ক্রমশই কি বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে ভারতের কৃষক সম্প্রদায়?

Advertisement
সুমন সরকার :অন্নদাতাশব্দের আক্ষরিক অর্থ অন্নদানকারী অর্থাৎ যিনি অন্ন দান করে ভারতের কৃষক সম্প্রদায়কে যদি দেশেরঅন্নদাতাবলা হয়, তাহলে কি ভুল বলা হবে? হয়তো না কারণ কৃষকরাই দেশের একমাত্র সম্প্রদায়, যাঁরা কঠোর পরিশ্রম করে শস্য উৎপাদন করেন এবং সেই শস্য দেশের সামগ্রিক মানুষের মধ্যে সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে বণ্টন করে থাকেন এই কৃষকদের জন্যেই সমস্ত দেশ খাদ্যের অভাব বুঝতে পারে না
juy
ছবি : সংগৃহীত
     কিন্তু কৃষকদের সংখ্যা যদি দিনের পর দিন কমতে শুরু করে, দেশের খাদ্যদ্রব্যের অবস্থা তাহলে কেমন হতে পারে? সাম্প্রতিককালের গবেষণায় কিন্তু সেরকমই কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের প্রায় ৪২ শতাংশ কৃষক এখন কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাইছেন না এঁদের মধ্যে কৃষিকাজ না করার প্রবণতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে যদি এই প্রবণতা আরও বাড়তে থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে কৃষির ওপর, বা খুব ভালো করে বললে দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য
     কিন্তু কেন এই দুরাবস্থা? ভারতের কৃষকরা কেন আজ কৃষির সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাইছেন না?
     ভারত বরাবরই একটি কৃষি প্রধান দেশ দেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভও এই কৃষি সরকারি তথ্য অনুযায়ী (২০১৮) দেশের জিডিপি (Gross Domestic Product)-র ১৭১৮ শতাংশ আসে মূলত কৃষি থেকে তাছাড়া কর্মসংস্থানে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ আজও এই কৃষিকেই আঁকড়ে ধরে আছে তার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষকই গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা যাইহোক, এই তথ্যটুকু থেকেই যে কেউ অনুমান করতে পারবে, কৃষি ভারতের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে
     কিন্তু কৃষি ও কৃষক উভয়েরই এখন জীর্ণ অবস্থা এর প্রথম কারণ, সরকারিভাবে কৃষি গবেষণায় অধিক মূলধন বিনিয়োগ না হওয়া আর তাই দেশের অধিকাংশ প্রান্তিক চাষির আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত হতে হয় দ্বিতীয় কারণ, চাষির ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়া এর ফলে উৎপন্ন ফসলের প্রকৃত মূল্য না পেয়ে চাষির ওপর ঋণের বোঝা ক্রমশই বৃদ্ধি পেতে থাকে
     এছাড়াও জলসেচের অভাব, সঠিক কৃষিনীতির অভাব, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতির কারণেও ভারতের কৃষক সম্প্রদায় আজ কৃষিক্ষেত্র ছেড়ে দূরে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে
     এনসিআরবি, ২০১৮ (National Crime Record Buro)-র তথ্য অনুযায়ী, এই দেশে প্রতি বছর গড়ে ১০৩৪৯ জন চাষি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় প্রতিদিনের গড়ে যার হিসাব দাঁড়ায় প্রায় ২জনে
     দেখা যায়, যখনই কোনও কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে, বেশ কিছুদিন হইচই পড়ে দেশ জুড়ে সংবাদ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ উত্তেজনার আবহ তৈরি হয় ওই ঘটনাটি ঘিরে তারপর কখন যে আবার ওই ঘটনাটি ঠাণ্ডা ঘরে বাক্স বন্দি হয়, কেউ বুঝতেও পারে না অথবা সে সব নিয়ে কারোরই কোনও মাথা ব্যথা থাকে না সমাজের চতুর্দিকে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারা যাবে, এদেশে কৃষক আন্দোলন হয় হামেশাই কিন্তু কৃষকদের অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় না শুধু পরিবর্তন হয় কৃষক নেতাদের
     পরিশেষে বলতেই হয়, ভারতবর্ষে কৃষকদের অবস্থা আজ অত্যন্ত সঙ্গিন তাঁদের গুরুতর সমস্যাগুলির সমাধান অতি দ্রুত করতে না পারলে সমগ্র কৃষক সম্প্রদায়টিই ধাপে ধাপে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ বেছে নেবে। আর সে রকম হলে সবচেয়ে বড়ো সমস্যায় পড়বে দেশের সাধারণ মানুষ কারণঅন্নদাতারা ক্রমশ বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে গেলে এ দেশে খাদ্য সংকট তৈরি হতে বাধ্য অতি ধনীরাও খাদ্যের অভাব অনুভব করবে সেদিন
(লেখক কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী)
  • All Rights Reserved
Advertisement
Previous articleবয়সের ভারে আর দৃষ্টিহীন হবে না কেউ
Next articleকরোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু করল অক্সফোর্ড

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here