Advertisement
যে কোনও মহাজাগতিক বস্তুকে খুব কাছ থেকে দেখতে পাওয়া মানেই উত্তেজনার কোনও শেষ থাকে না। ১৪ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত একেবারেই খালি চোখে দেখতে পাওয়া যাবে ‘নিয়োওয়াইজ’ ধূমকেতুকে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে ২২ জুলাই। তারপর ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকবে। এটিকে আবার দেখা যাবে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ বছর পর। – ছবি : সংগৃহীত
|
রঞ্জন সরকার : মহাজাগতিক ভ্রাম্যমাণ নতুন অতিথিকে দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে সমগ্র পৃথিবীবাসী। ইতিমধ্যে তাকে স্বাগত জানাতেও তৈরি তারা। কারণ এ অতিথি এবার চলে গেলে আবার অপেক্ষা করতে হবে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ বছর। এখানে অতিথি মানে ধূমকেতু। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘নিয়োওয়াইজ’ বা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘সি/২০২০-এফ-৩’।
এরকম নামকরণের অবশ্য কারণ রয়েছে। সাধারণত যে কোনও মহাজাগতিক বস্তুর নামকরণ করা হয় তার আবিস্কারকের নামে। গত ২৭ মার্চ আগত এই ধূমকেতুটি আবিস্কার করেছে নাসার একটি উপগ্রহ, ‘নিয়োওয়াইজ’। তাই সি/২০২০-এফ-৩ ধূমকেতুটির নামকরণও ওই উপগ্রহটির নামেই করা হয়েছে। এর আগেও এরকম নাম রাখা হয়েছে অনেকগুলি ধূমকেতুর। যেমন ‘হেল-বপ’ বা ‘হ্যালি’ ধূমকেতু দুটিই তাদের আবিস্কারক বিজ্ঞানীদের নামেই নাম রাখা হয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে নিয়োওয়াইজ অবশ্য কোনও রক্ত-মাংসের বিজ্ঞানী নয়। এটি নাসার পরিচালিত একটি উপগ্রহ মাত্র।
জানা যাচ্ছে, আগত এই ধূমকেতুটিকে খালি চোখেও দেখতে পাওয়া যাবে। যা নিয়ে কম উত্তেজনাও তৈরি হয়নি বিজ্ঞানী মহলে। ১৪ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত উত্তর গোলার্ধে এটিকে দেখতে পাওয়া যাবে উত্তর-পশ্চিম আকাশে ঠিক সূর্য ডোবার পর দিগন্তরেখার কাছে। তারপর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে করতে সে আবার দূরে সরে যাবে পৃথিবী থেকে। যদিও আগস্টেও তাকে দেখা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে বাইনোকুলারের প্রয়োজন পড়বে।
১৪ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত তাকে পর্যবেক্ষণ করা এতটাই নিখুঁত হবে যে তার পশ্চাৎ প্রান্তের ‘ঝাঁটা’-র মতো লেজটিকেও স্পষ্ট নজরে পড়বে। তার লেজটি আসলে কিছুই নয়, জমে থাকা বরফ, ধূলিকণা আর টুকরো পাথরের সমষ্টি। সূর্যের প্রায় অনেকটাই কাছে চলে আসার ফলে বাষ্পীভূত হয়ে লম্বা আকার ধারণ করেছে। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয়েছে ‘কমেট টেল’। নিয়োওয়াইজ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে ২২ জুলাই। তখন পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব হবে প্রায় ১০ কোটি ৩০ লক্ষ কিলোমিটার।
৩০ জুলাই তাকে দেখতে পাওয়া যাবে সপ্তর্ষিমণ্ডলের ঠিক নিচে। তখন নিয়োওয়াইজ-এর ফিরে যাওয়ার অন্তিম মুহূর্ত। কিন্তু যাবে কোথায়? আসলে সে ফিরে যাবে মঙ্গল, গ্রহাণুপুঞ্জ, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন এমনকি প্লুটো পেরিয়ে হিমশীতল অন্ধকার অন্য এক ‘বরফ রাজ্যে’। এই এলাকাটির নাম জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা রেখেছেন ‘ওরট ক্লাউড’। এখানেই যত রাজ্যের ধূমকেতুদের বসবাস। ঠিক নিয়ম করেই এই অঞ্চল থেকে এগিয়ে এসে একের পর এক ধূমকেতু সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে আবার ফিরে যায়।
পূর্বে পৃথিবীবাসীর কাছে ধূমকেতুর পরিচয় ছিল ‘ঝাঁটাতারা’ নামে। আসলে তার লেজটি অনেকটা ঝাঁটার মতোই বটে। এই ‘ঝাঁটাতারা’-র আবির্ভাব হলেই মনে করা হতো, হয়তো কোনও বিপদ বুঝি এগিয়ে এসেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে শুরু হয়ে যেত পূজার্চনা বা জাগ-যজ্ঞ। কুসংস্কারকে যারা এখনও আঁকড়ে ধরে রেখেছে, তাদের অনেকেই এখন প্রশ্ন তুলছে, করোনাময় এই অশান্ত পৃথিবীতে আগত ‘নিয়োওয়াইজ’ নতুন কোনও বিপদ সংকেত বয়ে আনছে নাতো? বিজ্ঞানের পথে চলা সমাজ সংস্কারকরা অবশ্য সে সবে তেমন পাত্তা দিতে নারাজ। তারা চাইছে আপাতত এই কদিন মেঘমুক্ত থাকুক আকাশ। ‘নিয়োওয়াইজ’-কে এত কাছ থেকে খালি চোখে উপভোগ করার এটাই সেরা সুযোগ।
Advertisement