Advertisement
জনদর্পণ ডেস্ক : বীরভূম জেলার লাভপুর ষ্টেশনের খুব কাছেই জনবিরল অসংখ্য তেঁতুল গাছের ছত্রছায়ায় ‘মা ফুল্লরা’ মন্দিরটি অবস্থান করছে। এটি সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম পীঠ। এখানে সতীর নিচের ঠোঁট পতিত হয়েছিল। ইতিহাস বলছে, অতীতে একদল বেদানুসারী ব্রাহ্মণ মিথিলা থেকে বিতাড়িত হলে বঙ্গদেশের বর্মণরাজ হরি বর্মার আশ্রয় লাভ করেন। তাঁদেরই কয়েকজনকে ভবদেব ভট্ট ‘মা ফুল্লরা’র পুজোর উদ্দেশে এখানে নিয়ে আসেন। তখন থেকেই দেবী নিত্য পুজো পেতে থাকে। দেবীর এই মন্দির প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন কৃষ্ণানন্দ গিরি নামে এক তন্ত্রসাধক।
পুরোহিত দ্বারা নিত্য পূজিত এই স্থানটি প্রতি বছর মাঘী পূর্ণিমাতেই যেন নতুন করে সেজে ওঠে। এই সময় দেশ–বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ভক্ত মায়ের দর্শন পেতে ছুটে আসেন। মন্দির প্রাঙ্গণে গুরু গাম্ভীর মন্ত্র ও চণ্ডীপাঠের সাথে সাধু ও বাউল শিল্পীদের মনোরম বাউল গান উপস্থিত সকলকে মোহিত করে রাখে। সেই সাথে উপরি পাওনা মায়ের অন্নভোগ।
মন্দিরের খুব কাছেই প্রতি বছর মাঘী পূর্ণিমার দিন মেলা বসে। দূর-দূরান্ত থেকে অগুনতি মানুষ এসে ভিড় জমান এই মেলায়। মেলা চলে প্রায় ১৫-২০ দিন। এবছর মেলার বয়স ১২১ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৩০৬ বঙ্গাব্দে প্রথম শুরু হয়েছিল এই মেলা। এবারের মেলায় ছোটো বড়ো মিলিয়ে প্রায় ৪৫০টির মতো স্টল অংশ নিয়েছে। স্টলের মধ্যে আছে বিভিন্ন সামগ্রীর সমাহার। মনোহারি, কাষ্ঠ দ্রব্য, পুতুল, মূর্তি, রংবেরঙের ফুল আরও কত কি!
মেলায় বিশেষ আকর্ষণ সার্কাস, পুতুলনাচ আর বিভিন্ন ধরণের নাগরদোলা। দেখলে মনে হয়, হাতে টানা নাগরদোলার সঙ্গে ইলেক্ট্রনিকের নাগরদোলার যেন যুদ্ধ বেঁধেছে। মেলায় আছে ফুচকা, ঘুগনি, চাউমিন, এগরোল, মোগলাই, বিভিন্ন রকমের মিষ্টি প্রভৃতির সমাহার। প্রায় প্রতিটি দোকানেই ভিড় হয়েছে উপচে পড়ার মতো। এছাড়াও এবারের মেলায় ছিল বেশ কিছু সরকারি স্টল এবং কৃষি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা।
সবশেষে বলতেই হয়, ফুল্লরা মেলা একটি আপাদমস্তক বঙ্গদেশের খাঁটি গ্রামীণ মেলা। খুব বড়ো না হলেও বীরভূমের অন্যতম একটি প্রিয় মেলা। কয়েক হাজার মানুষের সমাগমে এই মেলা বেশ কয়েকদিন জমিয়ে রাখে সমগ্র অঞ্চলকে। মিলন ঘটে কাছের বা দূরের আপনজনের সাথে।
Advertisement
মেলার বিস্তারিত তথ্য জেনে অনেক উপকৃত হলাম..এরকম আরো চিত্তাকর্ষক ভিডিওর জন্য অপেক্ষায় রইলাম..