Advertisement
জনদর্পণ ডেস্ক : মারণ ভাইরাস করোনা থেকে রক্ষা পেতে দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। দেশের শতাধিক জেলাকে ইতিমধ্যেই রেড জোনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা অন্যতম। এই জেলার দেগঙ্গা থানার অধীন কলসুর গ্রামের ‘মা ওলাইচণ্ডী’র পুজো ও মেলা বর্ষ প্রাচীন। সাধারণত বৈশাখ মাসেই এই পুজো ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এবছর বৈশাখ মাসের নির্দিষ্ট দিনে মায়ের পুজো অনুষ্ঠিত হলেও, প্রথমবারের জন্য স্থগিত রাখা হল মেলা।
১৯৭১ সালে প্রকাশিত অশোক মিত্র সম্পাদিত ‘পশ্চিমবঙ্গের পূজা–পার্বণ ও মেলা’ গ্রন্থটির তৃতীয় খণ্ড থেকে এই পুজো ও মেলার কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, উত্তর কলসুর গ্রামের জনৈক এক মহিলা দ্বারা স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে বাংলা ১২৮০ সাল থেকে মা ওলাইচণ্ডী পুজোর সূচনা হয়। মেলা অবশ্য তার বেশ কয়েক বছর পর থেকে শুরু হয়েছিল।
বর্তমানে এই পুজো ও তাকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হওয়া মেলা প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখ মাসের অক্ষয় তৃতীয়ার আগের অথবা পরের সোমবারে। পুজো হয় একদিনই, কিন্তু মেলা চলতে থাকে বেশ কয়েকদিন ধরে। মা ওলাইচণ্ডী এখানে জিয়ল গাছ রূপে পূজিত হয়। যদিও পূর্বের সুবৃহৎ জিয়ল গাছটি বেশ কয়েকবছর আগে ঝড়ের দাপটে শিকড় শুদ্ধ উপড়ে মাটিতে হেলে পড়েছিল। তাকে মন্দির সংলগ্ন স্থানের পিছন দিকে সমাধি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত জিয়ল গাছটি পূর্বের গাছেরই একটি অংশ মাত্র।
![]() |
এখানেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল মা ওলাইচণ্ডীর মেলা |
উত্তর ২৪ পরগনা যেহেতু রেড জোনে অন্তর্ভুক্ত। তাই প্রশাসন গোটা জেলা জুড়ে সতর্ক নজর রেখেছে, যাতে কোনওভাবেই কোনও স্থানে অধিক লোকসমাগম না ঘটে। মেলা মাত্রই লোকসমাগম। মা ওলাইচণ্ডীর মেলার ক্ষেত্রেও যে তার বিপরীত হবে না, এই ভাবনাটাও স্বাভাবিক। তাই মা ওলাইচণ্ডী মেলা কর্তৃপক্ষ এবছরের জন্য মেলা অনুষ্ঠিত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সব্যসাচী মণ্ডল জানালেন, এবছর পুজোর দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ মে (২১ বৈশাখ, সোমবার)। সেই অনুযায়ী পুজোও অনুষ্ঠিত হয় ওই দিন দুপুর নাগাদ। কিন্তু লোকসমাগম একেবারেই হয়নি। মা ওলাইচণ্ডীর পুজো প্রাঙ্গণে দূরত্ব বজায় রেখে সাদা রঙের বেশ কতকগুলি বৃত্ত অঙ্কন করা হয়েছে। মায়ের দর্শন পেতে ওই বৃত্তের মধ্যে দাঁড়ানো বাধ্যতামূলক। এতে দর্শনার্থীরা মা ওলাইচণ্ডী প্রাঙ্গণে একে অপরের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারবেন।
সব্যসাচী আরও জানালেন, অতীতে মেলা শুরু হওয়ার সময়কাল থেকে এবছর এই প্রথমবারের জন্য মেলার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ মেলা মাত্রই অধিক লোকসমাগম। করোনার এই সময়ে যা একেবারেই কাম্য নয়। কিন্তু মেলা না হওয়াতে এলাকার বাসিন্দারা প্রায় প্রত্যেকেই মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়েছেন। কারণ মা ওলাইচণ্ডী মেলা শুধু কলসুর নয়, পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিরও একটি প্রাচীন মেলা। আনন্দ–উৎসব, হইচই হওয়াটাই এখানে স্বাভাবিক ছিল। অনেক দূর থেকেও এখানে দর্শনার্থীরা এই সময়ে এসে উপস্থিত হন। এবছর তার কিছুই হয়নি।
Advertisement