বর্ষায় জল বাড়লেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় গোটা গ্রাম

Advertisement
পাহাড়পুর গ্রামের একেবারেই গা ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে বক্রেশ্বর নদী। এই নদীর ওপর নির্মিত কজওয়েটি বর্ষার মরশুমে সামান্য জল বাড়লেই পুরোপুরি ডুবে যায়। তখন যাতায়াত করতে দারুণ অসুবিধা ভোগ করেন পাহাড়পুর সহ তার পার্শ্ববর্তী অন্যান্য গ্রামগুলির বাসিন্দারা। এই সময় ওই গ্রামগুলি এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রুজি-রুটির অন্যতম স্থান আমোদপুরের সঙ্গে। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি

when the water level rises in the rainy season the whole village becomes isolated 1

জয়দেব দেবাংশী : বর্ষার মরশুম এলেই বীরভূম জেলার পাহাড়পুর গ্রাম সহ তার পার্শ্ববর্তী অন্যান্য গ্রামগুলির বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। কারণ পাহাড়পুরের একেবারেই ধার ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে বক্রেশ্বর নদী। বর্ষায় একটু জল বাড়লেই নদীর ওপরে নির্মিত যোগাযোগের একমাত্র কজওয়ে (কংক্রিটের বাঁধানো সাঁকো)-টি পুরোপুরি ডুবে যায়। তখন ওই গ্রামগুলি সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আমোদপুরের সঙ্গে। যাতায়াতের জন্য জল না কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় গ্রামগুলিকে। কজওয়ের ওপর সামান্য জল কমলেই কেউবা যাতায়াত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেও জীবন বাজি রেখে। পা পিছলে গেলেই স্রোতের টানে তলিয়ে যেতে হবে নদীর গর্ভে।
     বীরভূম জেলার আমোদপুর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরেই অবস্থান করছে অমরপুর গ্রাম-পঞ্চায়েতের পাহাড়পুর গ্রামটি। এই গ্রামের একেবারেই ধার দিয়ে বয়ে গিয়েছে বক্রেশ্বর নদী। আমোদপুর-সিউড়ি রুটের কামারশাল মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বেঁকে গিয়েছে কামারশাল-গড়গড়িয়া রুট। কামারশাল মোড় থেকে ৪ কিলোমিটার এগিয়েই এই রুটের ওপরে পড়ছে পাহাড়পুর গ্রাম। আবার বক্রেশ্বর নদীটি পাহাড়পুরের আগেই এই রুটকে আড়াআড়ি বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ফলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য এই অঞ্চলে বক্রেশ্বর নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে একটি কজওয়ে (কংক্রিটের বাঁধানো সাঁকো)।
     শুধু পাহাড়পুর নয়, এই কজওয়ের ওপর দিয়েই নিত্যদিন যাওয়া-আসা করেন অমরপুর গ্রাম-পঞ্চায়েতের অন্য গ্রামগুলির বিশেষ করে অমরপুর, কানাইপুর, মধুপুর, বীরসিংহ, ইকড়া, ভালুকসুন্দা এবং আমোদপুর গ্রাম-পঞ্চায়েতের শশীধরপুর, মহুলাশূল, কয়েরবুনি গ্রামগুলির বাসিন্দারা। কিন্তু বর্ষায় বক্রেশ্বর নদীতে জল বেড়ে গেলে কজওয়ের ওপর দিয়েই সেই জল প্রবাহিত হয়। তখন পুরোপুরি আমোদপুরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ওই গ্রামগুলি। যদিও যোগাযোগের অন্য ঘুরপথও রয়েছে। কিন্তু তার দূরত্ব বেশ অনেকটাই।
     অবস্থানগত সুবিধার জন্য বীরভূমে আমোদপুর গ্রামটির গুরুত্ব অনেক। বোলপুর, সিউড়ি, সাঁইথিয়া বা লাভপুর শহর সহ পার্শ্ববর্তী এক বিরাট অঞ্চলের সঙ্গে অতি দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এই গ্রামটি। যদিও নামেই গ্রাম, কিন্তু শহরের সঙ্গে অনেকক্ষেত্রেই মিল রয়েছে এর। তাই ‘গঞ্জ’ বললেও ভুল বলা হবে না একে। এক সময়ে এখানেই স্থাপন করা হয়েছিল সরকারি ‘সুগার মিল’, চিনি উৎপাদনের জন্য। আমোদপুর গ্রামটি সাঁইথিয়া ব্লকের অধীনস্থ। আবার এই ব্লকটির অবস্থানও আমোদপুরের অন্তস্থলেই। হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ সহ জেলা সদর শহর সিউড়ি, বোলপুর, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট এবং অন্য কাছের বা দূরের বড়ো শহরের সঙ্গে সড়কপথ ও রেলপথের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন ছাড়াও অন্যান্য সুবিধালাভের জন্য পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির পাশাপাশি বহু দূরের গ্রামগুলিও আমোদপুরের ওপর এক প্রকার নির্ভর করে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই।
     পূর্বে বক্রেশ্বরের ওপর কোনও কজওয়ে ছিল না। তখন পাহাড়পুর ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দারা আমোদপুরে যাতায়াতের জন্য বক্রেশ্বর নদী পার হতে তালগাছের ডিঙি ব্যবহার করতেন। নদীর এই অংশ চওড়ায় প্রায় ২২৫ ফুট। পরে উন্নয়নের জোয়ারে ১৯৮৬ সালে নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল বর্তমান কজওয়েটি। কজওয়েটি উদ্বোধন করতে এসেছিলেন তৎকালীন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি ব্রজ মুখোপাধ্যায়।
     তখন এই অঞ্চলে ভারী গাড়ি চলাচলের রমরমা ছিল না। পরে যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে যাতায়াত বেড়ে যায়। ভারী গাড়িও চলতে শুরু করে। ফলে কজওয়েটিও দুর্বল হতে থাকে। নিচের দিকে কিছুটা বসেও যায়। এখন সামান্য ভারী বর্ষা হলেই বক্রেশ্বরে জল বেড়ে গিয়ে কজওয়েটিকে ডুবিয়ে দেয়। তাই বর্ষার এই ক’দিন পাহাড়পুর ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও রুজিরোজগারে দারুণ ব্যাঘাত ঘটে। গ্রামবাসীদের কথায়, এরকম অবস্থায় এই অঞ্চলে বক্রেশ্বর নদীর ওপর একটি নতুন ব্রিজের খুবই দরকার। কিন্তু প্রশাসনের কোনও গুরুত্বই এদিকে নেই। অথচ গ্রাম উন্নয়নের প্রচার জোর কদমে এগিয়ে চলেছে।
Advertisement
Previous articleকয়েক হাজার বছর ধরে মশাদের মধ্যে রক্তপানের স্বভাব তৈরি হয়েছে
Next articleকরোনা প্রতিরোধে টি-সেল অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here