Advertisement
পাহাড়পুরের প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন দশোহরা উৎসব এবছর পালিত হয়েছে বিনা আড়ম্বরে। করোনা সংক্রমণের এই সময়ে তেমন কোনও ভক্তের সমাগম ঘটেনি এখানে। অন্যান্যবার যেখানে উৎসব প্রাঙ্গণে মেলা সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, তার কিছুই হয়নি এবছর।
|
জনদর্পণ ডেস্ক : করোনা যেন এবছরের সব কিছুকেই ওলট-পালট করে দিল কয়েক মাসের মধ্যে। মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন থেকে শুরু করে আনন্দ-উৎসব সহ সমস্ত কিছুই ফিকে করে দিল এবছরের জন্য। ক্রমশ বাড়তে থাকা করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অধিকাংশ মানুষই এখন গৃহবন্দি। তাই ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছে তাঁদের দীর্ঘদিনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলিও।
বীরভূম জেলার পাঁরুই থানার অন্তর্গত বক্রেশ্বর নদের তীরবর্তী পাহাড়পুর গ্রামে প্রায় ৫০০ বছর ধরে মহাধূমধামের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে দশোহরা উৎসব। উৎসবটি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির মধ্যেও যথেষ্ট জনপ্রিয়। উৎসবের সময় বহু দূর-দূরান্ত থেকে আগত হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে এখানে। উৎসবের দিনগুলিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন- মনসার জন্মপালা, সঙ্গীত পরিবেশন, কবিতা পাঠ, চণ্ডীপাঠ, মনসার গ্রাম পরিক্রমা, নাটক, পোস্টার প্রদর্শনী প্রভৃতি হয়ে থাকে। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে ভিড় জমে ওঠে নজর কাড়ার মতো। কিন্তু এবছর নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ ১ জুন দশোহরা উৎসব শুরু হলেও কোনও রকম আড়ম্বর লক্ষ্য করা গেল না। শুধুমাত্র মনসা মাতার পুজোটা-ই হতে দেখা গেল।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেল, প্রায় ৫০০ বছর আগে অর্থাৎ বাংলায় সেন বংশের শাসনকালে গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তের ‘হরিতাল’ নামের একটি পুকুর থেকে মা মনসার মূর্তি দুটি পেয়েছিলেন গ্রামের দেবাংশী বংশের কোনও পূর্বপুরুষ। পরে মূর্তি দুটি প্রতিষ্ঠা করে এই পুজোর সূচনা করা হয়। তার অনেক পরে এই উৎসব প্রাঙ্গণে ধীরে ধীরে যুক্ত হতে থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, মেলা ইত্যাদি। আগের বছর পর্যন্ত দারুণ আড়ম্বরের সঙ্গে এই উৎসব পালিত হতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এবছর করোনা সংক্রমণের কারণে তেমন কোনও আয়োজনই হতে দেখা গেল না এখানে।
দেবাংশী পরিবারের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা জয়দেব দেবাংশী জানালেন, বর্তমানে তাঁদের পরিবারের হাতেই পুজোর মূল দায়িত্ব থাকলেও সমস্ত গ্রামবাসীই এই পুজোর আয়োজনে এগিয়ে আসেন। গ্রামবাসীদের কাছে এটা তাঁদের নিজস্ব পুজো। গ্রামের হিন্দু, মুসলিম, আদিবাসী সহ সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে প্রতিবছর সামিল হন।
করোনা সংক্রমণের জন্য এই উৎসব প্রায় পুরোটাই ফিকে, এব্যাপারে জয়দেববাবু মন খারাপের সুরে জানালেন, অন্যান্যবার এখানে উৎসবের দিগুলিতে প্রচুর ভক্তের সমাগম লক্ষ্য করা যায়। ৫ দিন ধরে চলে মেলা সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা। এবছর তার কিছুই আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে মায়ের পুজো হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি প্রার্থনাও জানিয়েছেন, মায়ের আশীর্বাদে দ্রুত করোনা মুক্ত হোক পৃথিবী। সমাজের সকল স্তরের মানুষ সুস্থ থাকুক। করোনা মুক্ত হলে আগামী বছর আবার আড়ম্বরে পালিত হবে পাহাড়পুরের এই প্রাচীন দশোহরা উৎসব।
Advertisement