Advertisement
চারপাশে ছড়িয়ে থাকা কোনও কিছুই ফেলনা নয়। সামান্যটুকু শৈল্পিক বুদ্ধি প্রয়োগে খুব সহজেই ফেলে দেওয়া জিনিসগুলিকে নান্দনিক রূপ দান করা যায়। কুমড়োর বীজ ও নারকেল মালাকে ফেলে না দিয়ে সেরকমভাবেই পুনঃব্যবহারের উপযোগী করা যায়।
|
মৌমিতা দাস : লকডাউনে দেশের অধিকাংশ মানুষই এখন অবসরে দিন কাটাচ্ছেন। তবে দীর্ঘদিন গৃহবৃন্দি থাকাটাও যথেষ্ট বিরক্তিকর। অনেকে হাতের কাছে তেমন কোনও কাজ না পাওয়ায় ইতিমধ্যে হাঁপিয়ে উঠেছেন। আবার অনেকেই দীর্ঘ লকডাউনের সুযোগে সৃষ্টিশীল মানসিকতায় নিজের মতো করে নতুন নতুন সৃষ্টিতে মেতে উঠেছেন। তাঁদের ধারণা, নিজস্ব প্রতিভা ও গুণাবলী আত্মপ্রকাশের এটিই সঠিক সময়।
এই লকডাউন ভালো হোক বা মন্দ, একথা জোর দিয়েই বলা যায় প্রত্যেকটি মানুষের জীবনশৈলীর এক আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে এটি। লকডাউনের পূর্বে মানুষের ব্যস্ত জনজীবন যেখানে রবিবার বা ছুটির দিনে বাড়িতে পৌঁছে স্তব্ধ হয়ে যেত। এখন সেখানে বলতে গেলে প্রত্যেকটা দিনই প্রায় রবিবার।
তবুও দীর্ঘ লকডাউন মানুষের জীবনে একাকীত্ব বয়ে আনতে বাধ্য। সেই সঙ্গে মানসিক অসুস্থতাও সঙ্গে নিতে পারে অনেকে। মনোবিদরা দাবী করছেন, কর্মব্যস্ত মানুষেরা হঠাৎ কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে সরে এলে তাঁদের মানসিক অবস্থার চরম অবনতি ডেকে আনে। মনোবিদরা আরও বলছেন, এই সময়ে মানুষকে তাঁদের পছন্দসই কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে হবে। তবেই মানসিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
এক্ষেত্রে শৈল্পিক ও সৌখিন ক্রিয়াকর্মে নিজেকে অবশ্যই কিছুটা আবদ্ধ করা যেতে পারে। হোক না সে বাড়ির ফেলে দেওয়া পুরানো অব্যবহৃত বা বাতিল কোনও জিনিসপত্র। সেটাকেই সৃষ্টিশীল মানসিকতায় বদলে ফেলা যায় নতুন রূপে। আজ সেরকমই দুটি বিষয়ের কথা এখানে উল্লেখ করা হল।
কুমড়ো বীজ দিয়ে তৈরি হোক আকর্ষণীয় মাটির ভাঁড় :
প্রতিদিনের সাধারণ সবজির মধ্যে কুমড়ো অন্যতম। কুমড়োয় থাকা বিটা ক্যারোটিন চোখের পক্ষে খুবই উপকারী। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন ‘এ’ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু পাকা কুমড়োর বীজ নতুন গাছ তৈরি ছাড়া আপাতভাবে অন্য কোনও কাজে লাগে না। গৃহকর্ত্রীরা অবশেষে ডাষ্টবিনেই আশ্রয় দেন সেগুলিকে।
কিন্তু এই ফেলে দেওয়া কুমড়োর বীজ দিয়েই প্রস্তুত করা যেতে পারে সৃজনশীল বস্তু। প্রথমে কুমড়োর বীজগুলিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে, রোদে শুকিয়ে নেওয়ার পর তাতে আঠা, রং, তুলি ব্যবহার করে মাটির ভাড় বা ঘটের গায়ে মানানসই রকম লাগিয়ে তৈরি করা যেতে পারে দৃষ্টিনন্দন এক নতুন পাত্র। ছোটোদের খেলনা অথবা ঘরের গৃহসজ্জার তালিকায় অবশ্যই রাখা যেতে পারে ওই কুমড়োর বীজ স্থাপন করা আকর্ষণীয় মাটির ভাড়। বাড়ির অন্য কাজ সামলিয়ে একটু সময় বের করে অবশ্যই তা তৈরি করা সম্ভব। নিজে শিখে অন্যকেও শেখানো যাবে।
নারকেল মালা দিয়ে পুতুল তৈরি :
নারকেল বা ডাব গাছ একবীজপত্রী উদ্ভিদ। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ, তখন একে ডাব বলা হয়। আর তা পেকে বা শুকিয়ে গেলে নারকেল নাম দেওয়া হয়। উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছেন, একটি নারকেল গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত গাছটির পুরোটাই ব্যবহারের যোগ্য। যা প্রমাণও হয়েছে বহুবার। কিন্তু নারকেলের জল ও শাঁস ব্যবহারের পর বাকি অংশটি (খোল বা মালা) অনেকেই ফেলে দেন। কোনও কাজে লাগান না।
কিন্তু একটু ভাবলেই এই মালাকে নান্দনিক শিল্পে রূপ দেওয়া যেতে পারে। প্রথমে নারকেল মালার বাইরে থাকা ছোবড়া বা ঝুলগুলি পরিষ্কার করার পর খুব ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে সেগুলিকে। তারপর খুব সহজেই রং ও তুলির ব্যবহারে বিভিন্ন নকশা, যে কোনও দৃশ্যপট বা বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলা যেতে পারে ওই নারকেল মালার ওপর। এছাড়াও সুদক্ষ হাতে ছোটো ছেলেদের বিভিন্ন খেলনা, পুতুল বা গৃহসজ্জার সামগ্রী বানানো সম্ভব। জম্মদিন, বিয়ে অথবা অন্য যেকোনও অনুষ্ঠানে নিজের প্রিয়জনকে এই শিল্প সামগ্রী উপহার হিসাবেও দেওয়া যেতে পারে।
একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, চারপাশে ছড়িয়ে থাকা কোনও কিছুই ফেলনা নয়। সামান্যটুকু শৈল্পিক বুদ্ধি প্রয়োগে খুব সহজেই ফেলে দেওয়া জিনিসগুলিকে নান্দনিক রূপ দান করা যায়। তাই আপাতভাবে দেখতে গৃহের অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলিকে ফেলে না দেওয়ায় ভালো। বরং সেগুলিকে কীভাবে পুনঃব্যবহারের উপযোগী করা যায়, তার চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে।
(লেখিকা শিল্পী ও বিশ্বভারতীর সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্রী)
Advertisement