নতুন শিক্ষা নীতিতে ঘাটতি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে

Advertisement
গত ২৯ জুলাই কেন্দ্রীয় সরকার যে নতুন শিক্ষানীতির কথা ঘোষণা করেছে, তা বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর শিক্ষাক্ষেত্রে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এই নতুন নীতিতে পূর্বের ১০+২ শিক্ষা পর্বের পরিবর্তে ৫+৩+৩+৪ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এই নতুন শিক্ষানীতিতে ইতিবাচক দিকগুলির পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক দিকও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। – ছবি : সংগৃহীত

the deficit in the new education policy are still there

অমিত কুমার দাস : দীর্ঘ ৩৪ বছর পর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে এল বৈপ্লবিক পরিবর্তন। গত ২৯ জুলাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভায় কেবিনেট মন্ত্রক এই নতুন শিক্ষানীতিকে মঞ্জুর করেছে। ৩৪ বছরের পুরনো শিক্ষানীতিকে (NPE) ১৯৮৬ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের সময়ে শেষবারের জন্য পূর্ণাঙ্গ পরিবর্তন করা হয়েছিল। তবে ১৯৯২ সালেও কিছুক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়।
     কিন্তু এবারে ভারতের গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে, একথা বলা যেতেই পারে। এই শিক্ষানীতি পরিবর্তনের জন্য যে জাতীয় খসড়া কমিটি গঠন করা হয়েছিল তার সভাপতিত্ব করেন কে. কস্তূরীরঞ্জন (ইসরো-র প্রাক্তন সভাপতি)। এবারের জাতীয় শিক্ষানীতির প্রথম ধাপে কেবিনেট মন্ত্রক মানব সম্পদ উন্নয়নের নাম পরিবর্তন করে শিক্ষা মন্ত্রক করেছে। এই নীতি মূল্যায়নের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল প্রাক্ স্কুল শিক্ষা, বিদ্যালয় শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা।
     এবারের নতুন নীতিতে প্রাক্ স্কুল শিক্ষা ও বিদ্যালয় শিক্ষাকে ১০+২ শিক্ষা পর্বের বদলে ৫+৩+৩+৪ ব্যবস্থায় ভাগ করেছে। এই নীতিতে শিশুদের স্কুলে ভর্তির আগের শিক্ষা থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণকে প্রথম ধাপ হিসাবে ৫ বছরের রাখা হয়েছে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী এই ৩ বছরের ধাপকে করা হয়েছে প্রস্তুতি পর্ব এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত রাখা হয়েছে মাঝারি পর্বের শিক্ষার জন্য। পরের ধাপ অর্থাৎ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রদের ৪ বছরের আওতায় আনা হয়েছে। এই ৪ বছরে মোট ৮টি সেমিস্টারের মাধ্যমে ছাত্রদের মূল্যায়ন করা হবে।
     উচ্চশিক্ষায় স্নাতকদের ৩ অথবা ৪ বছরের ও স্নাকোত্বর পর্ব ১ বা ২ বছরের করা হয়েছে। এই নতুন শিক্ষানীতিতে ‘এমফিল’ তুলে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও উচ্চশিক্ষায় আলাদাভাবে ইউজিসি (UGC) ও এআইসিটিই (AICTE) থাকবে না। এক্ষেত্রে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিমড্ (DEEMED) বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে একই ছাতার তলায় আনা হবে। গ্রেডের নিরিক্ষে কলেজগুলিকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে এই খসড়াতে।
the deficit in the new education policy are still there 1

