২০২০ সালের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা যে করোনা, সেটা আর আলাদা করে বলার কোনও কারণ নেই। এই করোনা থেকে রক্ষা পেতে কয়েক মাস ধরে চলেছে লকডাউন। ভেঙে পড়েছে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা। কিছু অঞ্চলে লকডাউন শিথিল করলে মানুষ আবার পূর্বের মতো তাঁর পুরনো কর্মস্থলে যোগ দিতে ছুটে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু মানুষ মেনে চলছে না প্রশাসনিক বিধিনিষেধ। নিজের এলাকার কয়েকজনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এলেও তারা সচেতন হচ্ছে না। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি |
জনদর্পণ ডেস্ক : সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল এতদিন। লকডাউনের পর ক্রমশই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরছিল বীরভূম জেলার আমোদপুরে। বাজারেও নিত্যদিনের মতো ভিড় বাড়ছিল। ঠিক এমন অবস্থায় সম্প্রতি এই আমোদপুরেই বেশ কয়েকজনের শরীরে করোনা সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। শুধু আমোদপুর নয়, পার্শ্ববর্তী গ্রামের কিছু বাসিন্দার শরীরেও করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। আমোদপুরের পার্শ্ববর্তী গ্রাম মেলানপুরে একাধিক ব্যক্তির শরীরে প্রথম নমুনা পরীক্ষায় মিলেছে করোনা ভাইরাস। প্রশাসনিক উদ্যোগে বেশ দ্রুততার সঙ্গেই গোটা গ্রামটি ঘিরে দেওয়া হয়েছে ব্যারিকেটে। সতর্ক নজর রাখাও হচ্ছে সব সময়ের জন্যে, যাতে কোনওভাবেই পরবর্তী রিপোর্ট নেগেটিভ না আসা পর্যন্ত ওই গ্রামের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির সংযোগ না ঘটে।
কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। এলাকা জুড়ে এতজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের দেখা মিললেও এলাকাবাসীর মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনিতেই সাপ্তাহিক লকডাউনের দিনগুলি বাদ দিলে অন্য দিনগুলির সারাদিনই আমোদপুরের বাজারে মানুষের ভিড় থাকে মাত্রা ছাড়া। সকালের সবজি বাজারে সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায়। মানুষের যাওয়া-আসা চলতেই থাকে। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে প্রশাসনিক বিধিনিষেধ মেনে চলা এক্ষেত্রে একান্তই কাম্য। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অনেক দূরের ব্যাপার, অনেককে মুখে মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে না।
কিছু মানুষ অবশ্য সচেতনতার আশ্রয় নিতে চান। তাঁরা যথেষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজারে যাওয়া-আসা করেন। কিন্তু অসচেতন মানুষগুলির ব্যবহারে তাঁরাও চেষ্টা করে সচেতন থাকতে পারছেন না।
২০২০ সালের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা যে করোনা, সেটা আর আলাদা করে বলার কোনও কারণ নেই। এক প্রকার সমগ্র বিশ্বই অচল হয়ে পড়েছে এই কোভিড-১৯ এর জন্য। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা দিয়েছে অর্থনীতি আর শিক্ষা ব্যবস্থায়। লকডাউনের জন্য পৃথিবী জুড়ে কয়েক কোটি মানুষ কর্মস্থান থেকে দূরে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। কিছু মানুষ আবার চিরদিনের জন্য তাঁর এতদিনের কর্মস্থানকেও হারিয়ে ফেলেছেন। যদিও কিছু অঞ্চলে বর্তমানে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। আর সেই সুযোগে মানুষ তাঁর পুরনো কর্মস্থানেও যোগ দিতে শুরু করেছেন। শুরু হয়েছে পূর্বের মতো ব্যবসা-বাণিজ্যও। যদিও আগের মতো দ্রুতগতিতে নয়। কিছুটা ঢিলে তালে।
তবুও সব কিছুই করতে হচ্ছে করোনার ছোঁয়া বাঁচিয়ে। মানুষ কতদিন আর করোনার ভয়ে ঘরে লুকিয়ে থাকতে পারবে। পেট যে বড়ো বালাই! কোনও কথায় যে শুনবে না সে। তবে যা করার, সবটাই করতে হচ্ছে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে। প্রশাসনের পক্ষে প্রতিটি মানুষকে আলাদাভাবে নজরদারী করা সম্ভব নয়। মানুষ নিশ্চয় এতদিনে বুঝে গিয়েছে করোনার গতি প্রকৃতি। সে কিভাবে ধীরে ধীরে লোকচক্ষুর আড়ালে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে, তা হয়তো এখন আর কারোরই অজানা নেই।
তবু কিছু মানুষ এখনও সচেতন হল না। হাটে-বাজারে এদের উপস্থিতি এখনও অধিক সংখ্যায়। প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মীরা বারংবার বুঝিয়ে আসছেন, নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরুনো থেকে বিরত থাকতে। প্রয়োজনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাইরে বেরোলেও মাস্ক ব্যবহার অতি আবশ্যক। কিন্তু কে শুনছে তাঁদের কথা? সমাজের ওই শ্রেণীর মানুষেরা নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে পথে-ঘাটে। মুখে অধিকাংশেরই কোনও মাস্ক নেই। তারা মনে করছে, করোনা যেন কোনও বিপদই নয় সমাজের কাছে। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন সচেতন ব্যক্তিরা। তাঁরা প্রশাসনিক নির্দেশ মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করলেও অসচেতন ব্যক্তিদের জন্য নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারছেন না বলেই মনে করছেন।