মহাকাশে ভাসমান এমন একটি গ্রহাণুর সন্ধান পেল নাসা, যার মধ্যে গচ্ছিত রয়েছে সোনা, প্লাটিনাম, হিরে, নিকেল, সিলিকার মতো দামি ধাতব বস্তু। ওই গ্রহাণুটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘১৬ সাইকি’। মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝে অবস্থান করছে সে। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে তার সময় লাগে প্রায় ৫ বছর। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ওই গ্রহাণুটিতে যে পরিমাণ মূল্যবান ধাতুর আকর রয়েছে, তার মূল্য হতে পারে ১০ হাজার কোয়াড্রিলিয়ন পাউন্ড। – ছবি : সংগৃহীত |
রঞ্জন সরকার : তবে কি ‘এলডোরাডো’-র খোঁজ পাওয়া গেল মহাকাশে? আর এতেই উচ্ছ্বসিত নাসার গবেষকেরা। পৃথিবীবাসীর কাছে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে মূল্যবান যে সমস্ত ধাতু সামগ্রী, অর্থাৎ সোনা, প্লাটিনাম প্রভৃতি, এই রকমই একগুচ্ছ মূল্যবান ধাতুর ভাণ্ডার নিয়ে নিঃশব্দে মহাকাশে ঘুরে চলেছে একটি গ্রহাণু। নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যার নাম দিয়েছেন ‘১৬ সাইকি’।
এই ‘১৬ সাইকি’-কে নিয়ে এক সময়ে অনুসন্ধান চালিয়েছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। গবেষণায় নাসার হাতে যে তথ্য এসে পৌঁছিয়েছে, তা বেশ অবাক করার মতোই ব্যাপার। কারণ তাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ওই গ্রহাণুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মহামূল্যবান হিরে, প্লাটিনাম, সোনা, নিকেল, সিলিকা প্রভৃতি। নাসার হিসাব অনুযায়ী বর্তমান বাজার মূল্যে যার দাম হতে পারে আনুমানিক ১০ হাজার কোয়াড্রিলিয়ন পাউন্ড। অর্থাৎ পৃথিবীর সমস্ত মানুষের মধ্যে যদি ওই পরিমাণ অর্থ বিলিয়ে দেওয়া যায়, তবে জনপ্রতি প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০ হাজার কোটি টাকারও কিছু বেশি। নাসা জানিয়েছে, ওই গ্রহাণুটির ওজন চাঁদের মোট ওজনের মাত্র ১ শতাংশ প্রায়।
যদি এটাই ঠিক হয়, ‘১৬ সাইকি’-কে তাহলে এখনও পর্যন্ত আবিস্কৃত সৌরজগতের সবচেয়ে দামি গ্রহাণু বলতে হবে। ‘১৬ সাইকি’ এখন অবস্থান করছে মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের ঠিক মাঝের বেল্টে। সৌরজগতের সিংহভাগ গ্রহাণুর অবস্থানও এই বেল্ট অঞ্চলে। এরা এই অঞ্চল দিয়েই নির্দিষ্ট নিয়মে নিজস্ব কক্ষপথে বছরের পর বছর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। ১৬ সাইকিরও নিজস্ব কক্ষপথ রয়েছে। পৃথিবী যেমন নিজের কক্ষপথ ধরে ৩৬৫ দিন বা ১ বছরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ১৬ সাইকি অবশ্য সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে একটু বেশিই সময় নেয়। কারণ সূর্য থেকে তার দূরত্ব পৃথিবীর তুলনায় কিছুটা বেশি। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে তার সময় লাগে প্রায় ৫ বছর।
নাসা আরও জানাচ্ছে, তারা গ্রহাণুটির দিকে সব সময়ই নজর রেখে চলেছে। সেখানকার ধাতুকে কিভাবে পৃথিবীতে নিয়ে আসা যায়, তারও চেষ্টা চলছে। ২০২০ সালের প্রথম দিক থেকেই সেই চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে।
এখানে বলতেই হয়, ১৬ সাইকির মতো লক্ষ লক্ষ গ্রহাণু ছড়িয়ে রয়েছে মহাকাশ জুড়ে। কোন গ্রহাণুতে কি পরিমাণে মূল্যবান ধাতুর আকর রয়েছে, তার কিছুই প্রায় পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সন্ধান করে উঠতে পারেননি এখনও। আগামীতে কি এই সন্ধান প্রক্রিয়া আরও জোর কদমে চালিয়ে যেতে চাইবে নাসা? যদি গ্রহাণুগুলি থেকে ওই সমস্ত মূল্যবান ধাতু নিয়ে আসা সম্ভব হয়, তাহলে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে অর্থাভাব অনেকটাই লাঘব হবে বলা চলে।
বাস্তবে সোনার শহর ‘এলডোরাডো’-র কোনও অস্তিত্ব আছে কি নেই, সেটা নিয়ে এখন না ভাবলেও চলবে। মহাকাশে ভাসমান এই জলজ্যান্ত ‘এলডোরাডো’ সম গ্রহাণুটি নিয়ে অন্তত আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বৈকি।