লকডাউনের জন্য অধিকাংশ জন্মনিরোধক কারখানা বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। তাই জন্মনিরোধক সামগ্রীর যথেষ্ট অভাব দেখা দিয়েছে বিশ্ব জুড়ে। ফলে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আগামীতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে জনসংখ্যা। সারা বিশ্ব জুড়ে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রায় ৭০ লক্ষ শিশুর জন্ম হতে পারে। – ছবি : সংগৃহীত |
অনলাইন পেপার : একথা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই, সমগ্র বিশ্ব জুড়ে অতি দ্রুত বেড়ে চলেছে মানুষের জন্মহার। প্রায় প্রতিদিনই জন্ম নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ শিশু। জন্ম নিয়ন্ত্রণের নিয়মানুবর্তিতাও অনেকক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে না। ইতিমধ্যে কিছু দেশে এই হার বেশ অনেকটাই বেশি। যদিও জন্মনিরোধক সামগ্রী ব্যবহারে কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণও করা গিয়েছে জন্মহার-কে। এখন অধিকাংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও ওই সমস্ত জন্মনিরোধক সামগ্রী বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।
কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে করোনায় জর্জরিত বর্তমান সময়ে। কারণ করোনা থেকে রক্ষা পেতে সমগ্র বিশ্ব জুড়েই এই মুহূর্তে চলছে লকডাউন (যদিও বর্তমানে কিছু দেশে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে)। অনেক দেশেই আবার বিগত কয়েক মাস ধরেই চলেছিল কঠোর লকডাউন। তাই সমস্ত জন্মনিরোধকের কারখানাগুলি এক প্রকার বন্ধ হয়েই পড়েছিল। উৎপাদন প্রায় কিছুই হয়নি সেখানে। ফলে বিশ্ব জুড়ে এই মুহূর্তে যথেষ্ট জন্মনিরোধকের সংকট দেখা দিয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো জন্মনিরোধক প্রস্তুতকারী সংস্থা হল ক্যারেক্স এইচডি। লকডাউনের জন্য তাদের অধিকাংশ কারখানা এতদিন বন্ধ ছিল। এর মধ্যে মালয়েশিয়াতেই তাদের ৩টি কারখানা রয়েছে। যাদের সবগুলিই প্রায় বন্ধ ছিল লকডাউনে। চিনও পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ জন্মনিরোধক প্রস্তুতকারী দেশ। করোনা সংক্রমণ যেহেতু চিনেই প্রথম শুরু হয়েছিল, তাই স্বাভাবিকভাবে সেদেশেও লকডাউনের জন্য বন্ধ ছিল জন্মনিরোধক কারখানাগুলি। অপরদিকে ভারত, থাইল্যান্ড সহ বিশ্বের অন্যসব বড়ো জন্মনিরোধক প্রস্তুতকারী দেশগুলিতেও দীর্ঘদিন লকডাউন চলতে থাকায় তেমনভাবে প্রস্তুত হতে পারেনি জন্মনিরোধক সামগ্রীগুলি।
ইউএনএফপিএ-এর সূত্র অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের কারণে বিশ্ব জুড়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর এরই জন্য প্রায় ৭০ লক্ষ অনাকাঙ্ক্ষিত শিশুর জন্ম হতে পারে বিশ্ব জুড়ে। ওই সূত্র থেকে আরও জানা যাচ্ছে, এমনিতেই লকডাউনের জন্য অধিকাংশ মানুষ এখন গৃহবন্দী। তাই যৌন ব্যবস্থার ওপর কোনও রকম নিয়ন্ত্রণ আনা এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না। পর্যাপ্ত পরিমাণে জন্মনিরোধকের অভাব থাকায় সেই সমস্যা আরও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা, যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে এলাকা জুড়ে সচেতনতা গড়ে তুলতেন, তাদের কাজেও লকডাউন অনেকটাই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দি গার্ডিয়ান সংবাদ মাধ্যম সূত্র অনুযায়ী, ইতিমধ্যে ফিলিপাইনে এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সেদেশে জন্মনিরোধকের সংকট দেখা দেওয়ায় আগামী বছর অনাকাঙ্ক্ষিত প্রায় ২ লক্ষেরও বেশি শিশুর জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী বছর প্রায় ১৯ লক্ষ শিশুর জন্ম হতে পারে সেদেশে। যা খুবই নেচিবাচক প্রভাব পরবে দেশের জনসংখ্যার ওপর।