Advertisement
ইউএফও বা এলিয়েনদের নিয়ে কম জল্পনা-কল্পনা হয় না সমগ্র বিশ্ব জুড়ে। এক দলের ধারণা, ইউএফও পৃথিবীতে ইতিমধ্যেই যাওয়া-আসা শুরু করে দিয়েছে। অন্য দল আবার সেই দাবি তৎক্ষণাৎ ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে সত্যি বলতে কি, ইউএফও বা এলিয়েনদের অস্তিত্বের জোরালো প্রমাণ এখনও পর্যন্ত কোনও জ্যোতির্বিজ্ঞানীর হাতে নেই। – ছবি : সংগৃহীত
|
রঞ্জন সরকার : ইউএফও (UFO) বা আনআইডেন্টিফাই ফ্লাইং অবজেক্ট (Unidentified Flying Object) অথবা আরও ভালো করে বললে ভিনগ্রহীর মহাকাশ যান এই বিশ্বে কার প্রথম নজরে এসেছে, তা কোথাও নথিভুক্ত নেই। তবে অনেকেই দাবি করেছেন, তিনি ইউএফও দেখেছেন। এই দেখা পৃথিবীর নির্দিষ্ট কোনও একটি প্রান্ত থেকে নয়, পৃথিবী জুড়ে ভিন্ন ভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্ত থেকে। পরে কোথা থেকে এর দেখা মিলল তার রেকর্ড নথিভুক্ত হতে শুরু হয়।
অবশ্য এ নিয়ে কম তামাশার শিকার হননি দেখতে পাওয়া মানুষটি। হাসির ফোয়ারাও উঠেছে অনেকবার। যাঁরা ইউএফও-কে বিশ্বাস করেন, তাঁরা চুপিচুপি মেনে নিয়েছেন। চুপিচুপি মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায়ও তাঁদের ছিল না। কারণ জোরালো কোনও প্রমাণ তখনও পর্যন্ত তাঁদের হাতে নেই। আর অপরদিকে যাঁরা ইউএফও-তে অবিশ্বাসী, তাঁরা বিনা কারণে খোলা বাজারে অপদস্থ পর্যন্ত করে ছেড়েছে ইউএফও-তে বিশ্বাসীদের।
তবে যেদিন মার্কিন এয়ারফোর্স প্রমাণ দিল, কম করে দুটো ইউএফও-কে ধাওয়া করার, সেদিন থেকে অবশ্য অবিশ্বাসীদের মুখ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। সমালোচনাও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
কিন্তু যাঁরা ইউএফও দেখেছেন বলে দাবি করেছেন, তাঁরা সকলেই যে সত্যি সত্যি ইউএফও দেখেছেন, তা নাও হতে পারে। আবার অনেকের ‘হলিউসন’-ও হতে পারে। তবে সকলে নন। গত ৩ জুন এরকমই একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছিল। একজন কন্সপিরেসি থিয়োরিস্ট দাবি করেছিলেন, মেক্সিকোর একটি কবরস্থানের উপর যে ইউএফও-টিকে দেখা গিয়েছিল, সেটিই পুনরায় সপ্তাহ খানেক পর আবার দেখতে পাওয়ার গিয়েছিল ভারতের হরিয়ানার আকাশে। যদিও এই ঘটনার সত্যতা পরে যাচায় করা হয়নি।
ইউএফও শিকারি স্কট সি ওয়ারিং তাঁর যাবতীয় কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকেন তাইওয়ানে বসে। তাঁর “ভিনগ্রহীরা পৃথিবীতে হামলা চালাতে আসছে”, এমনই একটি ভিডিও বার্তা ২০১৬ সালের শেষের দিকে সোশ্যাল সাইডগুলোতে বেশ ঘোরাঘুরি করেছিল। সেখানে রাশিয়াকে পর্যন্ত আমেরিকার থেকে সতর্ক হতে বলা হয়েছিল। কারণ তখন বারবার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হতে দেখা যাচ্ছিল, এলিয়েনদের সঙ্গে আমেরিকার যোগাযোগ শুরু হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও এলিয়েনরা নিয়মিত যাতায়াত করছে আমেরিকার গোপন ডেরা ‘এরিয়া ৫১’-এ।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কোটি কোটি ডলার খরচ করে শুধুমাত্র ইউএফও বা এলিয়েন গবেষণার জন্য। সেখানকার রিসার্চ ডিরেক্টর বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং যদিও একবার বলেছিলেন, “আমাদের সাথে তাদের (এলিয়েন) দেখা পাওয়াটা ভালো নাও হতে পারে। আমাদের ক্ষতি করা তাদের উদ্দেশ্য হতে পারে। অনেকের মতে তারা আমাদের মাঝেই রয়েছে। আমরা তাদের বুঝতে পারছি না। আমাদের চোখে ধুলো দিয়ে তারা দিব্যি আমাদের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করছে। কখনও কেউ যদি কিছু অন্যরকম দেখে থাকে তাহলে তাদের উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে মাত্র।”
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, পৃথিবী থেকে ১২.৩৬ আলোকবর্ষ দূরে থাকা একটি গ্রহে এলিয়েনদের থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের কাছে পৃথিবীর বার্তাও পাঠানো হয়েছে। যদিও তা পৌঁছবে ১২ বছর পর। সেখানে অবস্থানরত এলিয়েনরা সেই বার্তা গ্রহণ করে যদি উত্তর পাঠায়, তাও পৃথিবীতে এসে পৌঁছাতে সময় লাগবে তারও ১২ বছর পর। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, মোট ২৪ বছর সময় লেগে যেতে পারে উত্তর আদান-প্রদানে।
তবে ইউএফও হান্টাররা এসবে কান দিতে নারাজ। তাঁদের বিশ্বাস ইউএফও ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে পৃথিবীর পরিবেশে। তাঁদের কাছে গোটা পৃথিবীটাই এলিয়েনদের ল্যাবরেটরি। হয়তো গবেষণার কারণেই পৃথিবীতে তাদের যাওয়া-আসা। আর এই জন্যেই মাঝে মধ্যে পৃথিবীবাসীর নজরে পড়ে যায় তারা। যদিও ইউএফও-এর অস্তিত্ব থাকার উৎকৃষ্ট প্রমাণ এখনও পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। তবে তা অস্বীকারও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা করেন না। তাঁদের অনেকেরই দাবি, প্রায় প্রত্যেক দিনই কারও না কারও নজরে পড়ছে ইউএফও। কেউ বুঝতে পারছে, কেউ পারছে না।
তবে এটাও ঠিক, ইউএফও বা এলিয়েনরা যদি সত্যিই পৃথিবীতে যাওয়া-আসা করে থাকে, তারা পৃথিবীর কোনও ক্ষতি করেনি, অন্তত এমন কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বরং রহস্য বাড়িয়ে তারা বারবার উধাও হয়ে গিয়েছে। এ রহস্যের সমাধান কবে হবে, তার সঠিক উত্তরও কারও কাছে নেই।
Advertisement