ক্রমশই তিনি এই শিল্পে অত্যন্ত পটু হয়ে ওঠেন। এখন তাঁর আলপনা আঁকার খ্যাতি পৌঁছে গিয়েছে ভারত ছাড়িয়ে সুদূর বিদেশের মাটিতেও। প্যারিস, অস্ট্রেলিয়া, হাঙ্গেরি প্রভৃতি দেশগুলিতে তিনি বাংলার এই সুপ্রাচীন আলপনা শিল্পকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন। বর্তমানে তিনি ও তাঁর পরিবার পেশাগতভাবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

special workshop on alpana of bengal at santiniketan 3
শিল্পী বিধান বিশ্বাস

     এই কর্মশালায় সবার মিলিত প্রয়াসে আলপনার আঁকাবাঁকা সৃজনশীলতায় সেজে উঠছে সৃজনী শিল্পগ্রামের বাংলার লোকঘর। তবে কি কারণে এবারের এই কর্মশালার আয়োজন তা জানতে চাওয়ায় শান্তিনিকেতনের সৃজনী শিল্পগ্রামের আধিকারিক অমিত অধিকারী জানালেন, আলপনা একটি লোকচিত্র। বর্তমান প্রজন্মের কাছে পূর্বের মতো আলপনার সমান আবেদন ও কদর যেন থাকে, সেইজন্যই এই বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করেছেন তাঁরা।

Advertisement
Previous articleস্বাধীনতার এত বছর পরেও পুরোপুরি আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে পারেনি ভারত
Next articleলাল গ্রহ ‘মঙ্গল’ রাতের দিকে সবুজ হয়ে ওঠে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here