স্বাধীনতা দিবসের দিনই আচমকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে অবসর ঘোষণা করলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচের পর তাঁকে আর ২২ গজে দেখতে পাওয়া যায়নি। কিন্তু তাঁর এই অবসর ঘোষণা উইকেট রক্ষকের ক্ষেত্রে বিশাল এক শূন্যস্থান তৈরি হয়ে গেল। যদিও তাঁর অবর্তমানে লোকেশ রাহুল ও ঋসভ পন্থকে সেই দায়িত্ব সামলাতে দেখা যাচ্ছে। – ছবি : সংগৃহীত |
জনদর্পণ ডেস্ক : ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়া অভিযানের মাঝ পথেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে আচমকা অবসর নিয়েছিলেন তিনি। আর এবার গত ১৫ আগস্ট অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসের দিনই কোনও রকম পূর্বাভাস ছাড়ায় নিঃশব্দে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার (ওয়ান-ডে ও টি-টুয়েন্টি) থেকে পুরোপুরি অবসর ঘোষণা করলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। আর সেই সঙ্গে বিশাল এক শূন্যতাও তৈরি হয়ে গেল ভারতীয় ক্রিকেটে উইকেটের পিছনের অংশটিতে। যদিও কোনও শূন্যস্থান কখনওই শূন্য থাকে না, পূর্ণতা পায় পরক্ষণেই। কিন্তু নামটা যে ধোনি! তাই এই শূন্যস্থান পূরণ করা বেশ কঠিনই হবে বলে মনে করছেন অধিকাংশ ধোনি ভক্ত থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও।
ধোনির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ দিয়ে। সে সময় ভারতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন বর্তমান বিসিসিআই বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। লম্বা চুলের সেই তরুণ মারকাটারি ক্রিকেটারটি যে একদিন ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করবে হয়তো তার পূর্বাভাস তখনই পেয়ে গিয়েছিল সমগ্র বিশ্ব। উইকেটের পিছনে বিশ্বস্ত হাত আর ব্যাট হাতে গগনচুম্বী ছক্কা হাঁকিয়ে সেই সময় থেকেই ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীদের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন তিনি।
তারপর পুরোটাই ইতিহাস। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর ৩ বছরের মধ্যেই পেয়ে গেলেন অধিনায়কত্বের পদ। তাঁর প্রথম অধিনায়কত্ব শুরু হয় ২০০৭ সালে প্রথম টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে। ধোনি এমন একটা বছরে অধিনায়ক হয়েছিলেন, যে বছরটিকে ভারতকে ওয়ান-ডে বিশ্বকাপের প্রথম পর্বেই বিদায় নিতে হয়। ক্রিকেট মহলের আনাচে-কানাচে ঘুরছিল ভারতীয় ক্রিকেটের দুঃসময়ের কথা। যদিও ধোনির নেতৃত্বে সেই বছর টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ বিজয় আবার ভারতীয় ক্রিকেটে সুসময়ের ইঙ্গিত নিয়ে আসে।
ধোনির নেতৃত্বে এরপর একের পর এক সাফল্য পেতে থাকে ভারত। ধোনিই ক্রিকেট বিশ্বের একমাত্র অধিনায়ক যিনি আইসিসির ৩টি বড়ো ট্রফি (টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ, ওয়ান-ডে বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) অর্জন করতে পেরেছেন। তবে তাঁকে ক্রিকেট বিশ্ব মনে রাখবে ‘ঠাণ্ডা মাথার অধিনায়ক’ হিসাবে। নিঃশব্দে বিশেষ উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগে ধোনি যেভাবে ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করে গিয়েছে, তা এককথায় বিরল বলা চলে। আর তাই ক্রিকেট বিশ্ব তাঁকে নাম দিয়েছে ‘ক্যাপ্টেন কুল’।
শুধু অধিনায়ক হিসাবেই নয়, ধোনির সাফল্য ব্যাটিং-এও। ভারতীয় ক্রিকেটের ৭ নাম্বার জার্সির এই প্রাক্তন অধিনায়ক যখনই ব্যাট হাতে ২২ গজে পদার্পণ করেছে, দর্শক মহল প্রত্যাশা করেছে তাঁর হ্যালিকপটার শটকে। ধোনির নিজস্ব ঢঙ্গে সেই ছক্কা বহুদিন মনে রাখবে ক্রিকেট দর্শক। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল পর্যন্ত ধোনি খেলে ফেলেছেন ৩৫০টি ওয়ান-ডে, ৯০টি টেস্ট ও ৯৮টি টি-টুয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ওয়ান-ডে ও টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল যথাক্রমে ১৮৩ (নট আউট) ও ২২৪।
কিন্তু আচমকা ৩৯ বছর বয়সী এই তারকা ক্রিকেটারের অবসর ঘোষণা হয়তো অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। যদিও ২০১৯ বিশ্বকাপের পর তাঁকে আর দেখতেই পাওয়া যায়নি ২২ গজে। তাঁর অবসর ঘোষণার জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছিল তখন থেকেই।
তবে তাঁর এই অবসর ঘোষণা ভারতীয় ক্রিকেটের উইকেটের পিছনের বিশ্বস্ত অংশটিতে বিশাল এক শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে, এটা মানতেই হবে। কারণ এদিক থেকে দেখলে ধোনির উত্তরসূরি হিসাবে এখনও সঠিকভাবে কাউকেই নির্দিষ্ট করা হয়নি। ২০১৪ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর বঙ্গ তরুণ ঋদ্ধিমান সাহা-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল উইকেট রক্ষকের। অস্বীকার করার উপায় নেই, ঋদ্ধিমান এই সময়ের অন্যতম সেরা উইকেট রক্ষক। কিন্তু বর্তমান দ্রুতগতির ক্রিকেট বিশ্বে নিখুঁত হাতে কিপিং সামলানোর পাশাপাশি ব্যাট হাতেও সাফল্য দেখাতে হয়। ঋদ্ধিমান বেশ কয়েকটা ম্যাচে ভালো পারফরমেন্স করলেও এখনও পর্যন্ত ব্যাট হাতে ধোনির যোগ্য উত্তরসূরি হয়ে উঠতে পারেননি।
টি-টুয়েন্টি আর ওয়ান-ডে ক্রিকেটেও তৈরি হয়েছে বিশাল শূন্যস্থান। এখানেও ধোনির উত্তরসূরি হিসাবে থেকে যাচ্ছে বড়ো শূন্যতা। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর ধোনির অবর্তমানে উইকেট রক্ষক হিসাবে দেখা গিয়েছে পালাক্রমে লোকেশ রাহুল ও ঋসভ পন্থকে। এই দুজনকেই প্রতিভাধর উদীয়মান ব্যাটসম্যান মনে করে ক্রিকেট মহল। লোকেশ রাহুল তাঁর ব্যাটিং-এ ইতিমধ্যেই তার ছাপ কিছুটা রাখতে পেরেছেন। কিন্তু ঋসভ পন্থ এখনও তেমনভাবে দাগ কাটতে পারেননি। তাই ধোনির যোগ্য উত্তরসূরি কে হবেন এই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের অনেককে বলতে শোনা যাচ্ছে, ধোনির শূন্যতা শুধু ধোনিই পূরণ করতে পারে।