Advertisement
পর পর বৃষ্টি ও সেই সঙ্গে আমফানের দাপটে ছন্দ হারিয়েছেন চাষিরা। পাকা ধানও অনেকে এখনও ঘরে তুলতে পারেননি। অন্য ফসলের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। এর কিছুটা সমাধানের পথ দেখালেন রথীন্দ্র কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের অধিকর্তা।
|
ড. সুব্রত মণ্ডল : বাংলা বছরের শুরু থেকেই পর পর বৃষ্টি এবং তারপর গত ২০ এপ্রিলে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’-এর তাণ্ডবে বেশ সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। বিশেষ করে বোরো ধান কাটা ও ঝাড়াই করতে বিরাট সমস্যা দেখা দিয়েছে তাঁদের। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে অধিকাংশ মাঠে জল জমে গিয়েছে। ফলে ধান কাটার মেশিনও মাঠে নামাতে পারছেন না তাঁরা। অন্যদিকে লকডাউনের জন্য শ্রমিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে অনেক জায়গায়। কারণ এই সময়ে বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে অনেক পরিযায়ী শ্রমিক আসেন ধান কাটতে। তাঁরা এবার কেউ-ই আসতে পারেননি। ফলে সমস্যা বেড়েছে দ্বিগুণ।
শুধু ধান নয়, অন্য বিভিন্ন রকমের ফসলের ক্ষেত্রেও একাধিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এরকম অবস্থায় বেশ কিছু পরিকল্পনা মাফিক কাজ করলে চাষিরা কিছুটা ওই সব সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। –
১. স্থানীয় শ্রমিকদের যতটা সংখ্যক পাওয়া যায়, তাঁদেরকে দিয়েই যত দ্রুত সম্ভব ধান কাটার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে ছোটো হস্তচালিত ধান কাটার মেশিন ভাড়া করা যেতে পারে। ধান কাটার পরই সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি বয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
২. এই বৃষ্টিতে অনেক সময় গাছে থাকা অবস্থাতেই পাকা ধানে ‘কল’ (অঙ্কুর) চলে আসে। তা আটকাতে ৫ শতাংশ লবণ জল (প্রতি লিটার জলে ৫০ গ্রাম খাবার নুন) স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
৩. চাষিরা কালো কলাই চাষ করে থাকলে, তা দ্রুত গাছ সমেত কেটে ঘরে তুলতে হবে। কারণ যদি কালো কলাই ৬০-৭০ শতাংশ পেকে গিয়ে থাকে, তাহলে সমস্ত দানা শুঁটির মধ্যেই পচে যেতে পারে।
৪. সবুজ মুগের শুঁটি তোলার কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
৫. তিল পাকতে এখনও বেশ কিছু দিন দেরি রয়েছে। তাই তিলের জমিতে জল বসে যাওয়া আটকাতে মাঠের বিভিন্ন দিকে জল বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. চাষিরা এই সময়ে মাঠে বিভিন্ন লতানে সবজির চাষ করেন। যা এই বৃষ্টিতে পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিছু ক্ষেত্রে গাছের গোড়াও পচে যেতে পারে। এ অবস্থায় ওই লতানে সবজির গাছগুলিকে যতগুলি সম্ভব ছোটো ছোটো মাচা করে তুলে দিতে পারলে বেশ ভালো হয়। এবং গোড়া পচে যাওয়া আটকাতে বিশেষ পরামর্শ মতো সঠিক ছত্রাক নামক ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই রকম ছোটো ছোটো পরামর্শ মেনে চললে চাষিরা কিছুটা হলেও নিজেদের ফসলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন। আসলে এই সময়ের বৃষ্টিটা চাষিদের সুবিধার চেয়ে অসুবিধার মুখেই ঠেলে দিয়েছে বেশি।
(লেখক : বিশ্বভারতী রথীন্দ্র কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের অধিকর্তা)
Advertisement