ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র, বিপর্যয় নামতে পারে সৃষ্টির ওপর

Advertisement
পৃথিবী ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে তার চৌম্বকত্ব। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, ইন্টারনেট পরিষেবা। সেই সঙ্গে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে সমগ্র জীবজগতে। কারণ চৌম্বকক্ষেত্র হ্রাস পেলে ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মির আগমন ঘটবে পৃথিবীতে।

ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র, বিপর্যয় নামতে পারে সৃষ্টির ওপর
রঞ্জন সরকার : একের পর এক বিপর্যয় নেমে আসছে পৃথিবীর বুকে। যার ফল মোটেও সুখকর নয়, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যাচ্ছে এখন। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনার দগদগে ক্ষত এখনও ক্রমবর্ধমান। যার রূপ ক্রমশই মারাত্মক থেকে অতি মারাত্মকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আকাশে-বাতাসে ভেসে উঠছে স্বজন হারাদের কান্না। দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যাচ্ছে আপামর বিশ্ববাসী।
     এর মাঝেই কিছুদিন আগের খবর ছিল ‘ঘুমিয়ে পড়ছে সূর্য’। তার তেজ কমে যাচ্ছে ক্রমশ। ফলে পৃথিবীর বুকে বহিরাগত ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মির আগমনের পথ তৈরি হচ্ছে প্রসস্ত। সেই সঙ্গে অধিক বজ্রপাত, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ক্ষতিকর রোগ-জীবাণু বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।
     এবার আরও ভয়াবহ আর এক নতুন খবর শোনালেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী নাকি তার চৌম্বকত্ব হারিয়ে ফেলছে ধীরে ধীরে! যা মোটেও ভালো খবর নয় পৃথিবীবাসীর জন্য। এর ফলও হতে পারে অতি মারাত্মক।
ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র, বিপর্যয় নামতে পারে সৃষ্টির ওপর
পৃথিবীর চৌম্বকত্ব আসলে কী?
     পৃথিবীর গভীরে শক্ত জমাট বাধা অন্তঃভূকেন্দ্রের ওপর প্রায় ৬ হাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা নিয়ে অবস্থান করছে তরল বহিঃভূকেন্দ্র। এই অংশটি সব সময়ই চঞ্চল। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির জন্য এই অঞ্চলে ডায়নামো তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় তড়িৎপ্রবাহ। তড়িৎপ্রবাহ তৈরি হলে সেই অঞ্চলে চৌম্বকক্ষেত্রও তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। ফলে পৃথিবী পেয়েছে তার নিজস্ব চৌম্বকত্ব। এই চৌম্বকক্ষেত্রটির উত্তর ও দক্ষিণ অংশ যথাক্রমে সুমেরু ও কুমেরুতে অবস্থান করছে।
ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র, বিপর্যয় নামতে পারে সৃষ্টির ওপর
চৌম্বকক্ষেত্রের ফলে কী হয়?
     এই চৌম্বকক্ষেত্রটি পৃথিবীর অভ্যন্তর ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছে সুদূর মহাকাশে। তারপর তৈরি করেছে নিজের চারপাশে অদৃশ্য স্থায়ী দুটি ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট। এই বেল্ট দুটিকেই বলা হয় পৃথিবীর রক্ষাকবজ। কারণ সূর্য ও বহির্বিশ্ব থেকে ধেয়ে আসা ক্ষতিকর অসংখ্য মহাজাগতিক রশ্মি এই বেল্টে আটকা পড়ে যায়। বেল্ট ভেদ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বা ভূমিভাগে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে রক্ষা পাই জীবকুল। সৃষ্টি হয় নতুন নতুন সভ্যতার।
     ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে উল্লেখযোগ্য হারে কমতে শুরু করেছে পৃথিবীর এই চৌম্বক ক্ষমতা। ওই তথ্য থেকে আরও জানা গিয়েছে, গত ২০০ বছরে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র প্রায় ৯ শতাংশ কমে গিয়েছে। যা যথেষ্ট চিন্তার বিষয় বলেই মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র, বিপর্যয় নামতে পারে সৃষ্টির ওপর
যদি পৃথিবীর এই চৌম্বকক্ষেত্র পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, তাহলে কী হবে?
     এর ফল হবে অতি ভয়াবহ। কারণ চৌম্বকত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট-এর অস্তিত্বও বিলীন হয়ে যাবে। ফলে ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মির প্রবেশ আর কোনওভাবেই আটকানো যাবে না। ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, বন্ধ হয়ে যাবে ইন্টারনেট পরিষেবা। আর সবশেষে ক্ষতির মুখে পরবে জীবজগৎ। পৃথিবীর তামাম জীবকুলকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। এটাই এখন সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন জার্মান রিসার্চ ফর জিও সায়েন্স-এর গবেষক জার্গেন মাজকা।
     এখানে বলা প্রয়োজন, সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ মঙ্গলেরও এক সময়ে চৌম্বকত্ব ছিল। এবং সেই সঙ্গে ছিল ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্টও। কিন্তু কয়েক কোটি বছর আগে কোনও এক সুবিশাল উল্কা পিণ্ডের আঘাতে মঙ্গলের অন্তর্ভাগ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে ভূকেন্দ্রটি ধীরে ধীরে জমাট বেধে কঠিনে পরিণত হওয়ায় চৌম্বকত্ব হারিয়ে গিয়েছে চিরদিনের জন্য। সেখানে স্বাভাবিকভাবে উন্নত জীবজগৎ সৃষ্টি হওয়া এখন প্রায়ই অসম্ভব।
     তবে কি কারণে পৃথিবীর এই চৌম্বকত্বের হ্রাস ঘটছে, তা এখনও সুস্পষ্ট নয় কারও কাছে। তবে কোনও কোনও জ্যোতির্বিজ্ঞানীর ধারণা, হয়তো পৃথিবী আবার তার চৌম্বকক্ষেত্রের দিক পরিবর্তন করছে, তাই এই হ্রাস। কিন্তু পুরোটা জানতে আরও অনুসন্ধানের প্রয়োজন।
Advertisement
Previous articleঈদের বাজারে ভিড় বাড়লেও বজায় রয়েছে সামাজিক দূরত্ব
Next articleআধুনিক খেলনার ভিড়ে এখন অনেকটাই কোণঠাসা “তালপাতার সেপাই”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here