জর্জ ফ্লয়েড-কে নির্মমভাবে হত্যা করার পর যখন চতুর্দিকে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে, তখন আবারও একবার ওটা বেঙ্গার বন্দি জীবনের ঘটনা সামনে এসে পড়ল। এটিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনা। ১৯০৪ সালে ওটা বেঙ্গা-কে কঙ্গো থেকে অপহরণ করে নিয়ে আসা হয়। ১৯০৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তাঁকে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয় ব্রংস চিড়িয়াখানায়। পরে সমালোচনার ঝড় উঠলে তাঁকে ২৮ সেপ্টেম্বর মুক্তি দেওয়া হয়। – ছবি : সংগৃহীত |
অনলাইন পেপার : কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে যে এক সময়ে পশুর মতো ব্যবহার করা হত, তার সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ হয়তো ওটা বেঙ্গা-র ঘটনা। ঘটনাটি ছিল বিংশ শতাব্দীর একেবারে গোড়ার দিকের। সে সময়ে পশ্চিম বিশ্বের বিভিন্ন কাগজে ওটা বেঙ্গার সঙ্গে কুৎসিত ব্যবহারকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। সম্প্রতি মার্কিন মুলুকে জর্জ ফ্লয়েড-কে নির্মমভাবে হত্যা করার পর আবারও একবার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। আর সেই প্রসঙ্গেই ওটা বেঙ্গার ঘটনাটি পুনরায় সামনে এসেছে।
কে ছিলেন এই ওটা বেঙ্গা? বিবিসি সংবাদ মাধ্যমে এই বিষয়ে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখান থেকে জানা যাচ্ছে, ১৯০৪ সালে কঙ্গো থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন দাস ব্যবসায়ী স্যামুয়েল ভার্নার অপহরণ করে নিয়ে আসেন কৃষ্ণাঙ্গ ওটা বেঙ্গা-কে। পরে ১৯০৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক শহরের সবচেয়ে বড়ো চিড়িয়াখানা ব্রংস-এ একটি বানরের খাঁচায় প্রদর্শনীর জন্য বন্দি করে রাখা হয় তাঁকে। এই অবস্থায় তাঁকে ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাখা হয়েছিল।
২০ দিনে খাঁচায় বন্দি অবস্থায় তাঁর প্রধান কাজ ছিল দর্শকদের মনোরঞ্জন করা। প্রথম দিকে দর্শকরা বুঝেই উঠতে পারেনি যে তিনি অন্য সবার মতো একজন সাধারণ মানুষ। অনেকে তাঁকে বানর বলেও মনে করেছে। তাঁর গায়ে ছিল না কোনও পোশাক। তাঁর দাঁত দেখতে দর্শকরা বেশি আগ্রহী ছিল। কারণ তাঁর দাঁত ছিল অত্যন্ত তীক্ষ্ণ।
চিড়িয়াখানার দলিলে উল্লেখ রয়েছে, তখন তাঁর উচ্চতা ছিল ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি আর ওজন ছিল ১০৩ পাউন্ড। সে সময় শুধুমাত্র তাঁকে দেখার জন্যই দর্শকের ভিড় জমতো চিড়িয়াখানায়। নিউইয়র্ক টাইমস-এও সেসময়ে লেখালিখি হয়েছে তাঁকে নিয়ে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এমনও দিন গিয়েছে, তাঁর খাঁচার সামনে এক সঙ্গে ৫০০ লোকের ভিড় জমা হত। সবচেয়ে মজা পেত শিশুরা। তারা ওটা বেঙ্গা-কে দেখে হাসাহাসি করত, মজা করত।
ওটা বেঙ্গা-কে বন্দি করার এই ঘটনাটি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন প্রান্তে ওই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন যুক্তি দিতে শুরু করে। তারা যুক্তি দেখায়, আসলে ওটা বেঙ্গা-র নিরাপত্তার কথা ভেবেই তারা এই ব্যবস্থা করেছে। পরে তারা ২৮ সেপ্টেম্বর ওটা বেঙ্গা-কে মুক্তি দেয়।
যদিও বহু বছর ধরে তাঁকে বন্দি করে রাখার বিষয়টি বিভিন্নভাবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ লুকানোর চেষ্টা করে। পরে ওই ঘটনার ১১৪ বছর পর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। এই সোসাইটিটি বর্তমানে ব্রংস চিড়িয়াখানা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, একজন কৃষ্ণাঙ্গকে বিনা কারণে বন্দি করে রাখার জন্য ক্ষমা চাইতে এত বছর সময় লেগে গেল ওই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের?
পরে অবশ্য ওটা বেঙ্গা আর কখনও নিজের দেশে ফিরতে পারেনি। ‘স্পেক্টাকল : দ্য এসটনিশিং লাইফ অফ দা বেঙ্গা’ থেকে জানা যায়, চিড়িয়াখানা থেকে মুক্তির পর তিনি আশ্রয় পান হওয়ার্ড কালার্ড অরফান অ্যাসাইলাম-এ। এটি ছিল নিউইয়র্কে কৃষ্ণাঙ্গদের একটি আশ্রয়স্থল। ১৯১০ সালে তিনি চলে যান ভার্জিনিয়া। এখান থেকে তাঁর নিজের দেশে ফিরতে চাইলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় তিনি আর ফিরতে পারেননি। দীর্ঘদিন বিষণ্ণতায় ভুগে ১৯১৬ সালের মার্চ মাসে নিজের বুকে গুলি করে তিনি আত্মহত্যা করেন।