Advertisement
জনদর্পন ডেস্ক : করোনা সংক্রমণকে রুখতে গত ২৩ এপ্রিল বিকাল ৫টা থেকে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে লকডাউন। তার জের এখনও চলছে। এই লকডাউন যেমন একদিকে ইতিবাচক, তেমনি অন্যদিকে তার নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। লকডাউনের বিরাট ছাপ পড়েছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। দেশ জুড়ে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্য যে কোনও ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে এখন।
গত ১৩ মার্চ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নোটিশ জারি করে গত ১৪ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছিল। সেই সঙ্গে ওইবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসস্থল অর্থাৎ হোস্টেল খালি করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাই ছাত্র–ছাত্রীরা নির্দেশ মেনে প্রত্যেকেই প্রায় বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু ফিরতে পারেননি সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র চন্দন বর্মন। তাই তাঁর লকডাউনের দিনগুলো কাটছে দারুণ অসহায়ভাবে।
চন্দন বর্মন জানালেন, তাঁরবাড়ি উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের গণেশবাটী গ্রামে। বাবা সুর বর্মন ভটভটি (ইঞ্জিন ভ্যান) চালিয়ে কাঠ সরবরাহ করে কোনও রকমে সংসার চালান। কিন্তু লকডাউনের জন্য সে জীবিকাও এখন বন্ধ। তাই টাকা পাঠিয়ে ছেলেকে সহযোগিতা করতে পারছেন না তিনি। চন্দন এখন রয়েছেন বোলপুর-শ্রীনিকতেনের পাশ্বর্বতী গ্রাম মোলডাঙায়।
তবে বিশ্বভারতীর হোস্টেল বন্ধ হয়েছিল ১৪ মার্চ, আর লকডাউন শুরু হয়েছিল ২৩ মার্চ বিকাল ৫টা থেকে। মাঝে এতদিন সময় থাকা সত্ত্বেও তিনি বাড়ি ফিরতে পারেননি কেন, সে কথা জিগ্যেস করা হলে চন্দন জানালেন, আসলে বিশ্বভারতীতে পড়াশুনা করার পাশাপাশি আনুষঙ্গিক খরচ চালাতে তিনিটিউশনি করেন। হোস্টেল বন্ধ হওয়ার পরেও তিনি টিউশনি চালিয়ে যান। এর জন্য মোলডাঙার একটি বাড়িতে আশ্রয়ও পেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে ২২ মার্চ ‘জনতা কারফিউ’ হওয়ার পরের দিনই বিকাল ৫টা থেকে দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হবে, এ ধারণা তাঁর ছিল না। তাই হঠাৎ করেই সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি।
কিন্তু এই অসহায় পরিস্থিতিতে চন্দন পাশে পেয়ে গেলেন বেড়গ্রাম পল্লীমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা প্রভিভা গাঙ্গুলী-কে। চন্দনের করুণ অবস্থার কথা জানতে পেরে ‘জনদর্পণ’-এর প্রতিনিধি সুজয় ঘোষাল গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রতিভা গাঙ্গুলীকে জানান। বোলপুরের সমাজসেবিকা ও শিক্ষিকা প্রতিভা গাঙ্গুলী কাল বিলম্ব না করে পরের দিনই অর্থাৎ ২৭ মার্চ সকালেই চন্দনের কাছে সাহায্য নিয়ে পৌঁছে যান। এদিন তিনি চন্দনকে একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১২ কেজি চাল সহ ডাল, চিনি, আলু এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করেন।
জনদর্পণ-কে প্রতিভা গাঙ্গুলী জানালেন, চন্দনের অবস্থা সত্যিই করুণ। প্রয়োজনে আগামীতে তাঁকে আরও সাহায্য করতে ইচ্ছুক তিনি।
বিপদের দিনে এই সহযোগিতা পেয়ে চন্দন জানালেন, এতদিন চিন্তা ছিল লকডাউনের দিনগুলি পার করব কিভাবে? কিন্তু এই সহযোগিতায় আপাতত পেটের চিন্তা অনেকটাই দূর হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিভা গাঙ্গুলীকেও ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি তিনি।
মন তবুও মানতে চাই না। দীর্ঘদিন হয়ে গিয়েছে বাড়ির চেনা মুখগুলি দেখা হয়নি তাঁর। এবার চাইছেন বাড়ি ফিরতে। তিনি চাইছেন প্রশাসন যেন যে কোনওরকমের উদ্যোগ নিয়ে তাঁকে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করে দেয়। এই দুঃসময়ে তাঁর মা-বাবার পাশেও দাঁড়াতে চান তিনি। তাঁর মা-বাবাও তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
Advertisement