শহিদ ভগত সিং-এর না জানা কিছু অসাধারণ চিন্তা-ভাবনা

Advertisement
শহিদ ভকৎ সিং-এর না জানা কিছু অসাধারণ চিন্তা-ভাবনা
সুমন সরকার :আমি সন্ত্রাসবাদী নই, আমি বিপ্লবী’, বক্তা একজন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী, ভগত সিং সান্ধু কিন্তু তাঁর দুর্ভাগ্য এই যে, নিজের জীবনকে দেশের জন্য উৎসর্গ করেও তিনি নিজেকে জীবদ্দশায় কখনও বিপ্লবী হিসাবে প্রমাণ করতে পারেননি অবাক হতে হয়, আজও স্বাধীন ভারতের কোনও কোনও বইয়ের পাতায় তাঁকে ইংরেজ আমলের সন্ত্রাসবাদী হিসাবেই পরিচয় দেওয়া হয়েছে এছাড়াও দেশের পাঠ্যপুস্তকগুলিতেও তাঁকে নিয়ে বিশেষ কিছু উল্লেখও করা হয় না, যা পড়ে বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করতে পারবে যদি তাঁর জীবনাবলী পাঠ করা হয় তাহলে দেখা যাবে, তিনি শুধুমাত্র একজন ভারতীয় বিপ্লবীই ছিলেন না, ছিলেন তৎকালীন সময়ের একজন বড়ো মাপের দার্শনিকও
     ভগত সিংএর জীবনের সবচেয়ে বড়ো পরিবর্তন ঘটিয়েছিল জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ড তিনি ছোটো থেকেই সেই জালিয়ানওয়ালাবাগের রক্তমাখা মাটি বোতল বন্দি করে রেখেছিলেন নিত্য পুজো করতেন সেই বোতল বন্দি মাটি তাঁর মাকে বলতেন, এত মানুষের বলিদান তিনি কখনওই ব্যর্থ হতে দেবেন না
     ছোটো থেকেই তাঁর জেদ ছিল, দেশকে স্বাধীন করার ১৯২০ সালে যোগ দিলেন অসহযোগ আন্দোলনে কিন্তু ব্যর্থ হয় সেই আন্দোলন জেদ আরও চেপে বসে আন্দোলনে গতি পায় ১৯২৭ সালের পর সে সময়ে সাইমন কমিশনের প্রতিবাদ সভায় লাঠির আঘাতে লালা লাজপথ রায় শহিদ হলে তিনি এগিয়ে যান সসস্ত্র আন্দোলনের দিকে ১৯২৮ সালে চন্দ্রশেখর আজাদের নেতৃত্বে রাজগুরু, দুর্গাবতীদেবীসাহায্যার্থে হত্যা করেন সনডার্গকে
     তাঁর সসস্ত্র বিপ্লব এখানেই থেমে থাকেনি ১৯২৯ সালে বটুকেশ্বর দত্তকে সঙ্গে নিয়ে বোমা নিক্ষেপ করেন আইন সভায় পরে অবশ্য পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণও করলেন তাঁর এই আত্মসমর্পণের পিছনে উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন তিনি চেয়েছিলেন সংবাদ মাধ্যমকে ব্যবহার করে তাঁদের মতাদর্শ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এবং নিজেদের বিপ্লবী হিসাবে প্রমাণ করতে তিনি বলতেন, কালা মানুষদের শোনাবার জন্য বড়ো ধামাকার প্রয়োজন
     আত্মসমর্পণের পর স্বাভাবিকভাবেই ভগত সিং ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা শুরু হতে থাকে। তখন তাঁদের রাখা হয়েছিল লাহোর সেন্ট্রাল জেলে। সে সময়ে দেশের জেলগুলি ছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। খাবারও দেওয়া হত অতি নিম্ন মানের। তাই এখানকার বন্দিরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শুরু করলেন অনশন। ৬৪ দিন অনশনের পর শহিদ হলেন বিপ্লবী যতীন দাস। শেষ পর্যন্ত অনশনের ৯৭ দিন পর ইংরেজ প্রশাসন বিপ্লবীদের দাবি মেনে নিলে সেই অনশনের সমাপ্তি ঘটে।
