Advertisement
নাল কাঁকড়ার নীল রক্তের গুরুত্ব চিকিৎসা বিজ্ঞানে অপরিসীম। আর্থ্রোপোডা শ্রেণীর এই প্রজাতিটি প্রায় ৪৫ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে টিকে রয়েছে। তাই জীবন্ত জীবাশ্মও বলা হয় একে। করোনা মহামারীর এই সময়ে ভ্যাকসিন আবিস্কারে নাল কাঁকড়ার নীল রক্ত অমৃতের সন্ধান দিতে পারে। – ছবি : সংগৃহীত
|
অনলাইন পেপার : দেখতে কাঁকড়ার মতো, অথচ জীববিজ্ঞানীদের মতে এটি আসলে কোনও কাঁকড়া নয়। প্রজাতিতে এটি এক প্রকার কাঁকড়াবিছে। তবে স্থলভাগের কাঁকড়াবিছে নয়, বরং সমুদ্রের কাঁকড়াবিছে। এটি দেখতে অনেকটা ঘোড়ার খুড়ের মতো। তাই নাম দেওয়া হয়েছে হর্সস্যু ক্রাব (Horseshoe Crab) বা নাল কাঁকড়া। তবে অবাক করা ব্যাপার, এদের পূর্বপুরুষের জন্ম ডাইনোসর যুগে। অর্থাৎ প্রায় ৪৫ কোটি বছর ধরে এদের প্রজাতি এখনও পৃথিবীতে টিকে রয়েছে। জীববিজ্ঞানীরা তাই মজা করে এদেরকে জীবন্ত জীবাশ্মও বলে থাকেন।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া যে কোনও আর্থ্রোপোডা শ্রেণীর প্রাণীদের রক্তে সাধারণত তামার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের রক্তের লোহিত কণিকায় যেমন লোহার উপস্থিতিতে তৈরি হয় হিমোগ্লোবিন। যা অক্সিজেন সরবরাহ করে। ঠিক তেমনি আর্থ্রোপোডাদের রক্তে তামার উপস্থিতিতে তৈরি হয় হিমোসায়ানিন। এটিও তাদের দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে। এই প্রকার রক্তের রঙ হয় নীল। যেহেতু নাল কাঁকড়াও এক ধরণের আর্থ্রোপোডা শ্রেণীর প্রাণী। তাই এদের রক্তের রঙও নীল হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তবে এদের এই নীল রক্ত কোনও স্বাভাবিক রক্ত নয়। এর রয়েছে অশেষ ক্ষমতা। যা অন্য যে কোনও সম-গোত্রীয় আর্থ্রোপোডা থেকে এদেরকে একেবারেই আলাদা করে দিয়েছে। নাল কাঁকড়ার শ্বেতরক্ত কণিকায় রয়েছে এক ধরণের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ। যাকে বলা হয় ‘অ্যামিবোসাইট’। এই রাসায়নিকটি যে কোনও ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে প্রায় ৪৫ মিনিটের মধ্যে আটকে রাখতে সক্ষম।
তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে নাল কাঁকড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। বিবিসি সংবাদ মাধ্যম সূত্র অনুযায়ী, চিকিৎসা ক্ষেত্রের যে কোনও সরঞ্জাম, টিকা বা ওষুধ ধমনীর ভেতর প্রবেশ করানোর সময় সেগুলি জীবাণুমুক্ত কিনা তা পরখ করার জন্য প্রয়োজন হয় নাল কাঁকড়ার নীল রক্তের। ৭০-এর দশক থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর ব্যবহার হয়ে আসছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অমূল্য রতন হওয়ায় নাল কাঁকড়ার এই নীল রক্তের দামও বেশ অনেকটাই চড়া। বর্তমান বাজার দর হিসাবে এক লিটার এই রক্তের দাম প্রায় ১৫ হাজার ডলার।
রক্ত সংগ্রহও করতে হয় অনেক সাবধানতার সঙ্গে। সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করা নাল কাঁকড়ার হৃদপিণ্ডের কাছে ছিদ্র করে সেখান থেকে বিশেষ উপায়ে রক্ত বের করে নেওয়া হয়। প্রতিটি নাল কাঁকড়া থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয় প্রায় ৩০ শতাংশ। তারপর তাদেরকে পুনরায় সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে প্রতিবারই অসংখ্য নাল কাঁকড়াকে মৃত্যুবরণ করতে দেখা যায়।
নাল কাঁকড়ার নীল রক্তের এই বিশেষ গুণ থাকার জন্য করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কারেও যে এটি ‘অমৃত’-এর সন্ধান দিতে পারে, তা অনেক গবেষকই ইতিমধ্যে আশা প্রকাশ করেছেন। এনিতেই সারা বিশ্ব জুড়ে করোনা বেশ দাপটের সঙ্গেই সংক্রমণ ঘটিয়ে চলেছে। এই মুহূর্তে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভ্যাকসিন আবিস্কার ছাড়া কোনওভাবেই যে করোনাকে দমন করা সম্ভব নয়, তাও এতদিনে বুঝে গিয়েছে সমগ্র পৃথিবীবাসী। ভ্যাকসিন আবিস্কার করতেও দিন-রাত এক করে দিচ্ছেন একাধিক গবেষক দল। এবার নাল কাঁকড়ার এই বিশেষ গুণ করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কারে যে গতি বাড়াবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
Advertisement