নির্ভয়ারা আর কবে নির্ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে?

Advertisement
Nir
বিদিশা মিত্র : অনেক তো হল সমাজের গতানুগতিক নিয়মে পুরুষ তৈরিএবার না হয় প্রকৃত মানুষ তৈরি শুরু হোক। একবিংশ শতাব্দীর চূড়ায় দাড়িয়েও যখন বারবার এটা প্রমাণিত হয়, প্রকৃতির কাছে মানুষ এখনও কত অসহায়, তখনও তারা নিজেদের হিংস্রতা দেখাতে ব্যস্ত পথেঘাটে অথবা চলন্ত বাস-ট্রেনে। আর সেই হিংস্রতা থেকেই উঠে আসে নির্ভয়া, আফিসার মতো আরও কত নাম না জানা রক্তাক্ত দেহ।
     ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে এক বছরে ২৫ হাজারেরও বেশি শিশু কন্যা ধর্ষিত হয়েছেধর্ষণ ছাড়াও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি শিশু কন্যাআর ১ হাজারের বেশি কন্যা সন্তান যৌন হেনস্থার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু এ-তো গেল কাগজ-কলমে রাখা হিসাবের কথা। কামদুনি, উন্নাও বা কাঠুয়ার মতো আরও কত শত অপরিচিত নাম প্রায় প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে যৌন হেনস্থা বা ধর্ষণের অলিখিত চওড়া খাতায়, তার পরিসংখ্যান সমাজ পাবে কোথায়?
     গত দশকে এক লাফে বেড়ে গিয়েছে শিশু কন্যা ধর্ষণের পরিসংখ্যান, যা দেখলে রীতিমতো শিহরণ জাগা স্বাভাবিকসেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যৌন হেনস্থাও।বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংস্থা ও গবেষকদের মতে, সাম্প্রতিককালে ভারতে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন বেড়ে যাওয়া পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ
     একশ্রেণীর মানসিক বিকারগ্রস্থ পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি এর অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। তাদের হাতেই চলন্ত বাস বা ট্রেনে যৌন হেনস্থার শিকার হয় সাধারণ মেয়েরা।
     এর পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান হারে যৌন লালসার শিকার হওয়ার পিছনে রয়েছে বিভিন্ন কুসংস্কারও। বিভিন্ন সময়ে সমাজকর্মীরা এইডস আক্রান্তদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে
     ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্যাতনকারীরা অপরাধ করে ধরা পড়ার পরেও রেহায় পেয়ে যাওয়ালক্ষ্য করা গিয়েছে, রেহায় পাওয়ার পর তাদের অপরাধ করার সাহস আরও বেড়ে যায়। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর তথ্যেই দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৫৭ হাজারেরও বেশি শিশু কন্যা ধর্ষণের মামলা ভারতের বিভিন্ন আদালতে এখনও চলছে। সেই সঙ্গে অভিযুক্তদের শাস্তি পাওয়ার হারও মাত্র ২৮ শতাংশ। সমাজের বিবাহিত মহিলা বা বৃদ্ধা কেউ এর থেকে নিস্তার পাননিতাঁরাও নানাভাবে ধর্ষনের শিকার হয়েছেন
     ২০১২ সালের নির্ভয়া কাণ্ডের পর ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার নড়েচড়ে বসেছে বলেই মনে হয়েছিল। কঠোরতর করা হয়েছিল ধর্ষণ আইন। ধর্ষণ মামলাগুলোর শুনানি দ্রুততর করতে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের সংখ্যা বাড়ান হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও দেশে ধর্ষণ কর্মকাণ্ডের ঘটনাগুলির ঊর্ধ্বগতি রুখতে পারা যায়নি। নির্ভয়া কাণ্ডের পরে ভারতে শত শত ফাস্ট ট্র্যাক আদালত চালু হলেও, ধর্ষণের মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে। নির্যাতনকারীর ফাঁসি হোক বা এনকাউন্টার, তারপরেও ভারতে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি করে মেয়ে ধর্ষিত হয়ে চলেছে
     বুদ্ধি, শ্রম, যোগ্যতা ইত্যাদির নিরিখে নয়, নারীকে হাড়-মাংস হিসাবে দেখার অভ্যাসটা সমাজের পুরুষদের এখন রয়ে গিয়েছেবর্তমান যুগেও সামাজিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোত্থাও তার স্বতন্ত্র পরিচয় আজও কথা বলে না। উলটে এই সমাজ নারীর পোশাক বা তার চালচলন নিয়ে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই দরকার বিকৃত চিন্তাভাবনা ও মানসিকতার বদল। পুরুষের উচিত ভক্ষকের বদলে নারীর বন্ধু হতে শেখা। তবেই নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারবে প্রত্যেকটি নির্ভয়া।
  • All Rights Reserved
Advertisement
Previous articleপৃথিবীর ওপর অনেকটাই কমে গিয়েছে মানুষের কম্পন
Next article‘লকডাউন’-এর সময়েও কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে রথীন্দ্র কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here