Advertisement
এই মুহূর্তে বিশ্ব জুড়ে ২০০টির মতো সংস্থা করোনা ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি ভ্যাকসিনকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই ভ্যাকসিনটির এখন তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। ভারতেও খুব শীঘ্রই এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হবে। ভারতে এই ভ্যাকসিনের নাম হবে Covishield। – ছবি : সংগৃহীত
|
অনলাইন পেপার : করোনা সংক্রমণ মারণ আকার নেওয়ার প্রথম দিকে কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, করোনা নিজে থেকে দুর্বল হয়ে না পড়লে অথবা ভ্যাকসিন আবিস্কার না হলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হবে। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার প্রায় ৬ মাসেরও বেশি সময় অতিক্রম করার পর এখন স্পষ্ট বুঝতে পারা যাচ্ছে, তাঁদের সেই বক্তব্য কতখানি সত্যি। এই ভাইরাস অন্তত এই মুহূর্তে নিজে থেকে দুর্বল হওয়ার নয়। একে দমন করার একমাত্র উপায়ই হল মানব দেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগ। যার চেষ্টা অবশ্য অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল সমগ্র বিশ্ব জুড়ে।
এটা অবশ্যই ঠিক, যে কোনও ধরণের ভ্যাকসিন আবিস্কার করে সমগ্র মানব বিশ্বে প্রয়োগ করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। অন্তত যে কোনও ভ্যাকসিন সব কিছু ঠিক-ঠাক বজায় রেখে তৈরি করতে সময় লাগতে পারে কম পক্ষে দেড় থেকে দুই বছর। যেহেতু করোনা এখন অতিমারি ভাইরাসে রূপান্তরিত হয়েছে, তাই এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারও চলছে অনেকটা যুদ্ধকালীন তৎপরতাই। বিশ্ব জুড়ে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই দেড় কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যু ঘটেছে প্রায় ৬ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের। কিছু দেশ ছাড়া প্রায় অধিকাংশ দেশেই এই সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে।
বিশ্ব জুড়ে প্রায় ২০০টির মতো সংস্থা ভ্যাকসিন আবিস্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির নাম প্রথম সারিতেই থাকবে। জানা যাচ্ছে, তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তাদের দাবি, এই ভ্যাকসিন যথেষ্ট আশা যোগাবে এবং করোনা প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন মানব শরীরে দুই রকমের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারবে। ভ্যাকসিনটির নাম দেওয়া হয়েছে ChAdOx1 nCov-19। প্রায় ১ হাজারেরও বেশি মানুষের উপর এর প্রয়োগ করা হয়েছে। যা থেকে জানা যাচ্ছে, এটি মানব শরীরে প্রবেশের পরই তৈরি করবে অ্যান্টিবডি ও টি-সেল। এক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি হল এক প্রকার ছোটো প্রোটিন। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করবে। আর টি-সেল রক্তের সাদা অংশ। এর কাজই হল ক্ষতিকর কোষগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি তাদের এই ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহার করছে শিম্পাঞ্জির শরীরে সাধারণ সর্দি-কাশি তৈরি করা ‘অ্যাডেনো’ ভাইরাস থেকে। গবেষকরা এই ভাইরাসের জিনগত আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তার সঙ্গে যুক্ত করেছেন করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের জিনগত বৈশিষ্ট্য। এর ফলে তাদের তৈরি এই ভ্যাকসিনটি করোনার একরূপতায় পরিণত হবে। সেই সঙ্গে শরীরে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারবে।
তবে দাবি করা হচ্ছে, এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের জ্বর বা মাথাব্যথা হয়েছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, যদিও তা মোটেও খুব একটা বিপদজনক নয়। প্যারাসিটামল খেয়ে এই প্রতিক্রিয়া দমন করা যেতে পারে।
যদিও এই ভ্যাকসিন নিয়ে চলছে আরও গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তবুও প্রাথমিক পর্যায়ে যে ভ্যাকসিনটি আশানুরূপ ভালো ফল দিয়েছে তারও দাবি করছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ওই গবেষকরা। ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হয়ে গিয়েছে। বৃহৎ আকারের এই ট্রায়াল চলছে ইংল্যান্ড, ব্রাজিল ও আমেরিকার স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর। ভারতেও এই ট্রায়াল খুব শীঘ্রই শুরু হবে, এমনটিই চাইছে ওই ভ্যাকসিনের ভারতে দায়িত্বে থাকা টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা সিরাম ইন্সটিটিউট। ভারতে ওই ভ্যাকসিনের নাম হবে Covishield।
Advertisement