এতসব বইমেলার আয়োজন সত্ত্বেও বই কেনার মানুষ কোথায়?

Advertisement
boi3
জনদর্পণ ডেস্ক : কিছুদিন আগেই বীরভূমের সদর শহর সিউড়িতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল বইমেলার। তার কিছুদিন পরই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাঁইথিয়াতেও আয়োজন করা হয়েছিল ওপর আর একটি বইমেলার। এবার শুরু হল বোলপুরে। বোলপুরের এই বই মেলাও ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উদ্যোগ নিয়েছে বোলপুর শান্তিনিকেতন বইমেলা উৎসব কমিটি। মেলা শুরু হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি, চলবে ৪ মার্চ পর্যন্ত।
     বোলপুরের এই বইমেলা ২৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন শিক্ষাবিদ সুনীতিকুমার পাঠক। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। এছাড়াও অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে ওই দিন উপস্থিত ছিলেন নাট্যকার ও সাহিত্যিক দেবেশ ঠাকুর, কাউন্সিলর কুন্তলা সিনহা, সুকান্ত হাজরা, সাংসদ অসিত মাল সহ একাধিক বিশিষ্টজন।
     বোলপুরের এবারের বইমেলায় ৬৪টি প্রকাশনী অংশগ্রহণ করেছে। তার মধ্যে দেশ, আনন্দ বা পত্রভারতীর মতো বড়ো প্রকাশনীকেও অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। দুপুর ২টো থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত এই মেলায় বইয়ের প্রদর্শনীর পাশাপাশি প্রতি সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও।
boi1
     এতসব সত্ত্বেও মেলায় ভিড় বাড়ছে কোথায়? সিউড়ি বা সাঁইথিয়ার বইমেলাতেও বাছা বাছা দুই-একদিন ছাড়া তেমন ভিড় নজর কাড়তে পারেনি। বই বেচা-কেনার হারও যথেষ্ট কম। অধিকাংশ মানুষই মেলায় আসছেন ঠিকই, কিন্তু ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। কেউ বা সঙ্গীদের সাথে মেলায় ঘুরতে এলেও আধুনিক মোবাইল নিয়ে ব্যস্ততা দেখাচ্ছেন। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণেই কেউ বা সময় কাটিয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই আছেন, যারা বইয়ের পাতাগুলি শুধুমাত্র উলটে-পালটে দেখার পর যথাস্থানে নামিয়ে রেখে আবার বেরিয়ে পড়ছেন অন্য প্রকাশনীতে। কিন্তু বই কেনার স্বদিচ্ছা দেখাচ্ছেন না কেউই।
     মেলা প্রাঙ্গণে বই হাতে পাতা ওলটাতে থাকা একজন কলেজ পড়ুয়াকে বই কেনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে জানালেন, তিনি আসলে বই কিনতে আসেননি। বন্ধুদের সাথে মেলা দেখতে এসেছেন। তাঁর কথায়, প্রয়োজনীয় যা কিছু সবই নাকি ইন্টারনেট থেকে দ্রুত সংগ্রহ করা যায়। তাছাড়া তাঁর কাছে গল্প বা উপন্যাস পড়ার থেকে ‘মুভি’ দেখা অনেক বেশি মজার।
     কবি চিরন্তন দাসকে অবশ্য কয়েকটি বই কিনতে দেখা গেল। তাঁকে বই কেনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানালেন, আসলে এখনকার ইন্টারনেটের যুগে মানুষের মধ্যে বই পড়ার নেশা অনেকটাই কমে গিয়েছে। মানুষ বইমেলায় আসছে ঠিকই, কিন্তু বই কিনছে কম। ইন্টারনেটেই সময় দিতে চাইছে বেশি। তাছাড়া দূরত্ব বেশি হলে সময় বাঁচাতে কেউই এখন দূরের মেলায় আসতে চাইছে না। এই যেমন বোলপুরের বইমেলায় সিউড়ি, সাঁইথিয়া বা রামপুরহাটের মানুষ আসছে কম। যারা একটু-আধটু সাহিত্য চর্চা করছে, মূলত তারাই বই কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছে। চিরন্তনবাবু আরও বললেন, তবে বইমেলা চলুক। সাহিত্যকে জাগিয়ে রাখতে, বইকে বাঁচিয়ে রাখতে আর মানুষের হাতে নিত্য-নতুন বইয়ের সমাহার তুলে দিতে বইমেলার কোনও বিকল্প নেই।
boi22
কবিতা পাঠের আসর : বোলপুর বইমেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল একটি কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানও। অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় ৩ মার্চ বিকাল ৫টায়। কবিতা পাঠের এই আসরে অংশগ্রহণ করেন বীরভূম জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এক ঝাঁক নবীন ও প্রবীণ কবি। কবিদের মধ্যে ছিলেন দেবকুমার দত্ত, প্রবীর দাস, অসিকার রহমান, গৌর গোপাল পাল, নাসিম-এ-আলম, প্রদীপ কবিরাজ, নূর মহম্মদ, প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রমুখ। বইমেলা প্রাঙ্গণে কবি ও সাহিত্যিকদের একত্রিত করতে এই বিশেষ উদ্যোগ ছিল বলে জানালেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা কবি প্রতিভা গাঙ্গুলী।
Advertisement
Previous articleউষ্ণতার নতুন রেকর্ড গড়তে প্রস্তুত ২০২০
Next articleবায়ুদূষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে অকাল মৃত্যুর গতি, তথ্য উঠে এল সম্প্রতি গবেষণায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here