তারাশঙ্করের সেই ‘হাঁসুলী বাঁক’-এ আজ যেন ক্ষয় ধরেছে (ভিডিও সহ)

Advertisement
Capture33
রঞ্জন সরকার ও সজয় পাল : তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা কথাসাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় নামএক কথায় বলতে গেলে, বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডার তাঁকে ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়তাঁর লেখা অসংখ্য উপন্যাসের মধ্যে ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথাঅন্যতম উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৫৪ বঙ্গাব্দেআর এটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন কবি কালিদাস রায়কেপরে ষাটের দশকে এই বিখ্যাত উপন্যাস নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছিলচলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন পরিচালক তপন সিংহ
     তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লেখনীতে হাঁসুলী বাঁকের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা এক কথায় অসাধারণঐতিহাসিক দিক দিয়েও এর গুরুত্ব অপরিসীমএই অঞ্চলে সেকালের সমাজ ব্যবস্থা, গ্রাম্য জীবন, ধনীদরিদ্র, আদিবাসী সমাজ সমস্ত কিছুই নিখুঁতভাবে উল্লেখ করেছেনতবে সময়ের সাথে সাথে আজ হাঁসুলী বাঁকের অনেক কিছুই বদলে গিয়েছেমিল খুঁজে পাওয়া অসম্ভব
     তারাশঙ্করের হাঁসুলী বাঁকটি প্রকৃতপক্ষে পশ্চিম কাদিপুর গ্রামের সীমান্তে অবস্থিত গ্রামটি লাভপুর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে পথে যেতে যেতে দুধারে দেখা মিলবে উন্মুক্ত প্রান্তর আর সারিবদ্ধ তালগাছ এখানে আকাশ যেন দিগন্তরেখা ছুঁয়ে গিয়েছেনজরে পড়বে ছোটো ছোটো গ্রাম আর তাঁর ফাঁক দিয়ে এগিয়ে চলা মেঠো পথ
     হাঁসুলী বাঁক মূলত কোপাই আর বক্রেশ্বর নদীর সংযোগ স্থল নদী এখানে বড্ড বেশি এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে নদীর এই বাঁক দেখতে অনেকটা আদিবাসী রমণীর হাঁসুলি গয়নার মতো তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে হাঁসুলি বাঁক গুগল ম্যাপে এর স্পষ্ট অস্তিত্ব বুঝতে পারা যায় ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন অশ্বক্ষুরাকৃতি নদী পথের ঠিক আগের অবস্থা
     তবে তারাশঙ্করের এই হাঁসুলী বাঁক আর আগের মতো নেই এখানে যেন ক্ষয় ধরেছে চতুর্দিকে গজিয়ে ওঠা একাধিক ইটের ভাটা আর ক্রমাগত বেড়ে চলা পরিবেশ দূষণ স্থানটির ঐতিহ্য নষ্ট করে দিচ্ছেবিশিষ্ট ছড়াকার গৌর গোপাল পালও এই বিষয়ে একমততিনি জানালেন, অসংখ্য দর্শনার্থীকে তিনি এই হাঁসুলী বাঁক দেখাতে নিয়ে এসেছেনদর্শনার্থীরা এর সৌন্দর্যও উপভোগ করেছেকিন্তু অধিকাংশ দর্শনার্থী হাঁসুলী বাঁকের এই ক্ষয়ে যাওয়া রূপ পছন্দ করেনিগৌর গোপাল বাবুও চাইছেন, ইট ভাটা চলুক, তাতে কোনও ক্ষতি নেইকিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই স্থানটির রক্ষার্থের দিকে প্রশাসনের কিছুটা নজর দেওয়া প্রয়োজন
     সাহিত্যগত বা ঐতিহাসিকভাবে স্থানটির গুরুত্ব অনেক প্রতি বছর অসংখ্য দর্শনার্থী দেখতে আসেন এই তারাশঙ্করের হাঁসুলী বাঁক তাই স্থানটি সাজিয়ে গুছিয়ে আরও আকর্ষণীয় করা যেতেই পারে
Advertisement
Previous articleকরোনায় স্থগিতাদেশের মাঝেই বসন্ত উৎসব পালন বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনে
Next article“ফিমেল” শুধু গল্প নয়, এ যেন এক জীবনের কথা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here