     ভগত সিং ছাত্রাবস্থায় ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। ছোটো থেকেই তিনি বিভিন্ন বই পড়তে ভালোবাসতেন। জেলে যতবারই তাঁর সঙ্গে কেউ দেখা করতে যেতেন, তিনি তাঁদের বই আনার কথা বলতেন। সে সময়ে রাশিয়ান বিপ্লবী নেতা লেনিন গভীরভাবে দাগ কেটেছিল তাঁর মনে। তিনি বলতেন, ধনীরা যুদ্ধ বা আন্দোলন করতে আসবে না। গরীবরাই এগিয়ে আসবে যুদ্ধ ও আন্দোলন করতে। তাই গ্রামে গিয়ে সবাইকে জাগাতে হবে। শ্রমিক, কৃষক, গরীব মানুষদের অধিকার দিতে হবে। তিনি সব সময় পূর্ণ স্বরাজের কথা বলতেন।
     এর পর বিচারে ভগত সিং এবং তাঁর দুই সঙ্গী রাজগুরু ও সুখদেবের মৃত্যুদণ্ড হয়। অবশ্য এর পিছনে কিছুটা দায়ী ছিল ভগত সিং-এরই ওপর দুই সঙ্গী জয়গোপাল ও হংসরাজ ভোরা। মূলত এদের বিশ্বাসঘাতকতাতেই ভগত সিং ও তাঁর দুই সঙ্গীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা প্রাপ্ত হয়।
     ভগত সিং মনে করতেন, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে জোরালো করতে তাঁকে এই মৃত্যুদণ্ড মেনে নিতেই হবে। দেশের জন্য এইটুকু আত্মত্যাগ তাঁকে স্বীকার করতেই হবে। তিনি আরও মনে করতে, তাঁদের এই আত্মত্যাগে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিতে দেশবাসীদের আরও বেশি করে অনুপ্রাণিত করবে।
     জীবনের প্রথম দিকে ভগত সিং ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন। পরে অবশ্য নাস্তিক হয়ে যান। এ ব্যাপারে তিনি বলতেন, ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান হতেন, তাহলে কেন তিনি এমন জগৎ তৈরি করলেন, যেখানে কেউ-ই সন্তুষ্ট নয়। কেন-ই বা জগৎ থেকে দুঃখ-কষ্ট দূর হয় না। মানুষের পাপ করার সময়ে কেন তাঁকে ঈশ্বর বাধা দেন না। ঈশ্বর যেখানে নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ, সেখানে কীভাবে তিনি সর্বশক্তিমান হলেন।
     ভারতবর্ষের এই মহান বিপ্লবী ভগত সিং-এর ফাঁসি হয় ২৩ মার্চ ১৯৩১ সালে সন্ধ্যা ৭টায়। ফাঁসি দেওয়ার পরেও কত নৃশংস ছিল ইংরেজ প্রশাসন। ভগত সিং ও তাঁর দুই সঙ্গী রাজগুরু ও সুখদেবের দেহ কুটিকুটি করে বস্তা বন্দি করে শতদ্রু নদীর ধারে ফেলে দেয়। ভাবা যায় না, মৃতদেহের প্রতি এতটাও নিষ্ঠুর মনোবৃত্তি ছিল ইংরেজ সরকারের।
     সবশেষে বলতেই হয়, এত কিছুর পরেও এই মহান বিপ্লবীকে বর্তমান সমাজ শুধুমাত্র কিছু ছবি বা মূর্তি স্থাপন করে জন্ম দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। তাঁর মাত্র ২৩ বছর ৫ মাস ২৬ দিনের ছোট্ট জীবন নিয়ে ভারতভূমির প্রতি এই যে সুবিশাল আত্মত্যাগ, এর থেকে বর্তমান প্রজন্ম কতটুকু শিক্ষালাভ করল?
সূত্র :
১. গগনে দামামা বাজিও, পীযূষ মিশ্র
২. Without Fear : Life And Trial Of Bhagat Singh, Kuldeep Nayyar
৩. Bhagat Singh, Wikipedia (Internet)

  • All Rights Reserved
Advertisement
Previous articleনপাড়ায় গ্রামবাসীদের হাতে ত্রাণ তুলে দিলেন শিক্ষক
Next articleপ্রজাপতিরা কোথায় পেল এত রঙ? এ ব্যাপারে বিজ্ঞান কি বলছে?

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here