নতুন শিক্ষানীতির ইতিবাচক দিক :
১. নতুন শিক্ষানীতিতে প্রাক্ প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের মানসিক চাপ কমানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ৩ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত শিশুদের প্রারম্ভিক জটিলতা এবং পরবর্তী শিক্ষায় প্রারম্ভিক গুনাগুণকে লক্ষ্য করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
২. প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ভাষা ও গণিতে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে।
৩. তৃতীয়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে বিশেষ পরীক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
৪. ছাত্রদের কারিগরি শিক্ষার ওপর অনেক বেশি করে জোর দেওয়া হয়েছে।
৫. বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্রদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে।
৬. এই নতুন শিক্ষানীতির ফলে ‘বিদ্যালয় শিক্ষা’ পর্বে কলা বিভাগ ও বিজ্ঞান বিভাগের মধ্যে দূরত্ব অনেকটাই কমে যাবে। এক্ষেত্রে ছাত্ররা বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলির পাশাপাশি কলা বিভাগের বিষয়গুলি নিয়েও পড়াশুনা করতে পারবে।
৭. উচ্চশিক্ষায় কোনও ছাত্র যদি কোনও কারণে মাঝপথে পড়াশুনা থামিয়ে দেয়, পরে ইচ্ছা করলে সে আবার সেখান থেকেই তার পড়াশুনা শুরু করতে পারবে। এখানে ছাত্রদের স্ব-মূল্যায়নেরও সুযোগ থাকছে।
৮. শিক্ষাক্ষেত্রে GDP ৬ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে, যেটা শিক্ষাকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়নে সহায়ক হবে।
     আসল কথা নতুন শিক্ষানীতিতে কমিটির মুখ্য উদ্দেশ্য হল, ছাত্রদের মৌলিক চিন্তাকে উৎসাহ দেওয়া এবং ভাষা ও কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া। যা ভবিষ্যতে ছাত্রদের কর্মসংস্থানের পথকে প্রসারিত করবে।
নতুন শিক্ষানীতির নেতিবাচক দিক :
     এই খসড়া কমিটি যে শিক্ষানীতি নির্ধারণ করেছে, তা প্রায় অনেকটাই মার্কিন শিক্ষানীতির অনুরূপ বলা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মার্কিন শিক্ষানীতিকে অনুসরণ করা হলেও মার্কিন শিক্ষাকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামোকে মোটেও অনুসরণ করা হয়নি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, পরিকাঠামোগত দিক থেকে ভারতীয় পরিবেশের শিক্ষাকেন্দ্রগুলি মার্কিন শিক্ষাকেন্দ্রগুলির থেকে বেশ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তাই এদেশে শিক্ষাকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামোর উন্নতি না ঘটিয়ে এবং উপযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ না করে এই নতুন শিক্ষানীতি লাগু করা হলে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। নতুন শিক্ষানীতির সঙ্গে শিক্ষাকেন্দ্রগুলির বর্তমান পরিকাঠামো কোনও মতেই খাপ খায় না।
     অপরদিকে সরকারের এই নতুন শিক্ষানীতি দেশের শিক্ষাকে বে-সরকারিকরণের দিকে অনেকটাই এগিয়ে দেবে। ফলে অধিক সংখ্যায় নতুন নতুন সঠিক পরিকাঠামো যুক্ত বে-সরকারি স্কুল মাথা গজিয়ে উঠবে। এতে দুঃস্থ পরিবারের সন্তানরা শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে পারে।
     কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বৃদ্ধি করলেও এতে রাজ্য সরকারগুলিরও দায়বদ্ধতা থেকে যায়। তাই ভবিষ্যতে এই শিক্ষানীতি কতটা ফলপ্রসূ হবে তাতেও প্রশ্নচিহ্ন থেকে যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশের কর্মসংস্থানের নীতি না পালটে শিক্ষানীতি পালটানোর অর্থই হল ‘গাছের গোড়ায় জল না দিয়ে আগায় জল ছিটানো’।
Advertisement
Previous articleমৃত্যুর পরবর্তী সময়ে নক্ষত্রদের অবস্থা কী হতে পারে?
Next articleলুপ্তপ্রায় মাছ বাঁচানোর উদ্যোগ নিতে হবে গ্রাম-বাংলার মানুষদেরকেই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here