Advertisement
সৌম্যদীপ্ত বোস : শেষ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক হতে স্থগিত রাখা হল শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব। ৬ মার্চ বিকালে দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এদিন দুপুর পর্যন্ত বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে বিশ্বভারতীতে উন্মাদনার পারদ ছিল শীর্ষে। এমনকি প্রস্তুতি পর্বও ছিল শেষ পর্যায়ে। কিন্তু হঠাৎ করেই জোয়ারের মতো ধেয়ে আসা স্থগিতাদেশ সমস্ত কিছুকেই ওলট–পালট করে দিল। কার্যত শান্তিনিকেতন জুড়ে এ যেন এক বিষাদের কালো ছায়া। নিস্তব্ধতায় মোড়া পূর্ণিমার আকাশ। এই নির্দেশ মেনে নেওয়া সত্যিই বড়ো কষ্টের, বেদনার।
প্রায় ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে আতঙ্কে ভুগছে সমগ্র বিশ্ব। নতুন এই আতঙ্কের নাম এনসিওভি করোনা ভাইরাস। চিন থেকে ক্রমশ ছড়িয়ে বর্তমানে এখনও পর্যন্ত ৭৯টি দেশে আঘাত হেনেছে এটি। সারা বিশ্বের প্রায় ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এই মারণ ভাইরাসে। তার মধ্যে মারা গিয়েছে ৪ হাজারেরও। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে চিনের মানুষ। সেদেশে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষের শরীরে পাওয়া গিয়েছে এই ভাইরাসের নমুনা।
প্রতিবেশী দেশ হওয়া সত্ত্বেও এতদিন প্রবেশ করতে পারেনি ভারতে। কিন্তু এবার এদেশেও দেখা মিলেছে এই ভাইরাসের। ভারতে ইতিমধ্যে ৩১ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তার জন্যে দিল্লিতে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি প্রাইমারী স্কুলগুলিকে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন করে যাতে এই ভাইরাস ছড়াতে না পারে তার জন্যেও জারি করা হয়েছে একাধিক সতর্কতার। তার মধ্যে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রক ৬টি রাজ্যকে বিশেষভাবে সতর্ক করেছে।
সতর্ক আছে পশ্চিমবঙ্গও। রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালগুলিকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে একাধিক নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী বন্দর ও বিমান বন্দরে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বৃথা আতঙ্ক না ছড়াতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও এই রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কোনও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর দেখা মেলেনি।
তবে সতর্ক হতে বাঁধা কোথায়? আর তাই আপাতত স্থগিত রাখা হল শান্তিনিকেতনের এবারের বসন্ত উৎসবও। ঐতিহ্যবাহী এই বসন্ত উৎসবের ওপর এবারই প্রথম স্থগিতাদেশ জারি করা হল। ‘অধিক লোকসমাগমে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে’, এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছে ‘অধিক লোকসমাগম’ না ঘটাতে। শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। তাই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৬ মার্চ বিকালে দীর্ঘ আলোচনার পর সবদিক বিবেচনা করেই বসন্ত উৎসব স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
Advertisement